নিজস্ব প্রতিবেদক:
নির্বাচন ইস্যুতে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। সংসদ ভেঙ্গে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আন্দোলন ও নির্বাচন’কে সামনে রেখে ‘আগামীতে কর্মসূচি দেয়া’র ইঙ্গিত দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাসহ দলের নেতা-কর্মীদের সর্বাত্মক প্রস্ততি নিতে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান বিএনপি প্রধান।
রোববার বিকেলে গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ উপলক্ষে মহানগর নাট্যমঞ্চের মিলনায়তন ও এর বহিরাঙ্গন ব্যানার-ফেষ্টুন ও জিয়াউর রহমানের প্রতিকৃতি দিয়ে বর্ণিলভাবে সাজানো হয়। সকালে অনুষ্ঠানস্থলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও ৭ বীর শ্রেষ্ঠের স্মরণে ৭টি কবুতর মুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধা দলের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন-২০১৭ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই সম্মেলনে ইশতিয়াক আজিজ উলফাত সভাপতি ও সাদেক আহমেদ খান সাধারণ সম্পাদক পুননির্বাচিত হন।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের পরিচালনায় সমাবেশে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি(এলডিপি) সভাপতি অলি আহমেদ, বিএনপির খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন এবং মুক্তিযোদ্ধা দলের মিজানুর রহমান খান, নজরুল ইসলাম খোকা, আবদুল মালেক খান, সামাদ মোল্লা প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, দেশে নির্বাচন হয় না। আগামী দিনে যে কর্মসূচি আসবে সেজন্য সকলকে প্রস্তত হতে হবে। আন্দোলন, সংগ্রাম ও নির্বাচন সবকিছুর জন্য প্রস্ততি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আবারো বিএনপির মাধ্যমে এদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে বলেও আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আহবান রেখে খালেদা জিয়া বলেন, আপনাদের বয়স হয়েছে, অভিজ্ঞতা আছে। আপনারা দেশ স্বাধীন করেছিলেন। সেই স্বাধীন দেশ আওয়ামী লীগের পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দি। বাংলাদেশকে তাদের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে হবে। এই শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে হলে জেগে উঠতে হবে, সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান রেখে তিনি বলেন, আসুন সকলে মিলে প্রতিবাদ করি, গণতন্দ্রের সংগ্রাম করি, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করি-এটাই হোক আমাদের শপথ।
নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, একাদশ নির্বাচনের আগেই সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। কারন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ভোট কেন্দ্রে জনগনকে আসতে দেয়া না, তারা ভোটারবিহীন নির্বাচন করে। হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু করতে হলে শেখ হাসিনাকে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগকে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।
সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে ক্ষমতাসীন দলের এই বক্তব্য খন্ডন করে খালেদা জিয়া বলেন, ক্ষমতাসীনরা কথায় কথায় সংবিধানের কথা বলে। সংবিধান তো তারাই লঙ্ঘন করেছে। কারণ ১৫৪ জন বিনা ভোটে এমপি হয়েছেন। আর বাকীরা ৫%ও ভোট পায় নাই। এই সংসদ কী সংসদ আছে নাকী। এই সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এই সংসদ নির্বাচিত নয়। এদের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না, হবে না। সেজন্য নিরপেক্ষ সরকার দরকার। যেহেতু তারাই নির্বাচিত সরকার নয়, তাহলে তারা কি করে দাবি করবে যে, নির্বাচিত সরকার না হলে সংবিধান লঙ্ঘন হচ্ছে। ক্ষমতাসীনরাই তো সংবিধান লঙ্ঘন করে ফেলেছে।
একব্যক্তির শাসন চলছে অভিযোগ করে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, একদলীয় বাকশালের দিকে দেশকে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। এখন এক ব্যক্তির শাসন চলছে। এক ব্যক্তি যা বলবেন সেটাই সবকিছু। তার নির্দেশই পৌঁছে দেয়া হচ্ছে সব জায়গায়। আওয়ামী লীগের লোকজন যত অপরাধই করুক না কেনো, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয় না, তাদের কোনো শাস্তি হয় না। আর বিএনপির লোকজন কোনো অপরাধ না করলেও একটা মামলা দিয়ে বাড়ি-ঘর থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। গুম করা হবে, খুন করা হবে। কারাগারগুলো বিএনপির কর্মী দিয়ে ভর্তি করা হয়েছে।
খালেদা জিয়া আরো অভিযোগ করে বলেন, ক্ষমতাসীনরা একতরফা সমাবেশ করছে। অন্যকোনো রাজনৈতিক দলকে তারা সমাবেশ করতে দেবে না, ঘরের ভেতরেও দেবে না। এমনকি বিরোধী দল যারা আছে তারা দলের প্রোগ্রাম করতে চাইলে, সেটাও করতে দেবে না। এর নাম কী গণতন্ত্র?”
সদ্য পদত্যাগকারী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ‘জোর করে’ সরকার পদত্যাগ করিয়ে জুডিশিয়াল ক্যু করেছে বলে অভিযোগ করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুরেন্দ্র কুমার সিনহা পদত্যাগ করতে চাননি। তাকে জোর করা হয়েছে, এমনভাবে তাকে ফোর্স করা হয়েছে তিনি বাধ্য হয়ে দিয়েছেন। এসবের সাথে সম্পূর্ণ সরকার জড়িত। এরা জুডিশিয়াল ক্যু করেছে। এরা তো অপরাধী। এই জুডিশিয়াল ক্যু‘র জন্য তাদের বিচার হওয়া উচিৎ।
জনপ্রশাসনে সাম্প্রতিক যুগ্ম সচিব পদ পদোন্নতির প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন,সচিবালয়ে কতজনকে রাতে অন্ধকারে প্রমোশন দেয়া হলো। সব দলীয় লোকজন। আর ভালো ভালো কর্মকর্তা যারা তাদেরকে কিন্তু ওএসডি করে রেখে দেয়া হয়েছে। ফলে এরকম করে থাকতে থাকতে এসময় তাদেরকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, পুলিশ সার্ভিসেও একই অবস্থা। সেখানে সিনিয়র-জুনিয়র কিছুই মানা হয় না। সেখানে চলছে একতরফাভাবে সব কিছু। দলীয় ও নিজের নিজের দেশের লোকজনকে ঢুকানো। ভালো অফিসারকে ভালো পোস্টিং দেয়া হয় না, তাদেরকে ওএসডি করে রাখা হয়। এভাবে একদিন তাদেরও বাড়ি চলে যেতে হয়।
আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা সেই চেতনা বিশ্বাস করলে দেশে একদলীয় শাসন প্রবর্তন করতো না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো বহুদলীয় গণতন্ত্র।সেজন্য সাধারণ মানুষ আজকে পরিবর্তন চায়। তারা দেশের ভালো কিছু দেখতে চায়।
দ্রব্যমূল্যে উধর্বগতিতে সাধারণ মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপারসন। একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল ‘লুটপাট’ করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে বলে অভিযোগও করেন তিনি।
আগামী দিনে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি কি করতে চায় এর একটি রূপরেখা ‘ভিশন-২০৩০’ কিছুটা মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ