নিজস্ব প্রতিবেদক:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কমেছে পিএইচডি শিক্ষার্থী। যেখানে প্রতিবছর এই শাখায় শিক্ষার্থী বাড়ার কথা ছিল যেখানে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে পিএইচডি শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বলা হয়ে থাকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক উন্নয়ন আর অগ্রগতি নির্ভর করে গবেষণার উপর।
বিভিন্ন অনুষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে যে ৫ জন পিএইচডি শিক্ষার্থী তার মধ্যে কলা অনুষদে ২ জন, বিজনেস স্টাডিস অনুষদে ১ জন, বিজ্ঞান অনুষদে ১ জন এবং লাইফ এন্ড আর্থ অনুষদে ১ জন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন অনুষদে কোনো পিএইডি শিক্ষার্থী নেই। এছাড়া আইন অনুষদে নেই কোনো এম.ফিল গবেষকও। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ইনস্টিটিউটে নেই কোনো গবেষক।
বিশ্ববিদ্যালয় কেন পিএইচডি গবেষক পাচ্ছে না জানতে চাইলে লাইফ এন্ড আর্থ সাইন্স অনুষতের ডিন অধ্যাপক জাকারিয়া মিয়া বলেন, এই সংখ্যাটা আস্তে আস্তে বাড়ার কথা কেন বাড়ছে না এটা আমি ঠিক বলতে পারছি না। তবে আমার কাছে প্রতি বছর কয়েকজন শিক্ষার্থী আসেন। এবার আমি কোনো শিক্ষার্থীকে গবেষক হিসেবে গ্রহণ করিনি। কারণ একজন পিএইচডি গবেষককে যেভাবে দেখভাল করা দরকার তা আমার হয়ে উঠবে না।’
পিএইচডি শিক্ষার্থী কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অধ্যাপক বলেন, পিএইচডি গবেষণা হলো এক ধরনের চাকুরী, যাতে গবেষকের নিজস্ব ডেক্স থাকবে, তিনি ক্লাস নিবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানী পাবেন। কিন্তু আমাদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এর কোনোটিই নেই। বিদেশে আমরা যেমন দেখি যে তারা অফার দেন পিএইচডি করার জন্য আমরা সেরকম কোনো অফার দিতে পারি না। এছাড়া প্রতিটি বিভাগের শিক্ষকদের মাঝে অন্ত:দ্বন্দ্ব থাকায় শিক্ষার্থীরা আসতে চান না। ফলে গবেষকেরা আকৃষ্ট হচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার বিষয়টি জানতে চাইলে জবি শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের মেহরাব আজাদ বলেন, প্রধানত দুটি কারণে পিএইচডি শিক্ষার্থী কম বলে মনে হয়। প্রথমত, যে সব শিক্ষকের অধীনে তারা গবেষণা করবেন তারা আসলে তাদের সঠিকভাবে সুপারভাইজ করতে পারেন না আর দ্বিতীয় কারণ একজন পিএইচডি গবেষককে যে ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয়া দরবকার তা দেয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে দিন দিন এ সংখ্যা কমছে।
এই শিক্ষাবর্ষে আইন অনুষদে কেন পিএইচডি গবেষক নেই জানতে চাইলে আইন অনুষদের ডিন সরকার আরী আক্কাস বলেন, ‘আমরা যোগ্য কোনো শিক্ষার্থী পাইনি বলে ভর্তি করাইনি। এছাড়া আমাদের অনুষদের আমিই একমাত্র অধ্যাপক হওয়র কারণে তাদের সুপারভাইস করা সম্ভব হয় না। এছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমরা তাদেরকে আর্থিকভাবে সাপোর্ট দিতে পারি না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ড. প্রিয়ব্রত পাল সিলেটে থাকায় তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বলেন, চলতি শিক্ষাবর্ষে পিএইচডি প্রোগ্রামে হয়তো কম ভর্তি হয়েছে। তবে কিছুদিনের মধ্যেই একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবার ভর্তির জন্য বলা হবে। এছাড়া ৯ জানুয়ারী একাডেমিক কাউন্সিলে ৩-৪ জনকে পিএইচডি প্রদান করা হবে। এতে নতুনরা উৎসাহীত হবে বলে মনে করি। আসলে এটা নির্ভর করে যে শিক্ষার্থী গবেষণা করবে এবং যিনি সুপারভাইজড করবেন তার উপর। এছাড়া বর্তমানে যারা এমফিল করছেন তাদেরকেও পরবর্তীতে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ দেয়া হবে। পিএইচডি প্রোগ্রামে কম শিক্ষার্থী কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যে কোয়ালিটির পিএইচডি শিক্ষার্থীর যোগ্যতা চাই তা অনেক বেশি কোয়ালিফিকেশনের। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি যোগ্যতা চাই আমরা। শিক্ষার্থীকে ৩ বছরের শিক্ষকতা, শিক্ষাজীবনে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ মার্ক পেলেই কেবল আবেদন করতে পারবে। তবে আশা করি সামনে শিক্ষাবর্ষে আরো বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হবে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ