নিজস্ব প্রতিবেদক:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য ইচ্ছুকদের কাছ থেকে আবেদন চেয়ে দুই মাস আগে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আবেদন করার সময় আছে আর মাত্র একদিন। অর্থাৎ আগামীকাল রোববার পর্যন্ত এ আবেদন করা যাবে। সূত্র জানায়, ৩০ অক্টোবর ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ আবেদন করা যাবে।
ইসি সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (বাকশাল), বাংলাদেশ আলোকিত পার্টি, বাংলাদেশ মঙ্গল পার্টি, বাংলাদেশ পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিপিডিপি), বাংলাদেশ সমাধান ঐক্য পার্টি, বাংলাদেশ কর্মসংস্থান আন্দোলন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামিক গাজী; বাংলাদেশ জনতা পার্টি; জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি; বাংলাদেশ জালালী পার্টি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনসহ (এনডিএম) বেশ কিছু আবেদন জমা পড়েছে।
এবার যথাযথভাবে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে শর্ত পূরণ হলেই কেবল নতুন দলের নিবন্ধন দেওয়া হবে। খতিয়ে দেখা হবে তাদের মাঠপর্যায়ের অফিসসহ সকল বিষয়। এক নেতা, এক দল- এমন কোনো রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেওয়া হবে না বলে ইতোমধ্যে সতর্ক করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদনের বিষয়ে ইসির সহকারী সচিব রৌশন আরা বেগম জানান, আমাদের কাছে নতুন দলের নিবন্ধন চেয়ে কয়েকটি আবেদন এসেছে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে কমিশন বৈঠকে নথি উপস্থাপন করা হবে।
আবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার আগে কেউ আবেদন করে থাকলে তা গ্রহণ করা হবে না। তাদেরকে পুনরায় নতুন কমিশনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন করতে হবে বলেও জানান তিনি। ইসির নিবন্ধন ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। নতুন নিবন্ধনের ক্ষেত্রে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, তিনটির মধ্যে একটি শর্ত পূরণ হলেই তারা নিবন্ধনের যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। শর্তগুলো হলো-
১) দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যেকোনো জাতীয় নির্বাচনের আগ্রহী দলটির যদি অন্তত একজন সংসদ সদস্য থাকে।
২) যেকোনো একটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী অংশ নেওয়া আসনগুলোয় মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ পায় এবং
৩) দলটির যদি একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ (২১টি) প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত দলিল থাকে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, তারা দলগুলোর সব ধরনের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী কোটার বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। নিবন্ধন শর্ত অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে প্রত্যেক দলকে এই কোটা পূরণ করতে হবে। অবশ্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ কয়েকটি দল তাদের কমিটিতে ১৫ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রয়েছে বলে কমিশনকে অবহিত করেছে। আর ২০২০ সালের মধ্যে কোটা পূরণের প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছে দল দুটি। তবে নিবন্ধিত অধিকাংশ দল সদুত্তর না দিয়ে কমিশনকে জানিয়েছে, তারা ২০২০ সালের মধ্যে এই শর্ত পূরণ করবে।
এদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই রাজনৈতিক দলগুলোর রাশ টেনে ধরছে কমিশন। এক নেতার এক দলের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে যাবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। মাঠ পর্যায়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) শর্ত দলগুলো পূরণ করছে কিনা তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। মূলত নিবন্ধিত দলগুলোর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যে সংখ্যক অফিস থাকার কথা, সেগুলো আদৌ আছে কিনা তার খোঁজ করতে মাঠে নামবে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারা। আর এতে অনেক দল নিবন্ধন ঝুঁকিতে পড়তে পারে, এমনকি নিবন্ধন হারাতেও পারে তারা। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ছাড়া সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলো তাদের শর্ত প্রতিপালন করছে কিনা তা জানাতে চিঠি দিয়েছে ইসি। কমিশনের দেওয়া নির্ধারিত তারিখের মধ্যে অর্ধেক দলই কোনো জবাব দেয়নি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ৫টি দল জবাব দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত সময় চেয়েছে। ১১টি দল কোনো উত্তর দেয়নি। ইসির জবাব আদৌ দিতে পারবে কি না বা কতদিন পর দেবে সে বিষয়েও কমিশনকে অবহিত করা হয়নি।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, জবাব দেয়ার জন্য যারা সময় চেয়েছে তাদেরকে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে এবং যারা কিছুই জানায়নি, তাদেরকে শোকজ নোটিস পাঠিনো হয়েছে। শোকজ নোটিসে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা কেন নেয়া হবে না তা ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে কমিশনকে জানাতে বলা হয়েছে। ইসির রোডম্যাপে বলা হয়েছে, নিবন্ধিত দলগুলো বিধি-বিধানের আলোকে পরিচালিত হচ্ছে কি না, খতিয়ে দেখার আইনানুগ দায় ইসির রয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, এর আগে দশম সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগ্রহী নতুন ৪৩টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ৪১টি দলই নির্বাচন কমিশনের কাছে নিজেদের ‘যোগ্যতার’প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়। মাত্র দুটি দল শর্ত অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে কার্যালয় ও কমিটি থাকার তথ্য দিয়েছিল। এরপর তাদের নিবন্ধন দেয় কমিশন। দল দুটি হলো- বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট।
সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রথা চালুর প্রথমবছর ১১৭টি দল ইসির নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে। সেখান থেকে শর্ত পূরণ হওয়ায় ৩৯টি দলকে নিবন্ধন দেয় এটিএম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন কমিশন। এর মধ্যে স্থায়ী সংশোধিত গঠনতন্ত্র দিতে না পারায় ২০০৯ সালে ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। আর আদালতের আদেশে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ হয়। এ ছাড়া ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) নামে নতুন একটি দলের নিবন্ধন দেয়। বর্তমানে ইসির নিবন্ধনে ৪০টি রাজনৈতিক দল রয়েছে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি