শেরপুর প্রতিনিধি:
গত কয়েকদিন ধরে সকালে গ্যাস না থাকায় বাসায় নাস্তা বানানো যাচ্ছে না, হোটেলই ভরসা। দুপুরেও গ্যাস আসে না। ফলে দুপুরের খাবারও হোটেল থেকে এনে খেতে হচ্ছে। বিকাল থেকে গ্যাস আসা শুরু হলেও তার চাপ এত কম থাকে যে পানি পর্যন্ত গরম হয় না। সন্ধ্যার পর গ্যাসের চাপ স্বাভাবিক হয়ে আসে। এরপর শুরু হয় রান্না। এক সপ্তাহ ধরেই এ সমস্যা চলছে। শেরপুরে গ্যাসের এ করুণ অবস্থার কথা বলছিলেন পুরান শেরপুর শহরের সিংপাড়া এলাকার ফারজানা আক্তার।
শেরপুর ও আশপাশের এলাকায় হঠাৎ করেই গ্যাস সংকট বেড়ে গেছে। সংকটের কথা স্বীকার করে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে এই সংকট বেড়েছে বলে জানিয়েছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। সজবরখিলার বাসিন্দা মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল বেলায় গ্যাস চলে যায়, আসে সেই বিকালে। সারাদিনের রান্না সন্ধ্যার পর একসঙ্গে করে রাখি। সকালের নাস্তা বেশিরভাগ দিনই হোটেল থেকে এনে খাই। দুপুরে ফ্রিজে রাখা খাবার ওভেনে গরম করে খাই। এক সপ্তাহ ধরেই এ সমস্যা চলছে।’ প্রতিবছর শীত আসলেই এই সমস্যা বেশি হয় বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, গ্যাস সংকটে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার বয়স্ক ও শিশুরা। গরম পানি করতে না পারায় শীতের মধ্যে কষ্ট পাচ্ছেন তারা।
একই ধরনের সমস্যার কথা বলেন নিউমার্কেট এলাকার ‘অনুরাধা’র পরিচালক বাপ্পি দে। তিনি জানান, গ্যাস না থাকায় দুপুরের দিকে হোটেলগুলোতে খেতে গিয়েও বিপত্তি দেখা দেয়। খাবারের জন্য মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। প্রতিদিন হোটেলে যেভাবে মানুষ আসে, গত এক সপ্তাহে তারচেয়ে বেশি মানুষ আসছেন। কিন্তু গ্যাসের চাপ না থাকায় সেখানেও সময় মত খাবার তৈরিতে বিলম্ব হচ্ছে, যার ফলে মিষ্টি ও রুটি তৈরির কাঁচামাল যেমন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তেমন ক্রেতা সাধারণ পড়েছেন ভোগান্তিতে। হঠাৎ কাস্টমারের চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে হোটেল কর্মচারিরা জানায়, গ্যাস না থাকায় বাসাগুলোতে রান্নাবান্না হচ্ছে না। তাই হোটেলে খাবারের জন্য ভিড় লেগে যায়। কিন্তু যেসব হোটেলে গ্যাসে রান্না হয় সেসব হোটেলের রান্নাও ব্যাহত হচ্ছে।
দেশে বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ আবাসিক গ্যাস সংযোগ রয়েছে। তবে শুধু আবাসিকে নয়, শিল্পাঞ্চলেও গ্যাস সংকট চলছে। বিশেষ করে রাজধানীর আশপাশে গাজীপুর, আশুলিয়া, টঙ্গী ও সাভারের শিল্প-কারখানায় গ্যাসের চাপ থাকছে না। সিএনজি পাম্প ও বিদ্যুৎকেন্দ্রেও একই অবস্থা। এ বিষয়ে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মীর মসিউর রহমান বলেন, ‘শীতের কারণে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ২০ শতাংশ বেড়ে যায়। এই বাড়তি চাহিদা মেটানোর মতো গ্যাস নেই। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ার কারণে ঘাটতি মেটানো যাচ্ছে না। রেশনিং করেই চলতে হচ্ছে।’
তিনি জানান, তিতাসের অধীন এলাকায় গ্যাসের চাহিদা প্রায় দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু কখনোই চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাওয়া যায় না। সবসময়ই ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো ঘাটতি থাকে। মীর মসিউর রহমান আরও বলেন, ‘আগে পাইপলাইনের সমস্যার কারণে যেসব এলাকায় গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতো, এখন আর তা হচ্ছে না। শীতের আগেই এসব পাইপলাইন পরিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া, অভিযোগ পেলেই লোক পাঠানো হচ্ছে। পাইপলাইনে সমস্যা পেলে সমাধান করা হচ্ছে।’
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি