আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
কয়েক দশকের অভূতপূর্ব ঠান্ডায় ইতিমধ্যেই পুরু বরফের চাদরে ঢেকেছে আমেরিকার একাংশ। তুষারঝড়ে মারা গেছে ১৭ জন। এমন পরিস্থিতিতে সেই খানে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
এর মধ্যেই দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড়। তার জেরে সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস, বন্যায় দুর্গতি বাড়বে। তাল মিলিয়ে পারাপতন। এর ফলে দক্ষিণ-পূর্বের কোনো কোনো এলাকা মঙ্গল গ্রহের থেকেও বেশি শীতল হয়ে উঠবে।
গত কয়েকদিন ধরেই প্রচণ্ড ঠান্ডার কবলে আমেরিকার বিস্তীর্ণ অংশ। মেরু এলাকার শীতল বাতাস আমেরিকার উত্তরাংশের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নামিয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে চলছে তুষারপাত। তাপমাত্রার অধোগতি বজায় থাকবে চলতি সন্তাহে, এই পূর্বাভাস আগেই দেওয়া হয়েছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্ক। এই ঝড়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বম্ব সাইক্লোন’। সাউথ ক্যারোলিনা থেকে মেইন, এই ১৩টি রাজ্যে ঘূর্ণিঝড়ের দাপট হতে পারে বেশি। এর আঁচ টের পাওয়া যাচ্ছে বৃহস্পতিবার থেকে। জোরালো হাওয়া বইছে, সঙ্গে হচ্ছে তুষারপাত। আবহাওয়া অফিস বলছে, ৩-৬ ইঞ্চি বরফ পড়তে পারে ফিলাডেলফিয়ায়, ৪-৮ ইঞ্চি নিউ ইয়র্কে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হতে পারে বস্টনে, সেখানে এক ফুটের উপরে বরফপাতের সম্ভাবনা।
রাজ্যে রাজ্যে ঝড়ের আগে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কানেটিকাটের গভর্নর ড্যান মালোয় জানিয়েছেন, ছয় ইঞ্চি বরফ জমতে পারে। ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইতে পারে রাজ্যে। তিনি বলেছেন, যতটা সম্ভব বাড়িতে থাকতে হবে। বিশেষ করে মোটরবাইক নিয়ে রাস্তায় বেরোলে বিপদ। ভার্জিনিয়ার গভর্নর টেরি ম্যাকঅলিফ রাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করে দিয়েছেন। পূর্ব ভার্জিনিয়ায় একফুটের মতো বরফ জমতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিভিন্ন রাজ্যে প্রশাসন আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে।
ইতিমধ্যে জনজীবন একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে আমেরিকার রাজ্যে রাজ্যে। নিউ ইয়র্ক, বস্টন, শিকাগো, মিনিয়াপোলিসসহ বিভিন্ন এলাকায় স্কুল-কলেজ ও অফিস বন্ধ করে দিতে হয়েছে। যানবাহনের পরিষেবা বিঘিœত হচ্ছে। শুধু বৃহস্পতিবার ২৭০০ বিমান বাতিল করা হয়েছে। বোস্টন থেকে সব বিমানের ফ্লাইট বাতিল, নিউ ইয়র্ক থেকে ৯০ শতাংশ ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য। চলতি সপ্তাহে প্রবল শীতে আমেরিকায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিদ্যুতের জোগানে ঘাটতি পড়েছে। ভার্জিনিয়া , নর্থ ক্যারোলিনা, ফ্লোরিডায় হাজার হাজার বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই।
সোশ্যাল মিডিয়ার ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে, আমেরিকার অনেক অংশে প্রথমবার তুষারপাতের জন্য কিছুটা উচ্ছ্বাসও রয়েছে। ফ্লোরিডার টালাহাসে এলাকায় প্রায় এক ইঞ্চি মতো বরফ পড়েছে। দীর্ঘদিনের বাসিন্দারাই বলছেন, এ দৃশ্য তাঁরা কখনও দেখেননি। টালাহাসের ছবি ঘোরাফেরা করছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
আবহাওয়া অফিসের পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৮৯ সালে শেষবার মাপার মতো বরফ পড়েছিল এই এলাকায়। দক্ষিণ-পূর্ব আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে বরফপাতের অভিজ্ঞতা প্রথম বার। বিচিত্র প্রকৃতিমঙ্গলবার আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে তাপমাত্রা আলাস্কার থেকে কম ছিল। ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিলের তুলনায় আলাস্কার অ্যাংকরেজের তাপমাত্রা ছিল বেশি। সাধারণ ভাবে ফ্লোরিডার তাপমাত্রা আমেরিকার উত্তরাংশের তুলনায় বেশি থাকে। সে জন্য এখানে পর্যটকরা ভিড় করেন। কিন্ত্ত, মঙ্গলবার অ্যাংকরেজের তাপমাত্রা ছিল ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে ফ্লোরিডায় হয়েছে তুষারপাত!
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঠান্ডা এবং গরম, দুই ধরনের বাতাস মুখোমুখি হলে বায়ুচাপ দ্রুত কমতে থাকে। বাতাস ঘুরতে শুরু করে। উত্তর গোলার্ধে যা ঘোরে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে। ঠিক ঘূর্ণিঝড়ের মতোই। শর্ত হল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বায়ুচাপ একলন্তে ২৪ মিলিবার কমতে হবে। বুধ-বৃহস্পতিবার মার্কিন মুলুকে ঠিক তাই হয়েছে। বায়ুচাপ হঠাৎ এতটা কমে যাওয়ায় অর্থাৎ নিম্নচাপ তৈরি হওয়ায় ঠান্ডা বাতাস প্রবল গতিতে পূর্ব এবং দক্ষিণ উপকূলের দিকে ছুটে আসতে শুরু করেছে। বরফ পড়ছে সমানে। চলছে তুষারঝড়ও। আপাতত দিন দুয়েক এমনই চলবে।
সাধারণত, কানাডা লাগোয়া মিনেসোটা, দুই ডাকোটা, ইলিনয়ে শীতের দাপট বেশি থাকে। বম্ব-সাইক্লোনের টানে মেরু-বাতাস সমুদ্র উপকূলবর্তী নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সিকেও কাঁপিয়ে চলেছে ক্রমাগত। নিউ জার্সি, নিউ ইয়র্ক, কানেক্টিকাটে প্রবল তুষারপাতের আশঙ্কা। মাইনাস ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের অনুভূতি হতে পারে।
২৮ বছরে এই প্রথম বরফ পড়েছে সমুদ্র লাগোয়া ‘সানসাইন স্টেট’ ফ্লোরিডায়। দক্ষিণ ক্যারোলিনাতেও ২৮ বছরের রেকর্ডভাঙা ৫.৩ ইঞ্চির বরফ পড়েছে। বম্ব-সাইক্লোন একেবারে বিরল নয়। দিনকয়েক আগে নিউ ইংল্যান্ড একই ভাবে বিপাকে পড়েছিল। এ বার তল্লাট আরও বিস্তীর্ণ হয়েছে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ