স্বাস্থ্য ডেস্ক:
জ্বর, ঠাণ্ডা, মাথা বা শরীরের ব্যথার জন্য সর্বাধিক ব্যবহৃত প্যারাসিটামল বা এই ধরনের ওষুধ গর্ভাবস্থায় সেবন করলে গর্ভে যদি মেয়ে-সন্তান থাকে তবে তার গর্ভধারণ ক্ষমতার উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবার্গের গবেষকরা পরীক্ষাগারে মানুষের জরায়ুর উপর গবেষণা চালিয়ে জানতে পারেন, এক সপ্তাহ পর্যন্ত প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষু্ধের সংস্পর্শে থাকলে তা প্রায় ৪০ শতাংশ ডিম্বাণু কোষ হারায়।
গবেষকদের বরাত দিয়ে দ্য ডেইলি মেইল জানায়, “এই প্রভাব যদি মায়ের গর্ভের থাকা অবস্থায় মেয়ে সন্তানের উপর পড়ে তবে অতি সাধারণ এই ওষুধের কারণে গর্ভের মেয়ে সন্তানটি জন্মাবে স্বাভাবিকের তুলনায় কম ডিম্বাণু নিয়ে। ফলে মেয়ে সন্তানের মা হওয়ার সময়সীমা হবে স্বাভাবিকের চাইতে কম, রজোঃবন্ধ হবে দ্রুত।”
এর কারণ সম্পর্কে গবেষকরা বলেন, “‘প্যারাসিটামল’ ও ‘আইবুপ্রোফেন’ দুধরনের ওষুধই ‘প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন ই টু’ হরমোনের উপর প্রভাব ফেলে। গর্ভের সন্তানের প্রজননতন্ত্র তৈরিতে এই হরমোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।”
ইউনিভার্সিটি অফ এডিনবার্গের প্রভাষক রিচার্ড শার্প বলেন, ‘আমাদের গবেষণাটি গর্ভাবস্থায় ‘প্যারাসিটামল’ ও ‘আইবুপ্রোফেন’ ধরনের ওষুধ সেবনের সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে। তবে মানুষের স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব কতটুকু এবং কী পরিমাণে সেবন করলে সেবনকারীর সন্তান ধারণের ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা এখনও আমরা জানতে পারিনি।”
গর্ভের ছেলে সন্তানও এই ওষুধের ক্ষতিকর প্রভাবে শিকার হতে পারে। সমস্যা হল, পুরুষ তার জীবনকালের প্রায় পুরোটাই শুক্রাণু তৈরি করতে পারে, তবে নারীর ডিম্বাণু উৎপাদন সীমাবদ্ধ। তাই প্রজননতন্ত্রের ক্ষতি নারীর ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় বেশি মারাত্বক।
লিভারপুলে অনুষ্ঠিত ‘ফার্টিলিটি ২০১৮’ শীর্ষক সম্মেলনে এই গবেষণা তুলে ধরা হয়। গবেষকরা এক সপ্তাহ ধরে গর্ভের সন্তানের অণ্ডকোষ ও জরায়ুর উপর ‘প্যারাসিটামল’ এবং ‘আইবুপ্রোফেন’ ধরনের ওষুধের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করেন। যেসব ‘জার্ম’ কোষ শুক্রাণু ও ডিম্বাণুতে পরিণত সেগুলোও হিসাবে ধরেন গবেষকরা।
জরায়ুতে ডিম্বাণু কোষের সংখ্যা কমতে দেখা গেছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। আর অণ্ডকোষে ‘জার্ম’ কোষ কমেছে প্রায় পাঁচ ভাগের একভাগ।
গবেষণাটি গর্ভবতী নারীদের প্যারাসিটামল ধরনের ওষুধ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছে। আর এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণার আহ্বান জানাচ্ছে, বলে প্রস্তাব করেন গবেষকরা।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ