২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:১৪

এবার আমরণ অনশনে যাচ্ছেন মাদ্রাসা শিক্ষকেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নিবন্ধন পাওয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকেরাও এবার আমরণ অনশনের মতো কঠিন কর্মসূচিতে যাচ্ছেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সপ্তম দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর আজ সোমবার এই ঘোষণা আসতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচির পর আমরণ অনশনের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এমপিওভুক্তির আশ্বাস নিয়ে ঘরে ফেরেন নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারীরা।
বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির মহাসচিব কাজী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, আজ সোমবার সমিতির নির্বাহী কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে আমরণ অনশনে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। রবিবার বেলা একটার দিকে সমিতির সভাপতি কাজী রুহুল আমিন চৌধুরীর নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের নতুন প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলীকে স্মারকলিপি দেন। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও উপস্থিত ছিলেন। সমিতির দপ্তর সম্পাদক ও প্রতিনিধিদলের সদস্য ইনতান বিন হাকিম বলেন, স্মারকলিপি দেয়ার সময় শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান। একই সঙ্গে আন্দোলন বন্ধ করে আমাদের বাড়ি যাওয়ার অনুরোধ করেছেন। তবে আমরা কোনো কথা দিয়ে আসিনি। তিনি আরো জানান, অবস্থান কর্মসূচিস্থলে এসে কর্তৃপক্ষ ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না। তাতে যদি মৃত্যু হয়, হোক। রবিবার অর্থমন্ত্রী বরাবরও তাঁরা স্মারকলিপি দিয়েছেন।
শনিবার সমিতির সভাপতি কাজী রুহল আমিন চৌধুরী বলেন, ১৯৯৪ সালে জারি হওয়া একটি পরিপত্রে রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের বেতন ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে বিগত সরকারগুলোর আমলে ধাপে ধাপে বেতন বাড়তে থাকে। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো বেতন বাড়েনি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের। তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি বর্তমান মহাজোট সরকার ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাইমারি স্কুল জাতীয়করণ করে। কিন্তু ইবতেদায়ি মাদ্রাসাতেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো সরকারি একই সিলেবাসে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
কাজী রুহল আমিন চৌধুরী বলেন, ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরাও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো সরকারের সব কাজে অংশগ্রহণ করে। অথচ মাস শেষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ২৫-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পায়। কিন্তু ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা তেমন কোনও বেতন ভাতা পান না। তবুও তারা শিক্ষকতা চালিয়ে যাচ্ছেন। মাত্র ১৫১৯টি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ২৫০০ টাকা, সহকারী শিক্ষক ২৩০০ টাকা ভাতা পান। বাকি মাদ্রাসা শিক্ষকরা এত বছর ধরে বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত। এটা অমানবিক এবং শিক্ষকদের অবমাননা ছাড়া কিছুই না।

রেজিস্টার্ড বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাকে জাতীয়করণের দাবিতে ১ জানুয়ারি থেকে মাদ্রাসাশিক্ষকেরা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। সারা দেশে নিবন্ধিত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ১৮ হাজার ১৯৪টি হলেও চালু আছে ১০ হাজারের মতো। এসব মাদ্রাসায় শিক্ষক আছেন প্রায় ৫০ হাজার। এর মধ্যে ১ হাজার ৫১৯টি মাদ্রাসার ৬ হাজার ৬৭৬ জন শিক্ষক সরকার থেকে কিছু ভাতা পান। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকেরা মাসে আড়াই হাজার টাকা এবং সহকারী শিক্ষকেরা পান ২ হাজার ৩০০ টাকা। অন্যরা সরকার থেকে কোনো বেতন-ভাতা পান না।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :জানুয়ারি ৮, ২০১৮ ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ