নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর যানজট কমানোর লক্ষ্যে এবার সড়ক পথের বদলে রেল ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়ে আগাতে চাইছে সরকার। পরিবহন বিশেষজ্ঞরাও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন। আরও আগে এই প্রকল্প নিয়ে আগানো উচিত ছিল বলেও মনে করেন তারা। শহরের চারপাশে বৃত্তাকার একটি রেললাইন নির্মাণের প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হয়েছিল ২০১৬ সালে। প্রকল্পটি এতদিন আটকে থাকলেও এখন এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সমীক্ষা যাচাইয়ের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। আর এই কাজ ফেব্রুয়ারিতেই শুরু করার আশায় তারা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী চারপাশে ৯১ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের আউটার সার্কুলার রুটের (বৃত্তাকার সড়ক) উপর নির্মিত হবে প্রায় ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়াল এলিভেটেড সার্কুলার রেলওয়ে। এই প্রকল্পটির প্রথম ধাপে রেলপথ নির্মাণের জন্য গত ২৭ ডিসেম্বর ২৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকার ‘সমীক্ষা প্রকল্প’ অনুমোদন দিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ঢাকার চারপাশে সার্কুলার রেল প্রকল্পের জন্য এ মাসেই পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হবে। আগামী মাসে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হবে।’
প্রতিদিন ঢাকায় শতাধিক নতুন গাড়ি বাড়তে থাকায় যানজট পরিস্থিতি দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে। জনসংখ্যার আধিক্যের এই নগরে তার পরও যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত যানবাহন নিশ্চিত করা যায়নি। আবার গণপরিবহন বলতে এখন পর্যন্ত কেবল বাসের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। কিন্তু সেগুলোতে মানসম্পন্ন সেবা না পাওয়ায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ নাগরিকরা।
বাসের বাইরে প্রথমবারের মতো গণপরিবহনে যুক্ত হতে যাচ্ছে মেট্রোরেল যেটি ২০২১ সালের মধ্যে পুরোপুরি চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে এটি একটি রুটে হচ্ছে। ফলে নগরীর এর একটি বড় অংশের মানুষই এর সুফল পাবে না। বিশ্বের জনবহুল নগরগুলোতে যাতায়াতের জন্য বাসের পাশাপাশি রেলের ওপর জোর দেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে নগর পরিকল্পনায় সরকারগুলো এতদিন রেলের বিষয়টি বিবেচনায় আনেনি।
তবে বর্তমান সরকার আন্তনগরের রেলের আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি নগর পরিবহনেও এর ব্যবহার বাড়াতে চাইছে। এ জন্য মেট্রোরেলের পাশাপাশি এই সার্কুলার রেল ও পাতাল রেলের প্রকল্প নিয়েও আগাচ্ছে সরকার।
এর মধ্যে সার্কুলার রেলটি করবে রেলপথ মন্ত্রণালয়। রেলের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘সার্কুলার রেল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঢাকার যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। কারণ, বাধাহীনভাবে যাত্রীরা এক অংশ থেকে অপর অংশে যাতায়াত করবে। আর এই রেল নগরের প্রান্ত সীমা ঘেঁষে হলেও স্টেশনে নেতে যাত্রীরা অন্য যানবাহনে চেপে গন্তব্যে যেতে পারবে। সে ক্ষেত্রেও এখনকার তুলনায় অনেক কম সময়ে যাতায়াত করবে তারা।’
রেলপত্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ধাপে সমীক্ষার কাজ শেষে হবে আট থেকে নয় মাসে। যদিও এক বছর ৯ মাস সমীক্ষার জন্য সময় বরাদ্দ আছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় চাইছে নির্ধারিত সময়ের আগেই সমীক্ষার কাজ শেষ করতে।
সমীক্ষা শেষে ঢাকার চারপাশে রেলপথ নির্মাণে ব্যয়ের হিসাব ও ডিজাইন দেয়া হবে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে। এরপর সমীক্ষা রিপোর্টের আলোকে রেলপথ নির্মাণের প্রস্তাব তৈরি করে একনেকে ডিপিপি পাঠাবে মন্ত্রণালয়। একনেক ডিপিপি অনুমোদন করলে এরপর শুরু হবে ঢাকার চারপাশের এলিভেটেড সার্কুলার রেলওয়ে নির্মাণের কাজ।
নির্মাণ কাজ শুরু হতে কেমন সময় লাগতে পারে জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আনোয়ারুল হক বলেন, ‘সমীক্ষা রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর আমরা তিন থেকে চার মাসের মধ্যে ডিপিপি (প্রকল্প পরিকল্পনা) তৈরি করে একনেকে জমা দেবো। একনেক আমাদের ডিপিপি অনুমোদন দিলে পিডি (প্রকল্প পরিচালক) নিয়োগ হবে। এরপর শুরু হবে নির্মাণ কাজ। এতে বছর দেড়েক সময় লাগতে পারে।’
ঢাকার যানজট নিরসনে ২০১৬ সালে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত মহাপরিকল্পনা ‘সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (আরএসটিপি)’ ঢাকাকে ঘিরে তিনটি বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণ প্রকল্প রয়েছে। ২০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা-বহির্ভূত ফ্লাইওভার প্রকল্প পালে হাওয়া পেলেও সার্কুলার রুট পরিকল্পনার মধ্যেই আটকে ছিল। তবে সম্প্রতি এতেও গতি লেগেছে। গণপরিহন বিশেষজ্ঞদের অভিমত, যানজট নিরসনে খুবই কার্যকর হবে সার্কুলার রুট। শহরের ভেতরে প্রবেশ না করেই যান চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামছুল হক বলেছেন, ‘বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা আরএসটিপিতেই রয়েছে। কিন্তু তা না করে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভার বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করা হচ্ছে। এতে যানজটের কারণ প্রাইভেটকারকে আরও উৎসাহিত করছে। ফ্লাইওভার বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর সার্কুলার রুট।’
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ