নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রথম সন্তান মেয়ে। দ্বিতীয় সন্তান ছেলে হবে ভেবেছিলেন বাবা। কিন্তু সেটাও হয়েছে মেয়ে। আর বংশের বাতি জ্বালাবে কে- এই প্রশ্ন থেকে শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় শিশুটির বাবা আশরাফুল ইসলাম, দাদা আইয়ুব আলী খান, দাদী সেলিনা খান এবং ছেলের মামী জোৎস্না খাতুনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটেছে পাবনার ঈশ্বরদীর অরণকোলা গ্রামে। খোদ পুলিশ এই ঘটনাটির কথা জেনে হতবাক হয়ে গেছে। এই যুগেও মেয়ে সন্তানকে ঘৃণা করে কেউ এমনটি করতে পারে, সেটি ভাবতেও পারছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর এলাকাবাসীর মধ্যেও তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সবাই এই ঘটনায় দায়ীদের কঠিন এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছে। আশরাফুল ইসলাম ও নিশি বেগমের সংসারে প্রথম সন্তান ছিল মেয়ে। এ নিয়ে আশরাফুলের পরিবার নাখোশ ছিল। নিশির আবার সন্তান হবে-এই খবরে ছেলে হওয়ার আশায় ছিলেন আশরাফুল। তিনি ও তার স্বজনরা এখনও প্রাচীন ধ্যানধারণায় বিশ্বাস করেন। বংশের বাতি ছেলেই জ্বালায় বলে তাদের ধারণা।
এই বংশের বাতি জ্বালাতে এবার ছেলে আসবে বলে আশা করেছিলেন আশরাফুল ও তার স্বজনরা। কিন্তু দেড় মাস আগে আবার মেয়ে সন্তানের জন্ দেন নিশি বেগম। নাম রাখা হয় আতিকা জান্নাত।
আর পর পর দুটি সন্তান মেয়ে হওয়ায় মেনে নিতে পারেনি শ্বশুর বাড়ির লোকজন। শিশুর মাকে কৌশলে বাড়ির ছাদে পাঠিয়ে শিশুটিকে হত্যা করে তারা লাশ লুকিয়ে রাখে বাড়ির স্টিলের আলমিরাতে। পরে প্রতিবেশীর ওপর আনেন শিশু চুরির অভিযোগ। পরে থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশের সন্দেহ জয় এবং শনিবার রাতে বাড়ির স্টিলের আলমিরা থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে তারা।
ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন জানান, শিশু আতিকা জান্নাতকে প্রতিবেশীরা চুরি করেছে এমন অভিযোগ পেয়ে শিশুটির বাড়িতে যান তারা। এতে সন্দেহবশত পাশের বাড়ির চারজনকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাদের কাছে কোন তথ্য না পেয়ে পুলিশের সন্দেহ বাড়তে থাকে।
আজিম উদ্দিন বলেন, ‘এক পর্যায়ে তল্লাশি চালাই শিশুটির বাড়িতে। এ সময় স্টিলের আলমিরার চাবি চাইলে পরিবারের সদস্যরা জানান হারিয়ে গেছে। এতে সন্দেহের মাত্রা বেড়ে গেলে আলমারি ভেঙে শিশু আতিক জান্নাতের লাশ উদ্ধার করা হয়।’ পরে জিজ্ঞাসাবাদে বাড়ির লোকজন পুলিশকে জানায়, পুরো কাহিনি জানিয়ে অপরাধ স্বীকার করে নেয়।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ