২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:২২

শিম চাষে স্বাবলম্বী তালতলীর শতাধিক কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বরগুনার তালতলী উপজেলার সওদাগর পাড়ায় শিম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন শতাধিক কৃষক। কার্তিক শিম, নলকুশি শিমসহ স্থানীয় জাতের শিম চাষ করে ভাগ্য ফিরেছে দরিদ্র জনপদের এই কৃষকদের। অল্প পুঁজিতে অধিক লাভে হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে। আর শিম চাষে সফলতা দেখে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে শিমের চাষাবাদ। তবে শিম চাষকে আরো সম্প্রসারিত করতে সরকারিভাবে সহযোগীতার দাবি স্থানীয় শিম চাষিদের।

সরেজমিনে বরগুনার তালতলী উপজেলার সওদাগর পাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, একের পর এক সবজি খেত। যে সকল খেতের অধিকাংশ খেতেই চোখে পড়বে শীতকালীন সবজি শিমের চাষ। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বছর দুইয়েক আগে সওদাগর পাড়ায় সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাত্র ১২০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ শুরু করেন স্থানীয় কৃষক মো. শামসুল হক পঞ্চায়েত। শামসুল হকের সফলতার পর তার দেখাদেখি গ্রামের আরো কৃষকরা শিম চাষে আগ্রহী হয়।

এ বছর স্থানীয় ১২ জন কৃষক মিলে জমি লিস নিয়ে সওদাগর পাড়ায় ২২ একর জমিতে শিম চাষাবাদ করেন। তবে সবাই আলাদা আলাদা সবজি বাগান করলেও উদ্যোগ নিয়েছেন সমন্বিত। সবাই এক সাথে সার ওষুধ দিলেও প্রত্যেকের খেতই আলাদা। প্রত্যেক কৃষকই ইতোমধ্যে যা বিক্রি করেছেন তা দিয়ে শিম চাষে ব্যবহৃত সার, ওষুধ, বীজ বপন ও রক্ষনাবেক্ষনসহ যে খরচ হয়েছে তাই ইতোমধ্যেই পুষিয়ে নিয়েছেন। আর এখনোই দেখতে শুরু করেছেন লাভের মুখ। প্রতিটি শিমের খেত থেকে এ বছর এক থেকে দেড় লাখ টাকা লাভবান হবেন তারা।

তালতলী উপজেলার শুধু সওদাগর পাড়াই নয় উপজেলার সর্বত্র শিম চাষ করেছেন এখানকার কৃষকরা। উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে কমপক্ষে শতাধিক কৃষক শিমচাষ করেছে বলে দাবি স্থানীয়দের। এছাড়াও জেলার আমতলী ও বেতাগীতে ব্যাপকভাবে শিম চাষাবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

স্থানীয় কৃষক শামসুল হক বলেন, প্রথমে আমি এই এলাকায় শিম চাষাবাদ শুরু করি। এবং যতটা আশা করি তার চেয়ে বেশি লাভবান হই। এরপর আমার দেখাদেখি অনেকেই শিম চাষ শুরু করেন। তারা এখন লাভের মুখ দেখছে। শীতকালীন যে কোনো সবজির চেয়ে শিম চাষ অনেক লাভজনক। এ বছর আমার সবজি খেতের পাশে আরো বেশ কিছু কৃষক আমার সাথে আলোচনা করে শিম চাষ করেছে। সবাই এখন লাভবান।

শিম চাষের বিষয়ে স্থানীয় কৃষক আবজাল, আবদুল কুদ্দুস, ইসমাইল ও ইব্রাহিম আকনসহ একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা সবাই এবার শিম চাষ করেছে এবং এ থেকে এখনই লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে। আশা করছে এ বছর সকল খরচ বাদ দিয়ে প্রতিটি খেত থেকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা করে আয় হবে। অল্প পুঁজিতে শিম চাষ করে অধিক লাভবান হওয়ায় ধান চাষের থেকেও শিম চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছে এখানকার কৃষকরা। নতুন করে শিম চাষ করে অনেকেই দেখছেন লাভের মুখ।

প্রান্তিক জনপদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিম চাষ হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকায় উৎপাদিত সবজি বাজারজাত করণে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। তাই কিছুটা ন্যায্য দাম থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। তাই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ সরকারি ভাবে শিম চাষীদের জন্য সহযোগীতার দাবি স্থানীয় কৃষকদের।

স্থানীয় কৃষক জয়নাল বলেন, শিম চাষ আমাদের ভাগ্য খুলে দিয়েছে। এখন সরকার যদি আমাগো সার, ওষুধ ও বীজ দিয়া একটু সহায়তা করতো হেলে মোরা আরো বেশি জমিতে শিম চাষ করতে পারতাম। সরকারের কাছে মোগো অনুরোধ সরকার যেন মোগো একটু দ্যাহে।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইনুর আযম খান বলেন, শিম চাষীদের জন্য আর্থিক কোনো সহায়তার ব্যবস্থা না করা গেলেও প্রতিনিয়ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করছে।

তিনি আরো বলেন, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাছে শুধু শিম চাষের কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও শীতকালীন সবজির উৎপাদন বাড়ছে ক্রমাগত। গত বছর জেলায় ৪,৭০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে ৫,১০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এ থেকেই অনুমান করা হচ্ছে এ বছর জেলায় শিম চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :জানুয়ারি ৭, ২০১৮ ২:০৪ অপরাহ্ণ