২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৭:৪৪

মুঠোফোনে ফাঁদ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

‘হ্যালো, আপনি সৌভাগ্যবান। গ্রামীণফোন লটারি ২০১৮ জিতে পাচ্ছেন ১৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। আপনার টাকাটা কীভা বে  নিবেন তা জানিয়ে এই (০১৭৭৪২৮৭৪০৬) নম্বরে ফোন করুন।’ গ্রামীণফোন কাস্টমার কেয়ারের কর্মকর্তা পরিচয়ে গত ৪ঠা জানুয়ারি বিকাল ৪টা ৩২ মিনিটে মো. আরিফুল ইসলামের মোবাইল ফোনে ওই কল আসে। পরামর্শ মতো আরিফুল সেই নম্বরে ফোন দেন। এরপর ওপাশ থেকে বলা হয়, ‘টাকাটা নিতে আপনাকে ৫০ হাজার টাকা খরচ করতে হবে।’ টাকার কথা বলার পর রাজধানীর কাওরানবাজারে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আরিফ বিষয়টিকে প্রতারণা বলেই ধরে নেন। আরিফ বলেন, ওই মোবাইল কলের পর আমি লোভে পড়ে তড়িঘড়ি করে মোবাইল করি কি না হয়তো তা-ই দেখতে চেয়েছিল প্রতারকরা। কিন্তু আমার দিক থেকে সেই অস্থির আচরণ না পাওয়ায় ভেবেছে ভুল ব্যক্তির কাছে লটারির প্রতারণার টোপ ফেলেছে। তাই আর এগোয়নি।
গত ৩রা জানুয়ারি তারই অপর সহকর্মী মো. নাজমুল হকের মোবাইলে পাতা হয় প্রতারণার আরো বড় ফাঁদ। এবার মোবাইল কলে নয়, এসএমএসে। তাতে ইংরেজিতে লেখা ‘এশিয়ানদের মধ্যে আপনার মোবাইল নম্বরটি কোকাকোলা ইউকে লটারি ২০১৭-তে ৫ লাখ ইউকে মুদ্রা জিতেছে। টাকাটা গ্রহণের জন্য আপনার নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, বয়স, লিঙ্গ পরিচয় ই-মেইলে পাঠান’। কিন্তু তা পাঠানোর আগে সত্যতা জানতে তিনি তার মোবাইলে ফোন দেন। তিনি তাদের কথা মতো এসএমএসে তা না পাঠিয়ে মোবাইলে ফোন দেয়ার পর মোবাইলই বন্ধ করে দেয়া হয়।
এর আগে হুবহু একই ধরনের এসএমএসে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয় নাজমুলের অপর এক নারী সহকর্মী শারমিন আক্তার সালমার মোবাইলেও। ০১৯২৬৩৬৫৭৯৬ নম্বর থেকে তার বাংলা লিংক নম্বরে এসএমএসটি আসে। তিনি অবশ্য তারও আগে মোবাইল কলে ‘গ্রামীণফোন লটারিতে গাড়ি জেতার প্রস্তাবে’র আরো একটি প্রতারণার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এজন্য সতর্কতার সঙ্গেই তিনি সাড়া দিচ্ছিলেন। একপর্যায়ে মোবাইলের ওপার থেকে সেই গাড়ি পাঠানোর জন্য খরচের মতো এখানেও খরচের টাকা চাওয়া হয়। তাতেই আবার প্রতারণায় পড়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন শারমিন। তাই তাৎক্ষণাৎ সাড়া দেননি। পরে দেরিতে সাড়া দিলে সেই মোবাইলটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
চলতি মাসে এ তিনটি প্রতারণার ফাঁদই পাতা হয় রাজধানীর কাওরান বাজারের একটি বেসরকারি অফিসের তিন কর্মকর্তার মোবাইলে। শুধু তাই নয়। কাছাকাছি সময়ে ওই অফিসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার মোবাইলেও পাতা হয় লটারিতে বড় অঙ্কের ইউএস ডলার জেতার ফাঁদ। কিন্তু সচেতনতা ও পারস্পারিক বুদ্ধি-বিবেচনায় তারা সেই ফাঁদে পা দেয়া থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু তেমনটা আর সবার ক্ষেত্রে হয়ে উঠছে না। লাভের আশায় এসব লটারির ফাঁদে পা দিয়ে প্রতারিত হয়ে ক্ষতির শিকার হয়েছেন অনেকেই। তাদের একজন সায়মা সুলতানা রথী। তিনি থাকেন রাজধানীর বড় মগবাজারে। তার স্বামী ইস্টার্ণ ব্যাংকে কর্মরত। তার মোবাইলে গ্রামীণফোনের কাস্টমার কেয়ারের কর্মকর্তা পরিচয়ে এক নারী গত ৮ই জানুয়ারি ফোন দেন। তিনি বলেন, ‘আপনি গ্রামীণফোনের ১০০ ভাগ্যবান-ভাগ্যবতী গ্রাহকের একজন। জিতেছেন গ্রামীণফোন কাস্টমার লটারি ২০১৭। আপনার হাতে পৌঁছে যাবে নগদ ১ লাখ টাকা। টাকাটা গ্রহণের জন্য মোবাইল রেজিস্ট্রেশনের খরচ বাবদ ফেরতযোগ্য ১০ হাজার টাকা পাঠাতে হবে। কিভাবে পাঠাবেন তা বলে দেওয়া হবে’। বিষয়টি স্বামীকে বলার পর সাড়া পাননি তিনি। স্বামী প্রতারণা বলে সতর্ক করলেও পরে ঠিকই ডাচ-বাংলা ব্যাংকের রকেটে টাকা পাঠিয়ে দেন রথী। এরপর ওই মোবাইল নম্বরটি বন্ধ হয়ে যায়। রথী বলেন, স্বামীকে বিষয়টি জানানোর পর ঠিকই সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু বারবার মোবাইল করে বিশ্বাস জমানোয় নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি। সত্য বলে মনে হয়েছিল। তাই টাকা পাঠিয়েছি। পরে দেখি প্রতারিত হয়েছি।
তার মতো একই ধরনের প্রতারণার শিকার হন বাংলামোটরে বসবাসরত আব্দুর রহমানের স্ত্রী হাসিনা বানু। তার বাড়ি কক্সবাজারে। তিনি ব্যবহার করেন রবি মোবাইল সিম। তার মোবাইল ফোনে কাস্টমার কেয়ারের কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন করা হয় গত ১১ই জানুয়ারি। বলা হয়, আপনি রবি কাস্টমার লটারি ২০১৭ জিতে ১ লাখ টাকা পাচ্ছেন। হোটেল প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে লটারির পুরস্কার দেয়া হবে। কিন্তু অভিজাত হোটেলে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের রেজিস্ট্রেশন ফি হিসেবে ১০ হাজার টাকা দিয়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। সেই টাকা হাতিয়ে নেয়া হয় বিকাশের মাধ্যমে।
তার ছেলে সাকিব রায়হান বলেন, মাকে লটারি জেতার প্রতারণায় ভুলিয়ে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা। এর এক সপ্তাহ পরও অনুষ্ঠানের প্রবেশপত্র না আসায় তিনি বিষয়টি আমাকে জানান। তারপর রবি কাস্টমার কেয়ারে খোঁজ নিয়ে প্রতারণার শিকার হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হই।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :জানুয়ারি ২৭, ২০১৮ ১:০৫ অপরাহ্ণ