আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রস্তাব পাস হওয়ায় সংস্থাটিতে বরাদ্দ কমানোর ঘোষণা দিয়েছে ওয়াশিংটন। এর আগে গত ৬ ডিসেম্বর জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেইসঙ্গে তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের ঘোষণা দেন।
জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত নিক্কি হেলি বলেন, ‘আমেরিকানদের ভদ্রতার সুযোগ আর নিতে দেওয়া হবে না।’ মার্কিন সরকারের এই সিদ্ধান্তে হেলি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, নিজেদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে জাতিসংঘের দক্ষতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা তাদের অব্যাহত থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের মোট বাজেটের ২২ শতাংশ বহন করে যুক্তরাষ্ট্র, যা এককভাবে যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। গত ৬ ডিসেম্বর ট্রাম্পের ওই ঘোষণার পর পরই বিক্ষোভে নামেন ফিলিস্তিনিরা। যা এখনও অব্যাহত আছে। ফিলিস্তিনের গাজা, পশ্চিমতীর, রামাল্লা ও বেথেলহেমে বিক্ষোভে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় এ পর্যন্ত এক ডজনের বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েকশ।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভ হয়েছে। সেইসঙ্গে নিন্দার ঝড় উঠে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ ঘোষণার এক সপ্তাহ পর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বিশেষ বৈঠক ডাকে ওআইসি। সেখান থেকে পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।
এরপর মিসর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ট্রাম্পের স্বীকৃতির বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব আনে। কিন্তু ১৪টি রাষ্ট্র প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। এরপর এই প্রস্তাব যায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়।
এরপরই ক্ষেপে যায় ওয়াশিংটন। যদিও সাধারণ পরিষদে পাস হওয়া ওই প্রস্তাবের তেমন কোনো কার্যকারিতা নেই। কিন্তু জাতিসংঘে এ ধরনের একটি ভোটাভোটির আয়োজন করা হলো এবং বেশির ভাগ দেশ তাতে সমর্থন দিলো এটিই ওয়াশিংটনের জন্য লজ্জার।
কারণ প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদে উঠার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। ট্রাম্প মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে ভোট দিতে দিন। আমরা কোটি কোটি ডলার বাঁচাব। আমরা কাউকে ভয় করি না।’ এ ছাড়া নিক্কি হেলি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘কারা যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ভোট দেয় সেটা পর্যবেক্ষণ করবে ওয়াশিংটন।’
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এই হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও সাধারণ পরিষদের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১২৮টি দেশ প্রস্তাবটি সমর্থন করে। আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বলয়ে থাকা ৯টি দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। এর মধ্যে গুয়েতেমালা অন্যতম। কারণ দেশটির শুধু প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোটই দেয়নি, দুই দিন আগে দেশটির প্রেসিডেন্ট জিম্মি মোরালেস ট্রাম্পকে অনুসরণ করে দেশটির দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তরের ঘোষণা দেন।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ