পাবনা প্রতিনিধি:
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ হলেও পেঁয়াজভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত পাবনা জেলায় পেঁয়াজের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় রয়েছেন চাষীরা। বাজারের উচ্চমূল্য কৃষককে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী করলেও অসময়ের কয়েক দফা বর্ষণে বীজতলা ও চারা নষ্ট হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। বীজ ও চারা সঙ্কটে বপন পিছিয়ে যাওয়ায় চলতি রবি মৌসুমে পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
কৃষি বিভাগ জানায়, দেশের পেঁয়াজের মোট চাহিদার এক তৃতীয়াংশ সরবরাহ হয় পাবনা থেকে। শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় জেলার গ্রামে গ্রামে পেঁয়াজ চাষীদের সময় কাটছে প্রচণ্ড ব্যস্ততায়। বর্ষার পানি নামার পর জেলার গাজনারবিল, চলনবিল ও ঘুঘুদহ বিলসহ জেলার প্রায় সকল উপজেলাতেই চাষ হয় শীতকালীন এ ফসলটির। গেল বছর শিলাবৃষ্টি, টানা বর্ষণে নষ্ট হয়েছে পেঁয়াজ। কৃষকের লোকসান হলেও বাজারে সরবরাহ ঘাটতির কারণে বেড়ে যায় দাম। বাড়তি কিছু লাভে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চলতি মৌসুমে আটঘাট বেঁধে নামেন চাষীরা।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় সুজানগর উপজেলায়। এ বছর এ উপজেলায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। আর এ থেকে দুই লাখ ৮৪ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে। সাঁথিয়ায় ১১ হাজার হেক্টরে এক লাখ ৫৪ হাজার টন, পাবনা সদরে পাঁচ হাজার হেক্টরে ৭০ হাজার টন, ঈশ্বরদীতে এক হাজার ৫০০ হেক্টরে ২১ হাজার টন, বেড়ায় দুই হাজার হেক্টরে ২৮ হাজার টন, ফরিদপুরে এক হাজার হেক্টরে সাড়ে ১৪ হাজার টন, চাটমোহরে এক হাজার ৫’শ হেক্টরে সাড়ে ২১ হাজার টন, ভাঙ্গুড়ায় এক হাজার হেক্টরে ১৪ হাজার টন এবং আটঘড়িয়ায় এক হাজার হেক্টর জমিতে ১৪ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চলতি রবি মৌসুমে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৭৬ হাজার টন। চলতি মৌসুমে পাবনায় ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদি লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে বলে দাবি কৃষি বিভাগের। অতিরিক্ত ১০ হাজার হেক্টরের উৎপাদন কি পূরণ করবে বাজারের পেঁয়াজ চাহিদা? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে জেলার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায় বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সারিবদ্ধভাবে পেঁয়াজ চারা বপন করছেন চাষীরা।
এ সময় কথা হয় কৃষক ইদ্রিস আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে আমাদের পেঁয়াজ বোনা শেষ হয়ে যায়। বৃষ্টির কারণে ডিসেম্বর মাসে ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। নতুন করে চারা জোগাড় করে তা বপন করতে গিয়ে এ বছর জানুয়ারিতেও পেঁয়াজ বপন শেষ হয়নি। কিন্তু, চৈত্র মাসে পেঁয়াজ ছোট হোক বড় হোক সবই পেঁকে যায়। কাজেই কোনভাবেই এ বছর ফলন ভালো হবার সম্ভাবনা দেখছি না।
পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া পেঁয়াজ চাষী আব্দুল হান্নান বলেন, পেঁয়াজ শীতের ফসল। গত মৌসুমে ঝড় বৃষ্টিতে পেঁয়াজের ক্ষতি হওয়ায় আমাদের লোকসান হয়েছে। বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতির কারণে এ বছর দাম বেড়ে যায়। ভালো দাম পাওয়ার আশায় চাষীরা পেঁয়াজ বপনের প্রস্তুতি শুরু করে। কিন্তু, গত ডিসেম্বরের টানা বর্ষণে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় আমাদের সদ্য বপন করা পেঁয়াজের ক্ষেত। বীজতলা নষ্ট হওয়ায় চারারও সঙ্কট দেখা দিয়েছে। একই উপজেলার খয়রান গ্রামের কৃষক মোতালেব হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, এ বছর পেঁয়াজের বীজ চারা দুটোরই দাম বেশি। গত বছর যে দানা (পেঁয়াজ বীজ) ছিল প্রতি কেজি ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা, এ বছর তা কিনতে ৪৫০০ টাকা লাগছে। টাকা দিয়েও দানা পাওয়া যাচ্ছে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর(খামারবাড়ী), পাবনার উপ-পরিচালক বিভূতি ভূষণ সরকার বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের উপর কারো হাত নেই। অসময়ের বৃষ্টিতে পেঁয়াজ চাষীরা কিছুটা বেকায়দায় পড়েছেন। তবে, চাষীরা একটু বাড়তি যত্ন ও নিয়মিত সার, সেচের ব্যবস্থা করলে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি