নিজস্ব প্রতিবেদক:
টঙ্গীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে পূজা উদযাপনসহ বিভিন্ন অনৈসলামিক কাজ করায় এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। গত সোমবার ঈদগাহ মাঠটিতে স্বরস্বতি পূজা উদযাপন করে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়। ঈদগাহ মাঠে পূজা উদযাপনকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্টের উস্কানি হিসেবে দেখছেন এলাকাবাসী। দেশের শ্বাশত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে একটি মহল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা করছে বলে এলাকার আলেমরা অভিযোগ করেছেন।
এলাকার বিশিষ্ট আলেম ও ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা জানান, টঙ্গীর পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ মাঠ যুগ যুগ ধরে সরকারিভাবে ঈদগাহ ময়দান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি টঙ্গীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ হিসেবে পরিচিত। সাবেক টঙ্গী পৌরসভা ও বর্তমানে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় প্রতিবছর দুটি ঈদের বৃহত্তর জামাত অনুষ্ঠিত হয় এ ঈদগাহ মাঠে। এছাড়াও সেখানে বড় বড় ইসলামিক ওয়াজ মাহফিল হয়ে থাকে। এমনকি অত্র এলাকার মৃত ব্যক্তিদের নামাযে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এ মাঠে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজের বর্তমান কর্তৃপক্ষ মাঠের পবিত্রতা ও ঐহিত্যকে বিনষ্ট করে গত প্রায় তিন বছর ধরে মেলাসহ একের পর এক নানা অনৈসলামিক অনুষ্ঠানের অনুমোদন দিয়ে আসছে। এমনকি গত বছর এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের আপত্তি সত্ত্বেও এ ময়দানে পূজা উদযাপনের অনুমতি দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। গত সোমবার এ ময়দানে আবারো মূর্তি পূজার আয়োজন করা হলে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দেয়।
ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি শাহ মো. হাফিজ উদ্দিন নূরী প্রচলিত ঈদগাহ ময়দানে মূর্তি পূজা উদযাপনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, যে স্থানে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে সিজদা দেয়া হয় সেখানে কোন শিরক চলতে পারে না। তা কোন অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না। সিটি করপোরেশন ও জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে একটি মহল ঈদগাহ মাঠে পূজার আয়োজন করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, জাতীয় ঈদগাহ সংলগ্ন হাইকোর্ট প্রাঙ্গনে একই কারণে আমরা গ্রীক দেবীর মূর্তি অপসারণ করতে সরকারকে বাধ্য করেছি। টঙ্গীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে পরবর্তীতে কোন মূর্তি পূজার আয়োজন করা হলে যদি কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এর দায়দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষকেই বহন করতে হবে।
তিনি বলেন, আশপাশে সরকারি-বেসরকারি একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ থাকা সত্ত্বেও তিন পাশে তিনটি মসজিদ পরিবেষ্টিত পাইলট ময়দানে কিকারণে পূজা উদযাপনের অনুমতি দেয়া হল তা কারোর বুঝার বাকি থাকার কথা নয়। কারোর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন কাজ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বিরত থাকার জন্যও তিনি অনুরোধ জানান।
স্থানীয়রা জানান, গত বছর পূজা উদযাপনের দিন টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ অধ্যক্ষ সারা দিন মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। ফলে এলাকার মুসল্লিরা প্রতিবাদ জানাতে তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেননি। এবারও গত সোমবার স্বরস্বতি পূজা উদযাপনের দিন তিনি দিনভর নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ রাখেন। ফলে এলাকার মুসল্লিরা তার কাছে প্রতিবাদ জানাতে পারেননি। সোমবার পূজা শেষে রাত ১০টায় পরিস্থিতি জানতে অধ্যক্ষ গোপনে কলেজে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এদিকে এব্যাপারে টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ক্ষমতাশীনরা প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রণ করে। এব্যাপারে আমার কিছু করার নেই।
উল্লেখ্য, বিগত প্রায় ১০ বছর ধরে টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় আওয়ামীগ নেতার। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন টঙ্গী থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি ফজলুল হক।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ