নিজস্ব প্রতিবেদক:
গহীন জঙ্গলে আটক রেখে মুক্তিপণ আদায়কারী সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা শফিকুল ইসলাম ওরফে শামছুল হক ওরফে বাবুল ওরফে মলম বাবু ওরফে ডাকাত লিতুকে (২৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর একটি বিশেষ টিম মঙ্গলবার রাতে মিরপুর থানাধীন এফ ব্লকের ১নং সড়কের ৪নং বাসা থেকে তাকে আটক করে।
তিনদিন পর ৮ ডিসেম্বর বাবুল তার দোকানে এসে থাই গ্লাস ও অ্যালুমিনিয়ামের মূল্য নির্ধারণ করে। বাবুল ছুটি পেলে তাকে গ্রামের বাড়িতে বিল্ডিংয়ের কাজের মেজারমেন্ট করতে নিয়ে যাবে বলে জানায়। ১৯ ডিসেম্বর বাবুল ফের দোকানে এসে তাকে ও তার মিস্ত্রি সোহাগ খলিফাকে (২৭) সাথে করে কয়েক দফায় যানবাহন পরিবর্তন করে জঙ্গলে নিয়ে যায়।
পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ওঁৎ পেতে থাকা আরও কয়েকজন অজ্ঞাতনামা অপহরণকারী সদস্য তাকে ও তার মিস্ত্রি সোহাগকে অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করে ফেলে। মারধর করার একপর্যায়ে তাদের হাত-পা বেঁধে ফেলে। লোহার রড ও চাপাতির বাট দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাতাড়ি আঘাত করে। তার সাথে থাকা নগদ ৭ হাজার টাকা, ২টি মোবাইল ফোনসেট নিয়ে নেয়।
ভিকটিমদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাদের আত্মীয়-স্বজনদেরকে জিম্মির বিষয়টি জানিয়ে তাদের দিয়ে কথা বলিয়ে বিকাশের মাধ্যমে মুক্তিপণের ৮৫ হাজার ৯শ টাকা আদায় করে। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অন্ধকার জঙ্গলের দুই জায়গায় ভিকটিম দুজনকে ফেলে রেখে অপহরণকারী সদস্যরা চলে যায়।
মিস্ত্রি সোহাগ খলিফা আরিফের হাতের রশি খুলে লোকালয়ে চলে আসেন। পরে পথচারীর মোবাইল থেকে আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে বাসায় ফেরেন। এরপর ১৯ ডিসেম্বর আরিফ খান বাদী হয়ে শাহআলী থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৭।
মামলার তদন্তভার পেয়ে পিবিআইয়ের একটি দল তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মিরপুরের ওই বাসা থেকে অপহরণকারী চক্রের মূলহোতা শফিকুল ইসলামকে আটক করে।
আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআই জানতে পারে, শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি ভয়াবহ অপহরণকারী চক্র গড়ে উঠেছে। চক্রটি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে ব্যবসায়ীদের অপহরণ করে আটক রেখে মুক্তিপণ আদায় করে থাকে। পরে মুক্তিপণ আদায় শেষে গভীর জঙ্গলের মধ্যে বা পরিত্যাক্ত ভবনে ফেলে চলে যায়। চক্রটি কখনো বা বাসের সাধারণ যাত্রী সেজে গাড়িতে উঠে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাস যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নেয়।
অপহরণকারী চক্রটির প্রধান শফিকুলের বিরুদ্ধে একাধিক থানায় খুন, ডাকাতি, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নেয়ার মামলা রয়েছে। চক্রের আরও একাধিক সদস্যকে চিহ্নিত করা গেছে এবং গ্রেফতার প্রক্রিয়া চলছে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ