নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে সামনে রেখে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করতে যাচ্ছে বিএনপি। ১০০টি দেশের ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিক এবং ২০টি বিদেশি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবে দলটি। মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তবে বৈঠকটি সম্পর্কে গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিক না জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের সদস্য ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের আরেক সদস্য যুগান্তরকে জানান, ১০০টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং ২০টি বিদেশি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের ইতিমধ্যে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক, ইরান, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেদারল্যান্ডস। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ বৈঠকে যোগ দেয়ার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে। এছাড়া ইউএনডিপি, জাইকা, ইউএসএআইডি, এডিপি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ ২০টি বিদেশি সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধানদেরও বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এসব বিদেশি সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা রাষ্ট্রদূতের সমপর্যায়ের বলে মনে করে দলটি। তাই তাদেরও মেইলের মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার ভিত্তি সম্পর্কে ব্রিফ করবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মামলায় খালেদা জিয়ার জড়িত না থাকা, অর্থ আত্মসাতের কোনো প্রমাণ না পাওয়া, তার বিরুদ্ধে আদালতে উপস্থাপিত ফাইল ঘষামাজা ও স্বাক্ষর না থাকা বিষয়ে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করবেন বিএনপি মহাসচিব। একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির অবস্থানও পরিষ্কার করা হতে পারে। দলের পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের অবহিত করা হবে- নির্বাচনের জন্য বিএনপির প্রস্তুতি বাধাগ্রস্ত করতেই খালেদা জিয়াকে সরকার মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। এটি করা হলে নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশও পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানানো হবে।
সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করছে বিএনপি। আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটানো যাবে না ধরে নিয়েই ইতিবাচক রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতায় মনোযোগ দিচ্ছে দলটি। এর অংশ হিসেবে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিকদের সঙ্গে দলটির বৈঠক করার কথা ছিল। তবে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ৮ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ হওয়ায় এ ব্যাপারে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে দলটি। মঙ্গলবারের বৈঠকে খালেদা জিয়ার মামলার রায় প্রসঙ্গ ছাড়াও একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হবে বলে দলীয় সূত্র জানায়।
২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপির কূটনৈতিক উইং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সর্বশেষ অবস্থা ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের মেইলের মাধ্যমে অথবা ব্রিফিংয়ে প্রতি মাসে অবহিত করা হতো। টানা ৯২ দিনের আন্দোলনের সময় বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের সদস্য বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান গুলিবিদ্ধ হন এবং সাবিহ উদ্দিন আহমেদের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর দলের কূটনৈতিক উইং অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
গত বছরের নভেম্বরে বিএনপির কূটনৈতিক উইং ঢেলে সাজানো হয়। দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরীকে প্রধান করে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরীন মুন্নী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, সাবেক কূটনীতিক রাশেদ আহমেদ চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির নিয়ে ডিসেম্বরে কূটনীতিকদের সঙ্গে তারা একবার বৈঠকও করেন।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি