নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঘন কুয়াশার কারণে প্রতিদিনই রাত থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত বন্ধ থাকছে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল। ফলে দৌলতদিয়া ঘাট প্রান্তে জমছে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে ঢাকাগামী দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রী ও যানবাহনের চালকেরা। এ রুটে প্রতিদিন প্রায় ছোটবড় ১৫ হাজারের বেশি যানবাহন পদ্মা নদী পার হয়। ৭ থেকে ১০ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে ফেরি বন্ধ থাকার কারণে ঘাট প্রান্তে দীর্ঘ হচ্ছে যানবাহনের সারি। মাসখানেক ধরে শীত ও কুয়াশার তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় দৌলতদিয়া প্রান্তে ফেরি পারের অপেক্ষায় দেখা যাচ্ছে শত শত যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক।
চরম ভোগান্তিতে প্রহর গুনছেন যাত্রীবাহী বাসের যাত্রী ও চালকেরা। পাশাপাশি ফেরির সিরিয়াল না পেয়ে ৩ থেকে ৫দিন পর্যন্ত ঘাটেই বসে আছে পণীবাহী ট্রাকগুলো। ট্রাকের মালামাল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ট্রাকের চালক ও হেলপার। কাচাঁমালবাহী ট্রাকের পণ্যগুলো নষ্ট হয়ে লোকসানে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। অনেকের ফুরিয়ে গেছে সঙ্গে আনা খোরাকিও।
যশোর থেকে ঢাকাগামী (ঢাকা মেট্টো-ট-১৪-৭৪৬৮) ট্রাক চালক তৈহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত ৪দিন ধরে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে ফেরির সিরিয়ালের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কবে ফেরিতে উঠতে পারবো তা জানি না। তবে দৌলতদিয়া ঘাটে মানুষ বড় অসহায়’।
৫ দিন ধরে ঘাটে আটকে থাকা ফরিদপুর টু ঢাকাগামী ট্রাক চালক মাঝহারুল ইসলাম বলেন, ‘ভাই ৫দিন আগে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে আটকে আছি। এতো ভোগান্তি আর সহ্য হয় না। আমাদের টাকাও নাই খোরাকি ফুরিয়ে গেছে। আমরা ট্রাক চালকেরা বড় অসহায়।’
পিরোজপুর টু ঢাকাগামী (চট্রগ্রাম মেট্টো ট-১১-২৬৭২) বাস চালক মাসুদ বলেন, ‘দৌলতদিয়া ঘাটে প্রভাবশালীদের দাপটে বাস চালকেরা অস্থির। ঘাটে দালালদের ক্ষমতায় সবাই অস্থির। টাকা নিয়ে ট্রাক পার করলেও যাত্রীবাহী বাসকে বসিয়ে রাখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। চালকেরা ত বাধ্য হয়ে গাড়ী চালায় কিন্তু যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে। দৌলতদিয়া ঘাটে মানুষ বড় অসহায়।’ পটুয়াখালী থেকে ঢাকাগামী একটি কাভারভ্যানের হেলপার নুরুজ্জামান বলেন, ‘যারা পুলিশ কে টাকা দেয় তারাই মানুষ। আমরা টাকা দিতে পারিনা বলে পুলিশ আমাদের কে মানুষই মনে করে না।’
পিরোজপুর থেকে ঢাকাগামী বিকাশ পরিবহনের যাত্রী সেলিনা আক্তার মঙ্গলবার বিকেলে বলেন, ‘সকালে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে বাস সিরিয়ালে আটকে আছে। বিকেল হয়ে গেলেও এখনও বাস ফেরিতে উঠতে পারেনি। কখন যে ঢাকার বাসায় পৌঁছাতে পারবো তা নিয়ে বড় চিন্তা হচ্ছে। ঘাটে নারী যাত্রী সেবায় কোনো ব্যবস্থাই নাই।’
তবে বিআইডব্লিইটিসি দৌলতদিয়া ঘাট ব্যাবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘন কুয়াশা। প্রতি বছরের মতো এবারও শীতে তীব্র কুয়াশায় ব্যাহত হচ্ছে নৌযান চলাচল। তবে কুয়াশার মধ্য দিয়ে ফেরি চালানোর কোনো প্রযুক্তি এখনও হাতে নেই। রাতে কুয়াশায় কিছুই দেখা যায় না নদীতে। তাই নিরাপত্তার কথা ভেবেই ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ৭টি রো রো, ২টি কে টাইপ, ১টি মিডিয়াম টাইপ ও ৬টি ইউটিলিটিসহ মোট ১৬টি ফেরি রয়েছে। যার মধ্যে বর্তমানে ১৫টি ফেরি চলাচল করছে। এদিকে যাত্রীবাহী বাস ও কাঁচামালবাহী ট্রাকগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দৌলতদিয়া ঘাটে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. শামীম হোসেন।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ