২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৫:৫৪

ভোলায় চাষ হচ্ছে সুগন্ধি ধান, রপ্তানী হচ্ছে মালয়েশিয়ায়

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চলতি মৌসুমে ভোলায় সুগন্ধি ব্রি-৩৪ ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো ও বাজারে ধানের উচ্চ মূল্য পেয়ে কৃষকদের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে।

পোকা মাকড়ের আক্রমণ না থাকায় এ ধান চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। এছাড়া ভোলার সুগন্ধি ধান সাতক্ষীরার হালিমা অটোরাইস মিলের মাধ্যমে যাচ্ছে মালয়েশিয়া। তাই বাণিজ্যিকভিত্তিতে এ ধান চাষে আগ্রহ বাড়ছে ভোলার কৃষকদের।

সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন ও চরফ্যাশন এ পাঁচ উপজেলায় চলতি বছর ৩৬০ হেক্টর জমিতে সুগন্ধি ব্রি-৩৪ ধান চাষ করেছেন ৮ হাজার কৃষক। পুরনো আমল থেকে কালি জিড়াসহ নানারকম ধান আবাদ করে লোকসান গুতে গুনতে এবার সুগন্ধি ব্রি-ধান ৩৪ চাষ করেন তারা। প্রথমে তাদের মধ্যে তেমন আগ্রহ না থাকলেও ফলন উঠার পর তাদের মধ্যে বিরাজ করছে আনন্দ। ঘরে বসেই তারা পাইকারদের কাছে ধান বিক্রি করছেন ১০৫০ টাকা মণ দরে। কম খরচে অধিক লাভ, আর রোগবালাই না থাকায় এ ধানের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ছে। ফলে বাণিজ্যিকভিত্তিতে এ ধান চাষ শুরু করছেন ভোলার কৃষকরা।

আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ)-এর অর্থায়নে পল্লীকর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের পেইজ প্রকল্পের সহযোগিতায় গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা ৮ হাজার কৃষককে ধানবীজ ও পরামর্শ দিয়ে এবং উৎপাদিত ধান বাজারজাতকরণের মাধ্যমে সহযোগিতা করে আসছে। ইতোমধ্যে এ সুগন্ধি ধান ভোলা থেকে কিনে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়েছে। এবছর প্রায় শতাধিক মেট্রিক টন ধান সাতক্ষীরার একটি অটোরাইস মিলের স্বত্বাধিকারী মো. রাইসুল ইসলাম ১০৫০ টাকা মণ দরে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করেছেন।

সদর উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের প্রান্তিক চাষি আব্দুল মালেক বিশ্বাস, দৌলত খানের মো. জসিম, বোরহানউদ্দিনের মো. হানিফ ও লালমোহন উপজেলার মো. সেন্টু জানান, এ বছর শতকরা ৮০ ভাগ জমিতে ব্রি-৩৪ জাতের ধান চাষ করছেন তারা। একসময় কৃষকেরা বছরজুড়ে পোলাও ও পায়েস খাওয়ার জন্য সামান্য জমিতে সুগন্ধি ধানের চাষ করতেন। সেই সময় কাটারী, কালনী, নেনিয়াসহ বিভিন্ন জাতের সুগন্ধি ধানের প্রচলন ছিল। কিন্তু ফলন ছিল খুবই কম। এ কারণে প্রান্তিক বা মাঝারি কৃষকেরা ওই সব ধান চাষে আগ্রহ ছিল না। কিন্তু ব্রি-৩৪ জাতের ধান কেবল সুগন্ধিই নয়, এই ধানের দাম বাজারে সবচেয়ে বেশি। ফলনও ভালো। ফলে কৃষকেরা বাণিজ্যিকভিত্তিতেই এই ধানের চাষ করছেন।

উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চাষি মো. হান্নান জানান, আগের বছরগুলোতে ধান চাষ করে লাভবান হতে পারেননি তারা। এবছর গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা সহযোগিতায় সুগন্ধি ব্রি-৩৪ ধান আবাদ করে একর প্রতি ৩০ থেকে ৩২ মণ ধান পেয়েছেন। পাশাপাশি দামও ভালো পেয়েছেন। বাড়ি থেকে এসে মালয়েশিয়ার পাইকারা ১০৫০ টাকা মণ দামে কিনে নিয়ে গেছেন। তাই আগামীতে আবারও এ ধানের আবাদ করবেন বলে জানান তারা।

ঢাকা পল্লীকর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) জেনারেল ম্যানেজার ড. আকন্দ মো. রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের সংস্থার সহযোগিতায় সুগন্ধি ধান চাষের জন্য কৃষদের বীজ দেয়ার পাশাপাশি আধুনিক চাষাবাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এতে করে কৃষকরা এ জাতের ধান চাষে আগ্রহী হয়ে বেশি ফলনের পাশাপাশি বেশি মূল্য পাচ্ছেন। ফলে আগামীতে আরো বেশি কৃষক এ ধান চাষে ঝুঁকবেন বলে জানান তিনি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রশান্ত কুমার সাহা জানান, সুগন্ধি ব্রি-৩৪ জাতের ধানের আবাদ পরিবেশসম্মত এবং অপেক্ষাকৃত কম উর্বর জমিতে ফলে। উৎপাদন খরচ অনেক কম হওয়ায় এ জাতীয় ধান চাষে কৃষকদের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া এখন বাণিজ্যিকভিত্তিতে এই ধানের চাষ করে অনেকেই সফল হচ্ছেন।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :জানুয়ারি ১৮, ২০১৮ ১:১৯ অপরাহ্ণ