নিজস্ব প্রতিবেদক:
মিশর থেকে দুটি উড়োজাহাজ ভাড়া নেয়ার এক বছরের মাথায় ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গেছে। ঠিক করতে গিয়ে অনেকটা খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হওয়ার অবস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। উপায় না দেখে মেয়াদপূর্তির এক বছর আগেই ৩০৫ কোটি টাকা গচ্চা দিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বিমান দুটি। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাড়ায় নয় সরাসরি বিমান কিনে সেবার মান ঠিক রাখলে মুনাফা আরো বাড়বে।
আকাশে শান্তির নীড় এই শ্লোগানের বিমানকেই এখন বয়ে বেড়াতে হচ্ছে অশান্তির বোঝা। লাভের আশায় ২০১৪ সালে মিশরের ইজিপ্ট এয়ার থেকে ভাড়ায় আনা হয় বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর মডেলের দুটি উড়োজাহাজ। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি।
দেশে আসার ১১ মাসের মধ্যেই বিকল হয়ে যায় এর একটির ইঞ্জিন। ১৭ মাসের মাথায় বিকল হয় আরেকটির। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী উড়ুক বা না উডুক প্রতিমাসে এগুলোর ভাড়া বাবদ বিমানকে গুণতে হয়েছে ৫ কোটি টাকা। তাই উড়োজাহাজ দুটিকে চালু রাখতে ভাড়া আনা হয় ইঞ্জিনও। আর এসব কারণে বিমানের আর্থিক ক্ষতি হয় ৩০৫ কোটি টাকা। অবশ্য এ বোঝা আর বাড়াতে চায় না বিমান। তাই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগেই, উড়োজাহাজ দুটি ফেরত দিচ্ছে রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা। এ নিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির এক অনুসন্ধানি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে উড়োজাহাজ দুটি লিজে ভাড়া আনার কারণে য খরচ হয়েছে তার কাছাকাছি ব্যয়ে নতুন বিমান কেনা সম্ভব।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যস্থাপক শাকিল মেরাজ বলেছেন, দুঃখজনকভাবেই বিমান দুটির যে সার্ভিস দেওয়ার কথা ছিল, তা আমরা পাইনি। তাই মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার আগেই বিমান দুটো ফেরত দেবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক বাজরে মুদ্রা ওঠানামা করার কারণে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৩২ কোটি টাকা
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক পরিচালক বলেছেন, পুরাতন এয়ারগুলোকে পুনরায় সংস্কার করে নতুন করে নিতে হয়। উড়োজাহাজ ভাড়া নেয়ার সময় অনিয়মই বিমানের লাভ কম হওয়ার অন্যতম কারণের জন্যে ক্ষতির দিক বলে মনে করেন তিনি । বিমানকে লাভজনক করতে কার্গোব্যবসা বাড়ানো পাশাপাশি সেবার মান বাড়ানোর তাগিদ তার।
১৯ ডিসেম্বর বিমানের বার্ষিক সাধারণ সভায়ও আলোচনা হয়েছে বিষয়টি। এ সময় জানানো হয়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিমানের নিট মুনাফা ছিল ৪৭ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের চেয়ে যা ১৮৮ কোটি টাকা কম। আর এজন্য দুটি উড়োজাহাজ বসিয়ে রেখে ভাড়া গুনার বিষয়টিকে দেখানো হয়েছে বড় কারণ হিসেবে।
তবে বিমান কর্তৃপক্ষের দাবি, আগামী বছর বিমান আকাশপথে সরাসরি পণ্য পরিবহনে যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও অত্যাধুনিক নতুন উড়োজাহাজ সংযোজিত হলে বিমান বাংলাদেশ এয়ালাইন্সের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ