২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:২৪

সুস্থ সুন্দর দাঁতের জন্য ১০ পরামর্শ

স্বাস্থ্য ডেস্ক:

সুস্থ সুন্দর দাঁতের রক্ষনাবেক্ষন অনেক জরুরী। আপনার হাসি, পুষ্টিকর খাদ্য হজমের জন্য সঠিকভাবে চিবিয়ে খাওয়া এমনকি অন্যান্য রোগ যেমন হূদরোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি থেকে নিজেকে রক্ষা করা। তাছাড়া দাঁতের ব্যথার যন্ত্রনা ও অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা এবং সুস্থ, সুন্দর দাঁত দীর্ঘ দিন অখুন্ন রাখার জন্য বিশেষ কয়েকটি পরামর্শ মেনে চলা প্রয়োজন। যেমন-
১. শিশুর দাঁতের যত্ন: গবেণায় দেখা যায় প্রতি ৪ জন শিশুর মধ্যে ১ জনের দাঁতের ক্ষয় শুরু হয় শিশু বয়সে এবংে ১২ থেকে ১৫ বছরের প্রায় ৫০% শতাংশ ছেলেমেয়েদের দাঁতের ক্যারিজ থাকে। শিশুর দাঁতের যত্ন শুরু করতে হবে যখন থেকে তাদের দাঁত উঠা শুরু হয়, সাধারণত ছয় মাস বয়স থেকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই সময় শিশুর দুধ দাঁত একটি পরিষ্কার ফ্লানেমের কাপড় বা নরম টুথব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে। দুই বছর বয়স থেকে শিশুকে নিজ হাতে দাঁত ব্রাশ করার জন্য উত্সাহিত করতে হবে, তবে সেই সাথে নজরদারীও রাখতে হবে।
২. ফিসার সিলেন্ট: মলারের স্থায়ী দাঁত চলে আসে সাধারণত ৬ বছর বয়সে। এই বয়সে সিসার সিলেন্ট ফিলিং দিয়ে ঐ মলার স্থায়ী দাঁত ভরে দিতে হবে। যাতে করে দন্তক্ষয় না হতে পারে। গবেষণায় দেখা যায় এই ফিলিং দাঁতের ক্ষয় অনেকাংশই প্রতিরোধ করে।
৩. ফ্লুরাইড ব্যবহার: মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায় সবচেয়ে বড় যে আবিষ্কার তা হলো ফ্লুরাইড। এই ফ্লুরাইড ব্যবহারে দাঁতের এনামেল মজবুত হয় এবং ডেন্টাল ক্যারিজ থেকে রক্ষা করে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র-এ এখন বেশিরভাগ মানুষ ফ্লুরাইড যুক্ত খাবার পানি গ্রহণ করে। তাছাড়া ফ্লুরাইড টুথপেষ্ট ব্যবহারে দাঁতের ক্ষয় রোগ কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। অতএব ফ্লুরাইড টুথপেষ্ট ব্যবহার করুন।
৪. প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ ও ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার: মানবজীবনে দাঁতের ক্ষয় ও মাড়ির রোগ দুটি প্রধান সমস্যা। এই সমস্যা শুধু বয়স্কদের নয় তরুণদের মধ্যে তিন চতুতাংশই মাড়ির রোগে ভোগে এবং মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে। আমেরিকান ডেন্টাল এসোসিয়েশনের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিবছর অন্তত: ৩/৪ বার টুথব্রাশ পরিবর্তন করা প্রয়োজন, বিশেষত টুথব্রাশ ফাইবার গুলো যখন বাঁকা হয়ে যায়। যে সব মানুষ আকাবাকা দাঁতের জন্য ব্রেসসস ব্যবহার করেন বা যাদের নকল দাঁত বা ইমপ্লান্ট আছে তারা বিশেষভাবে তৈরি টুথব্রাশ ব্যবহার করবেন। বৃদ্ধ মানুষ যাদের আথ্রাইটিস আছে বা শারীরিক ভাবে অসুস্থ তাদের জন্য ইলেক্ট্রনিক টুথব্রাশ ব্যবহার করা প্রয়োজন।
৫. মুখ কুলকুচি করা: দাঁত ব্রাশ এবং ফ্লাশিং ছাড়াও আরও একটি বিশেষ করনীয় হচ্ছে জীবানু নাশক মাউথ ওয়াশ দিয়ে মুখ কুলকুচি করা। তাতে দাঁতের ক্ষয় রোগ, মাড়ির রোগ বেশিরভাগই প্রতিরোধ করা যায়। খাবার পর সুগার ফ্রি চুইংগাম ব্যবহারেও অনেক ক্ষেত্রে মুখের লালা প্রবাহ বাড়িয়ে এনামেলকে ক্ষয় থেকে প্রতিরোধ করে এবং ব্যাকটেরিয়া মুক্ত করে এবং এসিডিটির মাত্রাকে সমতায় নিয়ে আসে।
৬. মুখের উপর যে কোন আঘাত থেকে রক্ষা করা: বিভিন্ন খেলাধুলা বা জিমনাটিক কাজ আমাদের দেহ গঠনে সাহায্য করে তবে অনেক ক্ষেত্রে অসাবধানতার কারণে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। আঘাত লাগতে পারে দাঁতে। ফলে দাঁত ভেঙ্গে যেতে পারে অথবা সম্পূর্ণ উপড়ে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে মাউথ গার্ড ব্যবহার করে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
৭. ধূমপান ও তামাক জর্দ্দা ব্যবহার: ধূমপান ও তামাক জর্দ্দা যে শুধু দাঁতের স্বাভাবিক সুন্দর রঙকে বিবর্ণ করে বা কালো করে তাই নয়, এই ধূমপান, তামাক ব্যবহারের ফলে মানুষের ক্যান্সারও হতে পারে। অতএব সুস্থ দাঁত ও মুখের নিশ্চয়তার জন্য তামাক বর্জন করা জরুরী।
৮. দাঁত ও মাড়ির সুস্থতার জন্য পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা জরুরি। বিজ্ঞানীরা মনে করেন কোন কোন মায়েদের মধ্যে ওমেগা ও ফ্যাট আছে তা দাঁত ও মাড়ির প্রদাহ প্রতিরোধ করে। তবে প্রতিদিন কিছু শাক সবজি যেমন লাল শাক, পালং শাক, পুই শাক, গাজর, টমেটো, শশা, লেবু  এবং ফলের মধ্যে কমলালেবু, জাম্বুরা, কামরাঙ্গা, আমড়া, পেয়ারা, কলা ইত্যাদি দাঁত ও মাড়িকে শক্ত রাখে।
৯. শকরা ও মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করে মুখের বিভিন্ন ধরণের ব্যাক্টেরিয়া মিষ্টি বা শরকরা জাতীয় খাবারের সাথে মিশে গিয়ে এসিড তৈরী করে ফলে দাঁতের ক্ষয় এনামেল তাড়াতাড়ি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। সুতরাং মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণের পর দাঁত ব্রাশ করা বা কুলকুচি করা জরুরী। বিশেষ করে শিশুরা রাতে শোবার আগে ফিডারে যদি দুধ খায় এবং তাতে চিনি মিশ্রিত থাকে অথবা চকলেট খায় তবে দাঁত অবশ্যই ব্রাশ করে নেয়া প্রয়োজন। তবে দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ করা সম্ভব।
১০. গবেষকগণ মনে করেন প্রতি ছয় মাস অন্তর ডেন্টাল চেক আপ করানো, দাঁতের রুটিন ডেন্টাল স্কেলিং এর মাধ্যমে প্লাস পরিষ্কার করা হলে দাঁতের ক্যারিজ ও মাড়ির রোগ অনেক প্রতিরোধ করা সম্ভব। ডেন্টাল চেকআপের ফলে আরো যে উপকার পাওয়া যায় তা হলো- মুখের ভিতর ক্যান্সারের পূর্বাবস্থায় কোন লক্ষণ দেখা দিলে তা নির্ণয় করে দ্রুত প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রতি ১০টি মুখের ক্যান্সার ৯ টিকে পূর্বে থেকে সনাক্ত করা গেলে সুস্থ করা সম্ভব। দাঁতের মাড়ির ক্ষয় প্রতিরাধ করা সম্ভব। যারা দেহের অন্যান্য রোগের কারণে যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ, হূদরোগ তাদের ওষুধ গ্রহণের কারণে মুখে প্রভাব পড়তে পারে। যেমন শুষ্ক মুখ, সেটাও পূর্ব থেকে নির্ণয় করা গেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হতে পারে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি
প্রকাশ :জানুয়ারি ২০, ২০১৮ ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ