২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:৫৬

নিউ ইয়র্কে বিস্ফোরণে অভিযুক্ত বাংলাদেশের আকায়েদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

নিউ ইয়র্কের বাস টার্মিনালে আত্মঘাতী বিস্ফোরণের চেষ্টার সময় আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি যুবক আকায়েদ উল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে গ্র্যান্ড জুরি।
২৭ বছর বয়সী ওই তরুণের বিরুদ্ধে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তা; ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার; জনসমাগমস্থল ও পাবলিক পরিবহন ব্যবস্থায় সন্ত্রাসী হামলা ও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সম্পদের ক্ষতি করার চেষ্টাসহ ছয় দফা গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। সন্ত্রাসবাদের এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে বাকি জীবন তাকে কারাগারেই কাটবে।
বুধবার ম্যানহাটনের ফেডারেল কোর্টে গ্র্যান্ড জুরির সামনে আকায়েদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র পেশ করেন প্রসিকিউটররা। পরে গ্র্যান্ড জুরি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর পক্ষে মত দেয়। অভিযোগ গঠনের পর জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ডানা জে বয়েন্টে এবং নিউ ইয়র্ক সাদার্ন ডিস্ট্রিক্টের ইউএস অ্যাটর্নি জিয়োফ্রে এস বারমেন সাংবাদিকদের বিস্তারিত তথ্য দেন।
গত ১১ ডিসেম্বর সকালে অফিসগামী যাত্রীদের ব্যস্ততার মধ্যে টাইম স্কয়ার সাবওয়ে স্টেশন থেকে ম্যানহাটনের পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনালে যাওয়ার সংকীর্ণ ভূগর্ভস্থ পথে নিজের শরীরে বাঁধা ‘পাইপ বোমায়’ বিস্ফোরণ ঘটান আকায়েদ। বোমাটি ঠিকমত বিস্ফোরিত না হওয়ায় প্রাণে বেঁচে গেলেও গুরুতর আহত হন আকায়েদ। তার বিস্ফোরণে আহত হন তিন পুলিশ সদস্য। তাকে গ্রেপ্তারের পর নিউ ইয়র্ক পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসলামিক স্টেটের (আইএস) মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি হামলা চালানোর চেষ্টা করেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।
ওই ঘটনার পর ফেডারেল প্রসিকিউটররা আকায়েদের বিরুদ্ধে আদালতে লিখিত অভিযোগ উত্থাপন করেন। সেখানে বলা হয়, ২০১৪ সালে ইন্টারনেটে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের বিভিন্ন প্রচার দেখে উগ্রপন্থার দিকে ঝুঁকতে থাকেন আকায়েদ। আর তিনি হামলা করেন জেরুজালেম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ থেকে।
হামলার কিছুক্ষণ আগে আকায়েদ ফেইসবুকে এক পোস্ট দিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগপত্রে।
গত ১৩ ডিসেম্বর হাসপাতাল থেকেই ভিডিও কনফারেন্সে আকায়েদের বক্তব্য শোনেন ম্যানহাটনের ফেডারেল কোর্টের বিচারক ক্যাথারিন এইচ পারকার। বৃহস্পতিবার বিকেলে (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোর রাত) ফেডারেল জজ রিচার্ড জে সুলিভানের আদালতে ওই তরুণকে হাজির করার কথা রয়েছে।
চট্টগ্রামের আকায়েদ বড় হয়েছেন ঢাকার হাজারীবাগে। সাত বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর প্রথমে ট্যাক্সিক্যাব চালালেও পরে একটি আবাসন নির্মাতা কোম্পানিতে বিদ্যুৎ মিস্ত্রির কাজ নেন। ছয় মাস বয়সী সন্তান নিয়ে তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস থাকেন ঢাকায়। ঢাকার জিগাতলার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে গত ডিসেম্বরে আকায়েদের স্ত্রী এবং তার বাবা-মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাংলাদেশের পুলিশ।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম সে সময় বলেছিলেন, বাংলাদেশে আকায়েদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কোনো রেকর্ড নেই। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতারও তথ্য মেলেনি। “ তবে তার শ্বশুর-শাশুড়ি এবং স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যতটা বুঝতে পেরেছি, আমেরিকায় গিয়েই ইন্টারনেট থেকে সে র‌্যাডিক্যালাইজড হয়েছে; অর্থাৎ সেলফ র‌্যাডিক্যালাইজড।”
নিউ ইয়র্কে আত্মঘাতী হামলার চেষ্টার ঘটনায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি তরুণ আকায়েদ উল্লাহ তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান সংগঠক মুফতি জসীমউদ্দীন রাহমানীর বই পড়ার পরামর্শ দিতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। আকায়েদ সর্বশেষ দেশে এসেছিলেন গতবছর সেপ্টেম্বরে তার সন্তানের জন্মের সময়। তখন স্ত্রীকে তিনি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান সংগঠক মুফতি জসীমউদ্দীন রাহমানীর বই পড়ার পরামর্শ দিতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :জানুয়ারি ১১, ২০১৮ ৩:৫৮ অপরাহ্ণ