নিজস্ব প্রতিবেদক:
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাস করে সীমানার চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করার কথা ছিল। কিন্তু এ বছর প্রায় শেষ হওয়ার পথে থাকলেও সীমানা নির্ধারণ শেষ করতে পারেনি নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছরের ১৬ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা রোডম্যাপ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন।
ইসির ঘোষিত রোডম্যাপ থেকে জানা যায়, চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণের জন্য আগের নীতিমালা পর্যালোচনা করে একটি নতুন নীতিমালা প্রস্তুত করা; আগস্টে নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণকল্পে জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেমস (জিআইএস) সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের আলোচনা পূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহণ; অক্টোবরে ৩০০ আসনের সীমানা পুননির্ধারণ করে খসড়া তালিকা প্রণয়ন; নভেম্বরে খসড়া তালিকা প্রকাশ করে দাবি-আপত্তি-সুপারিশ আহ্বান ও নভেম্বর-ডিসেম্বরে আপত্তির বিষয়ে অঞ্চলভিত্তিক শুনানি শেষ করে নিষ্পত্তিকরণ এবং ডিসেম্বরে ৩০০ আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ।
ইতোমধ্যে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম, ৪০টি রাজনৈতিক দল, নারী নেত্রী, পর্যবেক্ষক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের প্রতিনিধির সঙ্গে সংলাপেও লিখিত রোডম্যাপটি দিয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
ইসি কর্মকর্তা জানান, সীমানা নির্ধারণের জন্য নতুন আইন করবে; নাকি বিদ্যমান অধ্যাদেশেই সীমানা নির্ধারণ করবে এখনো তার সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়নি ইসি। একটা খসড়া নীতিমালা করা হয়েছে; জিআইএস সংশ্লিষ্টদের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ আর এগোয়নি। নির্বাচন কমিশনাররাই স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না-কীভাবে এগোবে?
নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম ডিসেম্বরের শুরুতে সীমানা পুনঃনির্ধারণ আইন সম্পর্কে বলেন, কনসালটেন্ট আইন সংস্কার কমিটির কাছে একটি খসড়া জমা দিয়েছে। এর জন্য আমরা একটি সাব-কমিটিও করেছি। যুগ্ম-সচিব (আইন) (যিনি ইতোমধ্যে অন্যত্র বদলি হয়েছেন) সেখানে আহ্বায়ক ছিলেন। নতুন যুগ্ম-সচিব না আসা পর্যন্ত এ কার্যক্রমের গতিটা কমে গেছে। যুগ্ম-সচিব (আইন) আসতে যদি দেরি হয়, তাহলে আমরা অন্য কাউকে হয়তো আহ্বায়কের দায়িত্ব দেব।
নতুন আইন করে, নতুনভাবে সীমানা নির্ধারণ করা কি সম্ভব? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনটা হতে অনেক সময় লাগবে। সীমানা নির্ধারণের একটা নির্ধারিত সময় আছে। সেই সময়টার মধ্যে নতুন আইন আমরা করে নিয়ে আসতে পারবো এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। খসড়াটাই আমরা এখন পর্যন্ত করতে পারিনি বা অ্যাপ্রুভ করার মতো তৈরি হয়নি। এ বিষয়ে আমরা এমন একটি আইন করতে চাই, যেটাতে অন্তত ২০ বছরের মধ্যে হাত দিতে না হয়। তাই সময় নিয়েই এটা করতে চাই।
সুতরাং আমি এখনি বলতে পারছি না যে নতুন আইনে হবে। হয়তো আমাদের এক্সিস্টিং ল-এর ওপরই ডিপেন্ড করতে হবে। অর্ডিন্যান্স যেটা আছে- যোগ করেন তিনি।
ডিসেম্বরের মধ্যে সব কাজ শেষ করার কথা লিখিতভাবে থাকলেও তা যথাসময়ে করতে না পারাকে ব্যর্থতাও বলছেন ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ইসি কর্মকর্তা জানান, খসড়া রোডম্যাপে সীমানা পুননির্ধারণের এ কাজ শেষ করার কথা ২০১৮ সালে এপ্রিলে লেখা ছিল। কিন্তু ভুল করে বা কেউ তা চেক না করায় করণিক ত্রুটিতে ডিসেম্বরে সীমানার গেজেট করার কথা রয়ে গেছে। এটা সংশোধন করা ছাড়া উপায় নেই। তা না হলে দলসহ সবাই ইসির এ লিখিত ডকুমেন্ট নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াবে।
তবে নির্বাচন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, রোডম্যাপের সীমানা নিয়ে টাইমলাইন ঠিক রয়েছে। হয়ত ডিসেম্বরের কাজ শেষ করার টার্গেট ছিল, কিন্তু তা যথাসময়ে শেষ করতে পারেনি। আরও কয়েক মাস লাগবে; এ ধরনের বিষয় ঘটে থাকে। রোডম্যাপ তো কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
তবে সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আইনী বিষয়টি নিষ্পত্তি হলেই সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ দ্রুত শেষ করা হবে। যদি নতুন আইন হয়, তাহলে সেটি দিয়ে করবো। আর যদি নতুন আইন না করা হয়, তাহলে যেটা আছে সেটি দিয়েই করবো।
২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এবার ১০ কোটি ৪৬ লাখ (কমবেশি) ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলে ইসির সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে জানা যায়।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ