নিজস্ব প্রতিবেদক:
ট্রেন দুর্ঘটনায় দু’পা হারানো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) সমাজকর্ম বিভাগের সম্মান চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রুবিনা আক্তারের দায়িত্ব নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড.মীজানুর রহমানের নেতৃত্বে রুবিনাকে দেখতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় তার দায়িত্ব নেয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন সেখানে উপস্থিত সহকারী প্রক্টর মোস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, উপাচার্য স্যার রুবিনার যাবতীয় দায়িত্ব নেয়ার কথা বলেছেন। এছাড়া তিনি ঢাকা মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিনের সাথেও কথা বলে রুবিনার চিকিৎসার যাবতীয় খোঁজ খবর নেন। উপাচার্যের বরাত দিয়ে মোস্তফা কামাল বলেন, রুবিনার সর্বোচ্চ সুচিকিৎসা করাতে যা কিছু করা লাগে তাই করা হবে। তার কৃত্রিম পা লাগানোর জন্য ইটিমধ্যে সিআরপির সাথে কথাবার্তা চলছে। এছাড়া তার পড়াশুনার যাবতীয় খরচ বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবেন বলেও তিনি নিশ্চিত করেন। রুবিনাকে দেখতে সেখানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড.নূর মোহাম্মাদ, সহকারী প্রক্টর মোস্তফা কামাল এবং বিভাস কুমার।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক জানান রুবিনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মিটিং করে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ তার থাকা-খাওয়ার দায়িত্ব বহন করবে, একাডেমিক কার্যক্রমের যাবতীয় খরচ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মওকুফ করে আনা হবে, তার নামে ব্যাংক একাউন্ট ও বিকাশ একাউন্ট খুলে তহবিল সংগ্রহ করা হবে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তার জন্য ভাতার ব্যবস্থার চেষ্টা করা হবে, প্রাপ্ত তহবিল দিয়ে তার নামে ব্যাংক ডিপোজিট অথবা সঞ্চয়পত্র কেনা হবে, তার ছোট ভাইয়ের জন্য বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি মওকুফ করার চেষ্টা করা হবে, শিক্ষক সমিতির কাছে থেকে সাহায্য চাওয়া, এবং সর্বোপরি উপাচার্যের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পরবর্তিতে উপযুক্ত সম্মানজনক কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে রুবিনার ব্যাপারে দুটি দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে স্মারকলিপি প্রদান করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মেহরাব আজাদ ও কিশোর রায়ের নেতৃত্বে একটি দল। স্মারক লিপিতে তারা দাবি করে যাতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে রুবিনা আক্তারের জন্য একটি সম্মানজনক পদে স্থায়ী চাকুরীর ব্যবস্থা করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে তার কৃত্রিম পা সংযোজনের ব্যবস্থা করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৮ জানুয়ারি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের এ ছাত্রী কমলাপুর রেল স্টেশনে প্লাটফর্ম পরিবর্তনের সময় এক ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার হয় এবং সে তার পা দু’টো হারায়। সে অত্যন্ত দরিদ্র একটি পরিবারের সন্তান। তিন বছর আগে তার বাবাকে হারিয়েছে। তার মা শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং বড় বোনটিও মানসিকভাবে সুস্থ নয়। এছাড়া, এবছর তার ছোট ভাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সুযোগ লাভ করে। চরম দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে সে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ ৫ অর্জন করেন।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ