কুমিল্লা প্রতিনিধি:
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে এবার অষ্টম শ্রেণি সমাপনী জেএসসি ও মাদ্রাসার জেডিসি পরীক্ষায় গ্রাম এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফলাফল শহরের তুলনায় অনেক বেশি খারাপ হয়েছে। শহরে পাসের হার ৯০ শতাংশ হলেও গ্রাম এলাকায় সেটি ৫০ শতাংশের নিচে। আবার একটি স্কুলে পাস করেনি একজনও। আর কুমিল্লায় এই ফল বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে গ্রাম এলাকায় গণিত ও ইংরেজি শিক্ষায় দুর্বলতাকে দায়ী করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। এই দুটি বিভাগেই বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। এবার জেএসসি ও জেডিসিতে সারাদেশ পাসের হার ১০ শতাংশ কমার পেছনে কুমিল্লার ফল বিপর্যয়ই সবচেয়ে বেশি দায়ী। এই বোর্ডে গতবারের তুলনায় পাসের হার কমেছে প্রায় ২৭ শতাংশ।
২০১৭ সালে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায়ও ফলাফলের দিক থেকে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড ছিল তলানিতে। এবার তা আরও নিচে নামল। সারা দেশে পাসের হার যেখানে ৮৩ শতাংশের কিছু বেশি, সেখানে কুমিল্লায় এই হার ৬২.৮৩। এমন ফলাফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানজুড়ে শিক্ষার্থীদের কান্নার রোল উঠেছে। সন্তানকে সান্তনা দিতে গিয়ে কেঁদেছেন মা, কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীর সঙ্গে কেঁদেছেন শিক্ষকও। বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নগরকেন্দ্রিক স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা অত খারাপ করেননি। কিন্তু জেলা সদরের বাইরে পাসের হার ৫০ শতাংশেরও কম।
গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কেন খারাপ ফল হয়েছে এমন প্রশ্নের কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শিক্ষাবোর্ডের সচিব আবদুস ছালাম জানান, শহরের স্কুলগুলোতে ভালো মানের শিক্ষক থাকায় এমন চিত্র তৈরি হয়েছে। এক স্কুলের শিক্ষকদের অন্য স্কুলে পরীক্ষার পরিদর্শনের দায়িত্ব দেয়াটাও ফল খারাপ হওয়ার একটি কারণ হতে পারে। জনাব ছালাম বলেন, ফল খারাপ হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। বোর্ডের কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হবে। ফল খারাপ হওয়ার কারণগুলো খতিয়ে দেখে তা সমাধানে কাজ করবে কুমিল্লা বোর্ড।
শিক্ষাবোর্ড সচিব বলেন, ‘বিদ্যালয় পরিদর্শক ছাড়াও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রয়েছেন। তারা তাদের কাজ কতটুকু করেছেন তারাই বলতে পারবেন। এছাড়াও গ্রামগুলোতে ইংরেজি বিষয়ের দক্ষ শিক্ষকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।’ বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, এ বছর ইংরেজি ও গণিতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ফেলের কারণে ফলাফলের এমন বিপর্যয়। ফলে এর প্রভাব মূল পাসের হারে গিয়ে পড়েছে। এছাড়া ইংরেজি ও গণিতের এই ফেলের হার বিভিন্ন উপজেলার স্কুলগুলোতেই বেশি। শহরের স্কুলগুলোতে পাসের হার ৯০ শতাংশ হলেও গ্রামের স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা ফেল করেছে।
শিক্ষকদের মতে, এ বছর ইংরেজির প্রশ্নপত্র এসএসসির আদলে করা হয়েছে। আর গণিতের প্রশ্নও অনেক কঠিন হয়েছিল। যার ফলে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার কমেছে। কেন বার বার এমন হচ্ছে? এর সমাধান কী? জানাতে চাইলে কুমিল্লার বিশিষ্ট শিক্ষাবিধ ও সাংবাদিক জহিরুল হক দুলাল বলেন, ‘আমরা কোচিং সেন্টারে ডুবে পড়েছি। আমাদের গ্রাম ও মফস্বলগুলোতে অভিজ্ঞ শিক্ষক ও শিক্ষিকার অভাব রয়েছে। বিশেষ করে ইংরেজি ও গণিত। ফলাফল বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে আমাদেরকে সর্বক্ষেত্রে শিক্ষারমান বাড়াতে হবে। অভিজ্ঞ শিক্ষক ও শিক্ষিকা দিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে। শিক্ষার্থীদেরকে কোচিং সেন্টারমুখী করানো যাবে না।’
ফলাফল বিপর্যয়ের বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক জাহাংগীর আলম বলেন, ‘ফলাফল বিপর্যয় নয়, যথাযথ হয়েছে। এখন নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা হচ্ছে। তবে ফলাফলে অন্য সমস্যা হলে তা দেখার দায়িত্ব বোর্ডের।’ ২০১৪ সালে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে জেএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৯৩.৭৫ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৮৯.৬৮ শতাংশ। এবার তা কমেছে আরও ২৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ কম। পাসের হারের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে জিপিএ ফাইভ। এ বছর সর্বোচ্চ জিপিএ পেয়েছে আট হাজার ৮৭৫ জন শিক্ষার্থী। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ১৮৬ জন। তারও আগের বছর ছিল ২০ হাজার ৭৪৭ জন।
উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। গতবছর শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৪৮ টি হলেও তা এ বছর কমে দাঁড়িয়েছে ৬১টিতে। পাঁচ বছর পর একজনও পাস করেনি এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খাতায় নাম লিখিয়েছে একটি স্কুল। সেটি হলো বুড়িচং উপজেলার জগতপুর হাই স্কুল।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি