উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি:
মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ছাড়িয়েছে। এসব রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে। কিন্তু ফিরে যেতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা ছুড়ে দিচ্ছেন নানান শর্ত। এতে শঙ্কা দেখা দিয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রমে। আগামী ২২ জানুয়ারী সাড়ে চার শত রোহিঙ্গাকে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। এদিকে রোহিঙ্গা বিরোধী সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, এটি তাদের শিখিয়ে দেয়া হচ্ছে। এক শ্রেণীর সিন্ডিকেট তাদের এসব কথা শিখিয়ে দেয়ার কাজ করছে। বিশেষ করে সরকারের এনজিও সংস্থাগুলোর দিকে নজরদারি বাড়াতে হবে। না হলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের মধ্যে গঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের কার্যক্রমে বিগ্ন ঘটতে পারে বলেও আশংকা করছেন তারা।
অন্যদিকে প্রথম ধাপে সাড়ে চার শত রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে মিয়ানমার। তারা সবাই হিন্দু সম্প্রদায়ের। কিন্তু তারাও মুসলিম রোহিঙ্গাদের মতো তাদের নাগরিকত্ব ও নানান শর্ত দিচ্ছে। তারা বলছেন, আমাদের মিয়ানমারের নাগরিকদের যে পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে ঠিক তেমনি আমাদেরকেও তাদের সেই কার্ড দিতে হবে। অন্যথায় আমরা ফিরে যেতে পারবো না। রোহিঙ্গা রীমা রানী দাশ বলেন, আমরা এসেছি সাড়ে চার মাস পার হতে চলেছে। এতোদিন পর হলেও আমরা নিজ দেশে ফেরার খবরে খুশি হলেও আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এবিষয়টি নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি। আমাদেরকে মংডুতে নিয়ে যেতে হবে। সেখানে আমাদের জমিসহ নানান কিছু রয়ে গেছে। আমাদের সব সেখানে রয়েছে। আমরা আবারও এগুলো ফিরে পেলে তাহলে আমরা চলে যাবো।
রোহিঙ্গা যুবক রমেন পাল জানান, আমাদের উপর যে অত্যাচার করা হয়েছে। এসবের সাথে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। না হলে আমরা ফিরে গেলে তারা আবারও আমাদের মা বোনের উপর নির্যাতন করার সাহস পাবে। আর আমাদের জমি জমা যাবতীয় আমরা যা হারিয়েছি সে সব মিয়ানমার সরকারকে আমাদের ফিরিয়ে দিতে হবে। বৃদ্ধ রোহিঙ্গা রক্ষিত পাল বলেন, আমাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর বাংলাদেশ সরকার যেভাবে আশ্রয় দিয়ে নিরাপত্তা দিয়ে রেখেছে সেভাবে মিয়ানমার সরকার যদি দেয় তাহলে আমরা ফিরে যেতে রাজি। আর আমাদের মিয়ানমারের নাগরিকদের মতো সেই লাল কার্ড দিতে হবে।
বালুখালী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা কামাল হোসেন জানান, আমাদের সব কিছু ফিরিয়ে দিতে হবে। আর আমাদের উপর কোন ধরণের নির্যাতন করতে পারবে না এরকম লিখিতভাবে বলতে হবে। তাহলে আমরা ফিরে যাবো। না হলে যাবো আবার নির্যাতন হবে আবার চলে আসতে হবে। সেটা আমরা আর চাইনা। আমরা ফিরে গেলে সবকিছু নিয়ে যাবো।
তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে জানতে চাইলে রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির নেতা মাহমুদুল হক চেধুুরী বলছেন, ১৯৯২ সালেও এরকম একটি ফাঁদ পেতেছিল মিয়ানমার। সেইবারও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার নামে প্রতারণা করেছে তারা। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। তারা প্রত্যাবাসনের নামে কোন ধরণের পায়তারা করতে না পারে মতো সরকারের আন্তর্জাতিকভাবে চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। না হলে মিয়ানমার ১৯৯২ সালের মতো আমার প্রতারণায় আশ্রয় নিবে। প্রথম ধাপে চার শত রোহিঙ্গাকে নিচ্ছে মিয়ানমার সে বিষয়ে চানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা প্রবেশ করেছে হাজার হাজার। এতেও ছয় মাসের বেশী সময় লেগেছে। চার শ‘ পাঁচ শ‘ এগুলো মিয়ানমারের লোক দেখানো বলে মনে করছি আমরা। সেই ১৯৯২ সালের মতো পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে সরকার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ করেছে। সকল রোহিঙ্গাকে ধাপে ধাপে ফেরত পাঠানো হবে। রোহিঙ্গারা যে নানান প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন এবিষয়ে সরকার কি ভাবছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চায় বাংলাদেশ। যেহেতু তারা কিছু শর্তের কথা বলছে সেগুলোকে নিয়ে আলোচনা করা হবে।
দৈনিক দেশজনতা /এন আর