গোলাম আযম সরকার (রংপুর):
রংপুরের পীরগাছায় তিস্তা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কার ও বাঁধের আদলে বর্ধিত সড়ক নির্মাণ নিয়ে এলাকাবাসির মাঝে শংঙ্কা ও সংশয় বিরাজ করছে। পাউবো‘র কর্মকর্তাদের সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও নজরদারির অভাবে মাটি দিয়ে বাঁধটি সংস্কার ও বর্ধিত সড়ক নির্মাণ না করে বাঁধের গোঁড়া থেকে শ্যালোমেশিন দিয়ে ভূ-গর্ভস্ত বালু তুলে বাঁধটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে বর্ষা মৌসুমে ভূমি ধ্বস সৃষ্টি হলে বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার আশস্কা রয়েছে। এতে বসত বাড়ি, ফসলি জমি, বন্যা আশ্রয়ণ কেন্দ্র ও শিক্ষা নদী গর্ভে বিলীনসহ বিপর্যয়ের আশস্কা করছেন এলাকাবাসি।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিগত ’১০ সালে বাঁধের গোঁড়া থেকে শ্যালোমেশিন দিয়ে ভূ-গর্ভস্ত বালু তুলে বাঁধটি নির্মাণ করায় বন্যার সময় তিস্তার প্রবল স্রোতে সোয়া ৮ কিঃ মিঃ বাঁধের প্রায় আড়াই কিঃ মিঃ অংশসহ ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়নের ৩ টি গ্রামের ৫ শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি, অসংখ্য গাছপালা ও পাঁচ শ একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
একই পদ্ধতিতে এবারো ওই বাঁধটি পুনঃনির্মাণের জন্য সাহেবগঞ্জ বাজার থেকে লাটশালা ও খোদ্দারচরে বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানীর সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত বাঁধের আদলে সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজ চলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতোপূর্বে তিস্তানদীর ভাঙন রোধে উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের সাহেব বাজার থেকে লাটশালা ও খোর্দ্দার চর পর্যন্ত একটি বেড়ি বাঁধ নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করেন। সে সময় বরাদ্দ না থাকার অজুহাতে বেড়ি বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। বর্তমানে পাশর্^বর্তী গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের লাটশালা ও খোর্দ্দার চরে ২০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য পূর্বের অধিগ্রহণ কৃত জমি বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানীকে সড়ক নির্মাণের জন্য দেওয়া হয়। ফলে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানী নতুন সংযোগ সড়ক নির্মাণ ও পূর্বের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বেড়ি বাঁধের জন্য অধিগ্রহণ করা জমি প্রকল্পের সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানীর নিকট হস্থান্তর করে। একই সাথে পূর্বের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধটি সংস্কারের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। দায়িত্ব পেয়ে বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানী উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের বোল্ডারের মাথা থেকে তাম্বুলপুর ইউনিয়নের সাহেববাজার পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি বেড়ি বাঁধের আদলে সাহেব বাজার থেকে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার নতুন সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ করছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পাউবো‘র কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা ও নজরদারির না থাকায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটি বাঁধ নির্মাণ শুরু থেকে অনিয়মের আশ্রয় নেন এবং মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মান না করে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে বাঁধের গোঁড়া থেকে ভু-গর্ভস্ত বালু তুলে বাঁধ নির্মাণ করে আসছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চরছাওলা, চররহমত, ভুট্টার বাজার, জনতা বাজার ও চরতাম্বুলপুর এলাকায় প্রায় ৩০/৩৫ টি শ্যালোমেশিন দিয়ে বাঁধের গোড়া থেকে ভূ-গর্ভস্ত বালু তুলে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব তদারকির দায়িত্বে এলাকার কতিপয় ব্যক্তিকে দেখা গেছে। চরছাওলা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক (৪৮), ছোবেদ আলী (৬০), শরফ উদ্দিন (৭০), চর তাম্বুলপুর গ্রামের আঃ গফুর (৬০), ফজলু মিয়া (৫০) ও নজরুল ইসলামসহ আরো অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বহীনতা ও তদারকি ও নজরদারির অভাবে মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ না করে বাঁধের গোড়া থেকে শ্যালোমেশিন দিয়ে ভূ-গর্ভস্ত বালু তুলে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে প্রতিষ্ঠানটি এভাবে বাঁধের গোঁড়া থেকে শ্যালোমেশিন দিয়ে ভূ-গর্ভস্ত বালু তুলে বাঁধ নির্মাণ করে এলাকায় নতুন করে নদীর সৃষ্টি করছে। এলাকাবাসি এভাবে বালু তুলে বাঁধ নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে বলা হয়েছে, সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক, বন, রেললাইন, বসতভিটাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু ও মাটি উত্তোলন করা সম্পুন রুপে নিষিদ্ধ। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পুনঃনির্মাণ ও নতুন বাঁধের আদলে সংযোগ সড়ক নির্মাণাধীন কর্তৃপক্ষ সরকারি নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে কাজ করে চলছেন।
এ ব্যাপারে বাঁধ নির্মাণ কাজে নিয়োজিত বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানীর একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তাম্বুলপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মনু মিয়া বলেন, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর নীতিমালা অনুযায়ী কেউ অনুমতি ছাড়া ভূ-গর্ভস্ত থেকে বালু উত্তোলন করতে পারেন না। তিনি বলেন, চর ছাওলায় বালু উত্তোলনের জন্য কাউকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। তিনি নিজে গিয়ে নিষেধ করে এলেও বালু উত্তোলন করে বাঁধ নির্মাণ অব্যাহত রেখেছেন।
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাউজুল কবির জানান, ভূ-গর্ভস্ত বালুু তুলে বাঁধ সংস্কার ও নতুন বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে আমাকে কিছু জানানো হয়নি।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবার রহমান সাথে কথা বললে তিনি জানান, শ্যালোমেশিন দিয়ে বাঁধের গোড়া থেকে ভূ-গর্ভস্ত বালুু তুলে বাঁধ নির্মাণ করা যাবেনা। এতে বাঁধটি আবারো ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা থাকবে। তিনি আরো জানান,বেক্সিমকো পাওয়ার কোম্পানী বাঁধ ও জমি ব্যবহারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিকট আবেদন করেছেন । এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তের আগেই কেন তারা ভূ-গর্ভস্ত বালু দিয়ে বাঁধের আদলে সড়ক নির্মাণ করছে তা ক্ষতিয়ে দেখা হবে।