২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৭:৩৭

কালিগঞ্জের শিক্ষা কর্মকর্তা অফিস করেননি ১০ মাসে ১০ দিনও

নিজস্ব প্রতিবেদক:

অফিসে আসেন না সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজিজুর রহমান। ২০১৭ সালের মার্চে নিয়োগের পর এখন পর্যন্ত তিনি অফিস করেছেন হাতে গোনা দুই এক দিন। আর তার এই গরহাজিরের কারণে উপজেলা শিক্ষা প্রশাসনের কাজে বিঘ্ন ঘটছে বিস্তর।

সহকর্মীরা জানান, শুধু উপজেলার শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড ও পরিচালনা পর্ষদের কমিটি গঠনের দিনে অফিসে আসেন তিনি। বাকি দিন অফিসের হিসাবরক্ষক এবং নৈশপ্রহরী তার হয়ে কাজ করেন। তাও আজিজুরের বিরুদ্ধে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ রয়েছেও। এই টাকাও নেন হিসাবরক্ষক ও নৈশপ্রহরী।

কালিগঞ্জ উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম  বলেন, ‘আজিজুর রহমান টাকা আর স্বার্থ ছাড়া অফিসে আসেন না। তিনি গত বছরের ১৯ মার্চ সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। ১০ মাসে তিনি ১০ দিনও নিয়মিত অফিস করেননি। তার কারণে উপজেলার শত শত শিক্ষক ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন।’

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর-মাউশির কাছেও এই অভিযোগ আসার পর গত ৩০ আগস্ট অভিযোগের তদন্ত করতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম ছায়েদুর রহমানকে নির্দেশ দেয় সংস্থাটি। আর এই তদন্তে সব অভিযোগেরই সত্যতা পাওয়া গেছে। এই প্রতিবেদন মাউশিতে জমা পড়েছে।

গত ১৮ নভেম্বর জমা পড়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, আজিজুর রহমানের এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের সহযোগী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ এবং নৈশপ্রহরী মফিজুল মোল্যা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আজিজুর রহমান শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড বা কমিটি নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। শিক্ষক নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির জন্য আজিজুরের পক্ষে দাপ্তরিক কাজ ও ঘুষের টাকা লেনদেন করেন সাব্বির আহমেদ ও মফিজুল মোল্যা। এমপিও সংক্রান্ত কাজে শিক্ষকরা আসলে সাব্বির আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন আজিজুর রহমান।

আবার সরকারি বিনামূল্যের বইয়ের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মফিজুল মোল্যা (নৈশ প্রহরী) ও সাব্বির আহমেদ (হিসাব রক্ষক) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ গ্রহণ করেন। শিক্ষকদের এমপিও সংক্রান্ত কাগজপত্র পাঠাতেও ঘুষ আদায় করেন তারা।

গত ১৮ ডিসেম্বর তার অনুপস্থিতিতে সরকারি কাজে বিঘ্ন ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে মাউশিকে চিঠি দেয় জেলা শিক্ষা অফিস।

আজিজুলের অনুপস্থিতির কারণে গত বছরের জেডিসি পরীক্ষায় কর্তব্য সূচিও পরিবর্তন করা হয়। কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ২৩ অক্টোবরের এক চিঠিতে দেখা যায়, জেডিসি পরীক্ষায় নলতা দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে ডিউটি ছিল আজিজুর রহমানের। তিনি সেদিন উপস্থিত ছিলেন না। তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মাঈনউদ্দিন হাসান তার বদলে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ওমর ফারুককে দায়িত্ব দেন।

কালিগঞ্জ উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, আগামী সোমবার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড রয়েছে। সেদিন তিনি (আজিজুল) আসবেন। উদ্দেশ্য পরিষ্কার। কিন্তু ওইদিন হিন্দুদের স্বরসতী পূজা রয়েছে। এ জন্য এই সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ওইদিনের পরিবর্তে অন্যদিন ঠিক করার দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু তিনি পাত্তা দিচ্ছেন না।

শফিকুল ইসলাম বলেন, এখানে যোগ দেয়ার আগে তিনি ছিলেন খাগড়াছড়ির ফটিকছড়িতে। সেখানে অনুপস্থিত থাকায় ১৭ মাস তার বেতন ভাতা বন্ধ ছিল। তিনি কাউকে কেয়ার করছেন না। অদৃশ্য কারণে তিনি এসব করেই যাচ্ছেন।

নিয়োগ বোর্ডের বৈঠকে আজিজুল তিনি ঢাকা থেকে বিমানযোগে যশোর আসেন এবং সেখান থেকে প্রাইভেটকারে কালিগঞ্জ আসেন জানিয়ে শফিকুল বলেন, ‘তার বেশ টাকার গরম রয়েছে।’

এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে আজিজুর রহমানের মুঠোফোনে কল দিলে অপর প্রান্ত থেকে একজন কল রিসিভ করে বলেন, ‘ভাই ওয়াসরুমে আছে। তার সঙ্গে কথা বলতে হলে ১০ মিনিট পরে ফোন দিতে হবে।’ এরপর ১০ মিনিট পরে আবার ফোন করলে তিনি আর রেসপন্স করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান  বলেন, ‘আজিজুলের বিষয়টি দেখব।’

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :জানুয়ারি ১৮, ২০১৮ ১২:১৪ অপরাহ্ণ