নিজস্ব প্রতিবেদক:
নওগাঁর ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র অঞ্চলে রান্না-খাবারসহ দৈনন্দিন প্রতিটি কাজের একমাত্র ভরসা পুকুর ও কুপের পানি। তাও ফুরিয়ে যায় চৈত্র-বৈশাখ মাসে। বছরের ৯ থেকে ১০ মাস এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। শুরু হয় পানির জন্য হাহাকার। শত বছরের প্রাচীন এই দুর্ভোগ লাঘবে আশার আলো ছড়াচ্ছে স্থানীয় সংসদ সদস্যর নেতৃত্বে সম্মিলিত উদ্যোগে স্থাপিত ‘কমিউনিটি পানি সরবরাহ প্রকল্প’। আবার পানি সরবরাহ এই প্রকল্পের আওতায় একজন মানুষ মাত্র ৪ টাকায় মাস জুড়ে অনায়াসে পাচ্ছে বিশুদ্ধ পানি।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, ভৌগলিক অবস্থান ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই এ সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। প্রতি বছরই প্রকপ হচ্ছে বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকট। তবে বরেন্দ্র এলাকার চিরচেনা দুঃসহ চিত্র কমিউনিটি পানি সরবরাহ প্রকল্পের কারণে পাল্টাতে শুরু করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, জেলার সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর উপজেলা ও পত্নীতলা-ধামইরহাট উপজেলার আংশিক এলাকা ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র এলাকা হিসাবে পরিচিতি। এসব এলাকার ভূ-গর্ভস্থ ২ থেকে ৩শ ফুট অভ্যন্তর পর্যন্ত রয়েছে কঠিন শিলা পাথরের স্তর। এর নিচে রয়েছে পানির স্তর। সাধারণ নলকূপ বসিয়ে বর্ষাকালে পানি পেলেও অন্য সময়ে এক ফোটা পানিও পড়ে না এসব নলকূপ থেকে। পানি সংগ্রহের জন্য যুদ্ধ করতে হয় এসব এলাকার মানুষদের। খরা মৌসুমে এ অঞ্চলের নারী-পুরুষদের পানি সংগ্রহে ছুটতে হতো গ্রাম থেকে প্রায় ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে গভীর নলকূপের দিকে। কোথাও বড় দিঘী অথবা পুকুরে যেতে হতো তাদের। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই পানি সংগ্রহে চলে যেত দিনের অর্ধবেলা। কখনো কখনো বাধ্য হয়ে এলাকার ডোবা-নালার পানি ব্যবহার করতে হতো তাদের। এতে করে পানিবাহিত নানা রোগের প্রকোপও ছিল বরেন্দ্র এলাকার যত্রতত্র। ঠিক সেই মুহূর্তে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে জেলার সাপাহারে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রথম স্থাপন করা হয় কমিউনিটি বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ প্রকল্প।
স্থানীয় সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদারের ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, এলজিইডি বিভাগ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের অর্থায়নে ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা ব্যয়ে গ্রামে সাবমারসিবল মোটরের সাহায্যে প্লাস্টিকের ট্যাংকি উঁচু স্থানে স্থাপন করে পাইপ লাইনে ট্যাপকল বসিয়ে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এমনকি পাইপ লাইনের মাধ্যমে নিজ নিজ উদ্যোগে বাড়ির উঠানেও পানি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই সরবরাহে শুধু বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে গ্রাহকদের। বাড়তি কোনো অর্থ পানির জন্য দিতে হচ্ছে না।
পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুয়ায়ী এই অর্থ নেওয়া হচ্ছে। এতে করে পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য মাসে ৩ থেকে ৪ টাকা করে খরচ পড়ছে। প্রাথমিক অবস্থায় জেলার সাপাহার উপজেলার ৫০টি গ্রামে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে। আরো ১০০টি প্রকল্প চালু করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে উদ্যোক্তরা জানিয়েছেন।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ