নিজস্ব প্রতিবেদক:
উত্তরের সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট জেলায় হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত দেড় সপ্তাহ ধরে ঘন কুয়াশার পাশাপাশি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় শীতে কাঁপছে জেলার কয়েক লাখ মানুষ। প্রতিনিয়ত শীতের তীব্রতা সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। গত শুক্র, শনি ও রোববার সূর্যের দেখা মেলেনি এ জেলায়।
ঘন কুয়াশার কারণে জেলার যানবাহন চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই শীতের তীব্রতা বাড়ছে। প্রচণ্ড শীতের কারণে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, কোল্ড এলার্জি ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগ দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে তিস্তা-ধরলা নদীর চরাঞ্চলের লোকজন। শীতের কারণে বিপাকে পড়েছে দিনমজুর শ্রেণির লোকজন। শীতের কারণে বাইরে কাজ করতে যেতে না পাওয়ায় তাদের ঘরে খাবার সংকট দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্ট করছে। জেলায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে না করতেই শীতের তীব্রতা দেখা দেয়ায় যেন শীত ‘মরার উপর খরার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লালমনিরহাটের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ৪ দিকে তিস্তা-ধরলা নদীতে পরিবেষ্টিত লালমনিরহাট জেলায় শীত মৌসুমে শীতের তীব্রতা অন্য যেকোনো জেলার চেয়ে বেশি। বিগত বছরের তুলনায় এবার অনেক আগে থেকেই শীত জেঁকে বসেছে। স্থলভাগের তুলনায এই শীতে চরাঞ্চলগুলোর মানুষের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি।
জনবসতিপূর্ণ এসব চরের প্রায় শতভাগ মানুষই শীত বস্ত্রহীন। এসব এলাকার মানুষের শীত নিবারণের অবলম্বন বলতে ধানের খড়কুটোর আগুনের তাপ। শীত নিবারণ হয় না বলে চরের ভূমিহীনরা ঘরের দুয়ারে খড়-গোবরের মুঠিয়া জ্বালিয়ে রাখেন সারারাত। রাতে দুই কাঁথায় তাদের শীত কাটে। ছেলেমেয়েদের পরনে গরম কাপড় নেই।
শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে ঘন কুয়াশায় বিদ্যালয় যাচ্ছে। বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। গবাদি শুকেও প্রচণ্ড শীতের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেক স্থানে গবাদি পশুর বাচ্চা মরে যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ সরওয়ার হায়াত খান জানান, জেলায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাই প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান মানুষের শীতবস্ত্র নিয়ে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
জেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ওই শুল্ক স্টেশন থেকে প্রতিদিন শত শত আমদানিকৃত কমলা, আপেল, আঙুর ও পাথরসহ ভারত থেকে আমদানিকৃত বিভিন্ন পণ্যে বহনকারী ট্রাকগুলো পড়েছে আরো দুর্বিপাকে। ঘন কুয়াশার কারণে গন্তব্য যেতে কয়েক ঘণ্টা সময় বেশি লাগছে।
এদিকে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে কন্ট্রোলরুম সূত্রে জানা গেছে, ঘন কুয়াশার কারণে লালমনিরহাট থেকে ছেড়ে যাওয়া ও ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আন্তনগর ও লোকালসহ সব ট্রেন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলাচল করছে। ঘন কুয়াশার কারণে লালমনি এক্সপ্রেস প্রায় প্রতিদনিই লালমনিরহাট ও কমলাপুর স্টেশন থেকে দেরিতে ছাড়ছে। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আগত যাত্রীরা চরম বিপাকে পড়েছে।
লালমনিরহাট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে সহকারী কমিশনার সুজাউদ্দৌলা জানান, জেলার ৪৫ টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় শীতবস্ত্র হিসেবে এ পর্যন্ত ৩২ হাজার কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। আরো কিছু শীতবস্ত্র এসেছে তা বিতরণ চলছে। লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. কাসেম আলী বলেন, শীতের প্রকোপ দেখা দেয়ায় ঠান্ডাজনিত রোগ দেখা দিয়েছে। আমরা সকলকে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করার পরামর্শ দিচ্ছি।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ