নিজস্ব প্রতিবেদক
শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মোতালেব হোসেনসহ তিনদিনে নিখোঁজ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। রোববার রাতে মোতালেবকে মোহাম্মদপুরের বসিলা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী নাসির উদ্দিন ও লেকহেড গ্রামার স্কুলের মালিক খালেদ হাসান মতিনকে গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে ডিএমপির উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ ও বিতরণ শাখার উচ্চমান সহকারী নাসিরের কাছে নগদ এক লাখ ৩০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নানা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মোতালেব ও নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর মতিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগে।
এই তিনজনের মধ্যে মোতালেব ও খালেদকে শনিবার বিকালে বসিলা ও গুলশান থেকে কয়েকজন ব্যক্তি তুলে নিয়ে যায় বলে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। আর বৃহস্পতিবার বনানীর একটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সেখান থেকে বেরোনোর পর দুপুর থেকে নাসিরের খোঁজ মিলছিল না বলে তার পরিবার জানিয়েছিল।
শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোতালেবকে ‘তুলে নেওয়ার’ অভিযোগে পরিবার থেকে হাজারীবাগ থানায় জিডি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাজধানীর বসিলা এলাকা থেকে শনিবার বিকালে ৪৫ বছর বয়সী মোতালেবকে তুলে নেওয়া হয়। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
তাকে ‘তুলে নেওয়ার’ ঘটনার বিবরণে পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, বসিলা ব্রিজের কাছে নিজের প্লটে বাড়ির নির্মাণ কাজ দেখতে শনিবার দুপুরের পর গ্রিন রোড স্টাফ কোয়ার্টার থেকে বেরিয়েছিলেন মোতালেব। সেখান থেকে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তিনি ওই প্লটে পৌঁছান।
তিনি যখন বাড়ির নির্মাণ কাজ তদারকি করছিলেন, তখন মাইক্রোবাসে করে চার-পাঁচজন লোক সেখানে যায় এবং দারোয়ানকে বলে, বাড়ি ভাড়া নেওয়ার জন্য তারা মোতালেবের সঙ্গে কথা বলতে চায়।
দারোয়ান তাদের জানায়, বাড়িওয়ালা আছেন ভবনের ছাদে। তখন তারা উপরে উঠে যায় এবং কিছু সময় পর বাড়ি ভাড়ার বিষয়ে কথা বলতে বলতে মোতালেবকে নিয়ে নিচে আসে।
নিচে নামিয়ে আনার পর মোতালেবকে তারা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে চলে যায়।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ ও বিতরণ শাখার উচ্চমান সহকারী নাসির পরিবার নিয়ে থাকেন রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার লেকসিটি কনকর্ড টাওয়ারে। বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের মহাসচিবও তিনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, শনিবার মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু আলম খানের বাসায় গিয়েও অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন ব্যক্তি খোঁজখবর করেছে। এর পর থেকে আবু আলমও আতঙ্কে আছেন।
রোববার বিকালে মন্ত্রণালয়ে আবু আলমের কক্ষে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। কারা তার বাসায় গিয়েছিল, কোন বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছে- সেসব প্রশ্নে তার বক্তব্যও জানা যায়নি।
আর খালেদ হাসান মতিনকে ‘তুলে নেওয়ার’ অভিযোগে থানায় করা জিডি বলা হয়েছে, শনিবার বিকাল ৪টার দিকে গুলশানে তার স্কুলের সামনে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে পাশে থাকা একটি মাইক্রোবাসে তাদের সঙ্গে ওঠেন মতিন। এরপর থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতা ও ধর্মীয় উগ্রবাদে উৎসাহ দেওয়ার অভিযোগে গত নভেম্বরে এই স্কুল বন্ধ করে দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারকে সভাপতি করে এবং সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ করে স্কুলটি চালুর নির্দেশ দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত।
দৈনিক দেশজনতা/এস সি