আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আজ বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্মানিক ডিলিট দেওয়ার কথা রয়েছে। নজরুল মঞ্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দীক্ষান্ত ভাষণও দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাকে ডিলিট দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হওয়া মামলাটি আদৌ গ্রহণযোগ্য কি না, বুধবারও তার ফয়সালা হয়নি।
জনস্বার্থে ওই মামলা করেছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য রঞ্জুগোপাল মুখোপাধ্যায়। মামলার আবেদনকারীর মূল বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সম্মানিক ডিলিট দেওয়া হলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ হবে। শুনানির জন্য মামলাটি এ দিন হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে উঠেছিল। আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত জানান, মামলাটি শুনানির জন্য গ্রহণ করা উচিত হবে না। তার যুক্তি, মামলাকারী অভিযোগ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও সিনেট স্বজনপোষণ করে মুখ্যমন্ত্রীকে ডিলিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এত বড় অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে, সেই সিন্ডিকেট বা সিনেটকে আবেদনকারী এই মামলায় যুক্তই করেননি।
এজি আদালতে আরও জানান, মুখ্যমন্ত্রীকে সম্মানিক ডিলিট দেওয়া হলে জনসাধারণের স্বার্থ কোনোভাবেই ক্ষুণ্ণ হয় না। এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থে দায়ের হয়েছে। সম্মানিক ডিলিট দেওয়ার পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেন এজি। তিনি জানান, কাকে সাম্মানিক ডিলিট দেওয়া হবে, সেই বিষয়ে সিন্ডিকেট সুপারিশ করে সিনেটের কাছে। সিনেট সেই সুপারিশের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে উপাচার্যের কাছে ডিলিট প্রাপকের নাম পাঠায়। উপাচার্য তাতে অনুমতি দেন। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।
সিন্ডিকেট বা সিনেটকে মামলায় যুক্ত করার প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেন আবেদনকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তার বক্তব্য, ডিলিট দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। সিন্ডিকেট ও সেনেট বিশ্ববিদ্যালয়েরই অঙ্গ। বিকাশবাবু আরও জানান, তার মক্কেল ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে তার মানসিক যোগ রয়েছে। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা গ্রহণের পীঠস্থান। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সব সময়েই জনস্বার্থ জড়িত।
কাকে ডিলিট দেওয়া হবে আর কাকে দেওয়া হবে না, সেটা আদালতের বিচার্যই হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌঁসুলি শক্তিনাথ মুখোপাধ্যায়। উদাহরণ দিয়ে ওই আইনজীবী জানান, ১৮৭৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন প্রিন্স অব ওয়েলসকে সম্মানিক ডিলিট দিয়েছিল। স্বাধীনতার আগে সম্মানিক ডিলিট দেওয়া হয় ক্রাউন অব জার্মানিকে। ডিলিট দেওয়া হয়েছিল রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকেও। ২০১০ সালে ভুটানের রাজাও ওই ডিলিট পান। ওই সব ব্যক্তি কেন ডিলিট পাবেন, তা বিচার করা কি আদালতের কাজ— প্রশ্ন তোলেন শক্তিনাথবাবু।
কাকে ডিলিট দেওয়া হবে বা কাকে দেওয়া হবে না, সেই ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় খেয়ালখুশিমতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না বলে মন্তব্য করেন বিকাশবাবু। তার বক্তব্য, এর আগে রবীন্দ্রনাথ, রাজশেখর বসু, সত্যজিৎ রায়-সহ যে-সব মনীষীকে বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানিক ডিলিট দিয়েছে, তারা প্রত্যেকেই নিজেদের কর্মস্থলে লব্ধপ্রতিষ্ঠ পুরুষ। সম্মানিক ডিলিট দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে বেছে নেওয়া হল কেন, তার কোনও ব্যাখ্যা সিন্ডিকেট বা সিনেটের কাছে নেই। সিদ্ধান্ত গ্রহণেরও তো একটি জোরালো কারণ থাকতে হবে।
এরই মধ্যে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন বন্ধ রাখা হবে না। তবে এই মামলার ফলাফলের ওপরে মুখ্যমন্ত্রীর ডিলিট থাকা বা না-থাকা নির্ভর করবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী শক্তিনাথবাবু আপত্তি জানিয়ে বলেন, এই বিষয়ে আদালতের কোনও পর্যবেক্ষণ করা উচিত হবে না। মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে এ দিন ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি শেষ হয়নি। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার গ্রহণযোগ্যতা সংক্রান্ত পরবর্তী শুনানি হবে। ডিলিট নিয়ে জনস্বার্থ মামলার আবেদনকারী রঞ্জুগোপালবাবুর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি এ দিন বলেন, ‘যিনি এই মামলা করেছেন, তার নিরপেক্ষতা সকলেরই জানা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে সম্মানিত হতে দেখলে ওদের ঈর্ষা হয়।’
দৈনিক দেশজনতা / আই সি