দুনিয়ায় যখন অত্যাচারী শাসকদের নির্যাতন নিষ্পেষনে সাধারণ মানুষ জর্জরিত হয়, বিচারের বাণী নীরবে নির্ভুতে কাঁদে, তখন তাদের পরিত্রাণের লক্ষ্যে মহান বীর ও ন্যায়পরায়ণ শাসকদের আর্থিকভাবে ঘটে থাকে। তারা নানা সমস্যা-প্রতিফলতা জয় করে মানুষের জন্য শান্তির পরিবেশ তৈরি করেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য নানা সুর্কীতি নির্মাণ করেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন আমাদের এ ভুখন্ডে তেমনি এক আর্শীবাদময় পুরুষ যার সোনার হাতের ছোঁয়ায় দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রের জঞ্জাল দুর হয়ে ইতিবাচক পরিবর্তনের বেগবান ধারা সুচিত হয়েছিল এবং দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য স্বস্তি ও শান্তির আবহ তৈরি করেছিল। স্বনির্ভরমুখী চেতনা ও কর্মধারায় গোটা জাতি উদ্বেলিত হয়েছিল। খুব অল্পদিনেই বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে সম্মানের আসনে ঠাঁই করে নিয়েছিল।
আজ সেই মহান পুরুষের ৮২তম জন্মর্বাষিকী। ১৯৩৬ সালের এই দিনে তিনি বগুড়া জেলার গাবতলী থানার বাগবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে কলকাতা ও করাচিতে পাঠ শেষ করে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ভারত যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে বিশেষ বীরত্বের পরিচয় দিয়ে সুখ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৭১ সালের টালমাটাল দিনে গোটা জাতি যখন দিশেহারা, পাকিস্তান বাহিনীর আতর্কিত আক্রমণে রাজনৈতিক শক্তি যখন পালিয়ে প্রাণ রক্ষায় ব্যস্ত, তখন তিনি বীর বিক্রমে রুখে দাঁড়ান এবং পাকহানাদারদের কিয়দংশকে বন্দী করে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে দৃপ্তকণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তার সেই ঐতিহাসিক ঘোষণা থেকেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় এই জাতি পথের দিশা পায়। তারা তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশ মাতৃকা রক্ষা ও হানাদার বিতাড়িত করার মরণপণ লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সত্যি বলতে কি, রাজনৈতিক নেতৃত্বও তখন স্বস্তি ফিরে পায় এবং সেই মুহূর্তে তাদের করণীয় কী সেই দিক নিদের্শনা লাভ করে।
এখানেই শেষ নয়, ১৯৭৫ সালের নবেম্বর মাসে গোটা জাতি যখন প্রায় অন্ধকারে নিমজ্জিত, প্রশাসনের গতি রুদ্ধ, কী ঘটে চলছে দেশে কারোরই ঠাহর করার উপায় নেই, কেবল বুঝা যাচ্ছিলো আধিপত্যবাদী থাবা বাংলাদেশকে গ্রাস করতে উদ্যত, ঠিক সেই মুহূর্তে আবারও ধুমকেতুর মতো জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব, এবং এবারও সেই ত্রাণকর্তার ভূমিকায়। অশুভ শক্তি তাকে গৃহবন্দী করে তার সমস্ত তৎপরতা স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্ত তার দৃপ্ত নেতৃত্বে সিপাহী জনতা একাকার হয়ে নবেম্বরের ৬ তারিখের রাতে এক অবিস্মরণীয় বিপ্লব সম্পন্ন করে।
তারপরের কাহিনী তো ইতিহাসের পরতে পরতে লেখা। তাঁর হাতের ছোঁয়া পেয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে আমুল পরিবর্তন ঘটলো পশ্চাদপদ বাংলাদেশের। ডুবন্ত শিল্পখাত চাঙ্গা হলো, প্রবৃদ্ধি এলো কৃষিখাতে বিপ্লব ঘটলো, এক ফসল-দো ফসলা জমি তিন ফসলা হলো, উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পেলো; ব্যবসায় খাতে নতুন প্রাণ সঞ্চার ঘটলো, এক সময়ে তলাবিহীন ঝুড়ি খ্যাত বাংলাদেশ স্বনির্ভরমুখী হয়ে উঠলো। কমনওয়েলথ সম্মেলনে সদস্য দেশগুলো বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসায় তখন পঞ্চমুখ। আরো সব এমন কান্ড ঘটলো যা বিশ্ব নেতৃবৃন্দ অবাক বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করলো। সেনাছাউনি থেকে এসে তিনি এদেশের অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে মুক্ত করলেন, বাকশালী স্বৈরতন্ত্র উচ্ছেদ করে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করলেন। ঔপনিবেশিক ধাঁচের প্রশাসন দীর্ঘকাল ধরে স্বাধীন-সার্বভৌম এই দেশের উন্নয়নের অন্তরায় হয়ে বিরাজ করছিল, ধরে স্বাধীন-সার্বভৌম এই দেশের উন্নয়নের অন্তরায় হয়ে বিরাজ করছিল, তিনি সেই প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ করে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ দিলেন। শিক্ষাকাঠামোকেও নতুনভাবে বিন্যস্ত করার উদ্যোগ নিলেন। বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও কর্মমুখী শিক্ষার ধারা পড়ে উঠলো এবং বিপুল সংখ্যক বেকারের কর্মসৃজনের পথ খুলে গেল। সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়, ধরনের বৈদেশিক নীতি চালু করে বিশ্বআঙ্গিনায় বাংলাদেশের বন্ধত্বের পরিসর বৃদ্ধি করলেন। অল্পদিনেই বাংলাদেশ একটি আধুনিক, মর্যাদাশীল রাষ্ট্রের সম্মানে ভূষিত হলো।
নিরাসক্ত দৃষ্টিতে তাকালে দেখা যায়, যখনই হত বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, নিপীড়িত মানুষের আর্তনাদ তখনই জিয়াউর রহমানের বরাভয় বাণী। এভাবেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন এ দেশের প্রতিটি মানুষের আত্মার আত্মীয়, পরম প্রিয়জন। তাঁর এই আবির্ভাব ও বাংলাদেশের গৌরবময় উত্থান বিদেশী শক্তি ও তার তাঁবেদারদের কাছে বোধকরি অসহ্য হয়ে উঠেছিল। তাই তো তাদের সম্মিলিত চক্রান্তে ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে নৃশংসভাবে ঘাতকের হাতে তিনি প্রাণ হারালেন। তাঁর এই অকাল মৃত্যু না ঘটলে বাংলাদেশ যে আর অল্পদিনের মধ্যেই উন্নত দেশের কাতারে সমাসীন হতো তাতের কোনো সন্দেহ নেই।
তবে ঘাতকের হাত তাঁর নশ্বর দেহকে ছিন্ন করলেও তাঁর অমলিন আদর্শ অফুরান কর্মধারা, যুগান্তকারী সব কীর্তিকে বিন্দুমাত্রা স্পর্শ করতে পারেনি। কোনোদিন পারবেও না। এ জন্য তিনি শহীদ হয়েও আজ অমর, অক্ষয়, চিরঞ্জীব। তাঁর আদর্শ, সততা ও কর্মনিষ্ঠাকে ধারণ করে যদি আমরা অগ্রসর হই তাহলে আজকের দুঃশাসন, দুরাচার, দুর্নীতি, দেশ ও জনস্বার্থবিরোধী চক্রান্ত কোনো কিছুই আমাদের পর্যুদস্ত করতে পারবে না। সব অত্যাচার নিপীড়নের মধ্যেও জনতার জয় অবশাম্ভাবী। শহীদ জিয়া অমর হোক। তাঁর আদর্শই হোক আমাদের প্রেরণা ও পাথেয়।