এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা :
ভোলায় এবার সুগন্ধি ব্রি-৩৪ ধান এর বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ও বাজারে ধানের উচ্চমূল্য পেয়ে বেজায় খুশি কৃষক। পোকা মাকড়ের আক্রমন না থাকায় এ ধান চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে তাদের। এছাড়া ভোলার সুগন্ধি ধান সাতক্ষীরার হালিমা আটো রাইস মিলের মাধ্যমে যাচ্ছে মালয়েশিয়া। তাই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ ধান চাষে আগ্রহ বাড়ছে ভোলার কৃষকদের।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন ও চরফ্যাশন এ পাঁচ উপজেলায় চলতি বছর ৩শ’ ৬০ হেক্টর জমিতে সুগন্ধি ব্রী-৩৪ ধান চাষ করেছে ৮হাজার কৃষক। মান্ধাতার আমল থেকে কালি জিড়াসহ নানান গুরা চালের ধান আবাদ করে লোকশান গুনতে গুনতে এবার সুগন্ধি ব্রী-ধান ৩৪ চাষ করে তারা। প্রথমে তাদের মধ্যে তেমন অগ্রহ না থাকলেও ফলন উঠার পর তাদের মধ্যে বিরাজ করছে অনন্দ। ঘরে বসেই তারা পাইকারদের কাছে ধান বিক্রি করছেন ১ হাজার ৫০টাকা মন দরে। কম খরচে অধিক লাভ আর রোগবালাই না থাকায় এ ধানের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ছে। ফলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ ধান চাষ শুরু করছে ভোলার কৃষকরা।
এসময় কথা হয় সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের প্রান্তিক চাষি ভোলা সদরের মালেক বিশ্বাস, দৌলতখানের মোঃ জসিম, বোরহানউদ্দিনের মোঃ হানিফ ও লালমোহন উপজেলার মোাঃ সেন্টু জানান, এ বছর তারা শতকরা ৮০ ভাগ জমিতে ব্রি-৩৪ জাতের ধান চাষ করেছেন। একসময় অবস্থাপন্ন কৃষকেরা বছরজুড়ে পোলাও ও পায়েস খাওয়ার জন্য সামান্য জমিতে সুগন্ধি ধানের চাষ করতেন। সেই সময় কাটারী, কালনী, নেনিয়াসহ বিভিন্ন জাতের সুগন্ধি ধানের প্রচলন ছিল। কিন্তু ফলন ছিল খুবই কম। এ কারণে প্রান্তিক বা মাঝারি কৃষকেরা ওই সব ধান চাষে আগ্রহ ছিল না। কিন্তু ব্রি-৩৪ জাতের ধান কেবল সুগন্ধিই নয়, এই ধানের দাম বাজারে সবচেয়ে বেশি। ফলনও ভালো। ফলে কৃষকেরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতেই এই ধানের চাষ করছেন।
আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ) এর অর্থায়নে পল্লীকর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের পেইজ প্রকল্পের সহযোগিতায় গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা ৮ হাজার কৃষককে ধানবীজ ও পরামর্শদিয়ে এবং উৎপাদিত ধান বাজারজাত করনের মাধ্যমে সহযোগিতা করে আসছে। ইতোমধ্যে এ সুগন্ধি ধান ভোলা থেকে কিনে মালয়েশিয়া পাঠানো হয়েছে। এবছর প্রায় শতাধিক মেট্রিক টন ধান সাতক্ষিরার একটি অটোরাইস মিলের স্বত্বাধিকারী মোঃ রাইসুল ইসলাম ১০৫০ টাকা দরে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করেছেন।
উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চাষি মোঃ মিজান, শরিফ ও মোঃ হান্নান জানান, আগের বছরগুলোতে ধান চাষ করে লাভবান হতে পারেন নি তারা। এবছর গ্রামীন জন উন্নয়ন সংস্থা সহযোগিতায় সুগন্ধি ব্রি-৩৪ ধান আবাদ করে একর প্রতি ৩০ থেকে ৩২ মন ধান পেয়েছেন তারা। পাশাপাশি দামও ভালো পেয়েছেন তারা। বাড়ি থেকে এসে মালয়েশিয়ার পাইকারা ১ হাজার ৫০টাকা মন দামে কিনে নিয়ে গেছে। তাই আগামিতে আবারও এ ধানের আবাদ করবেন বলে জানান তারা।
ঢাকা পল্লীকর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) জেনারেল ম্যানেজার ড. আকন্দ মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের সংস্থার সহযোগিতায় সুগন্ধি ধান চাষের জন্য কৃষদের বীজ দেয়ার পাশাপাশি আধুনিক চাষাবাদের প্রশিক্ষনের দেয়া হচ্ছে। এতে করে কৃষকরা এধান চাষে আগ্রহী হয়ে বেশি ফলনের পাশাপাশি বেশি মূল্য পাচ্ছে। ফলে আগামীতে আরো বেশি কৃষক এ ধান চাষে ঝুকবে বলে জানান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রশান্ত কুমার সাহা জানান, সুগন্ধি ব্রি-৩৪ জাতের ধানের আবাদ পরিবেশ সম্মত এবং অপোকৃত কম উর্বর জমিতে ফলে। উৎপাদন খরচ অনেক কম হওয়ায় এ জাতীয় ধান চাষে কৃষকদের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এই ধানের চাষ করে অনেকেই সফল হচ্ছেন।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর