আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মাতৃগর্ভে পরিণত হওয়ার আগেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ভ্রূণ। কোনোটির দাম ১৫ হাজার টাকা, আবার কোনোটির দাম ৮০ হাজার টাকা। জন্মের আগে এইভাবেই হাজার হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে কন্যাভ্রূণ। এনডিটিভির বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
আনন্দবাজার জানায়, হায়দারাবাদে সম্প্রতি এনডিটিভি-র চালানো একটি স্টিং অপারেশনে বেরিয়ে আসে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। খোঁজ পায় একটি বড় শিশুপাচার চক্রের। ওই স্টিং অপারেশনের পর শিশুপাচার চক্রের ৬জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
এনডিটিভির দাবি, হায়দারাবাদের এই শিশুপাচার চক্রের খবর তাদের কাছে ছিল আগেই। স্টিং অপারেশনের জন্য হায়দরাবাদে একটি অস্থায়ী অফিস খুলে ফেলে তারা। শিশুপাচার চক্রের এক ‘চাঁই’কে শিশু কেনার কথা জানিয়ে খবর দেওয়া হলে রবি নামে একজন টিভি চ্যানেলের অস্থায়ী অফিসে নিয়ে আসেন এক অন্তঃসত্ত্বাকে।
ওই নারীকে তার ‘দ্বিতীয় স্ত্রী’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে রবি জানান, তার গর্ভে কন্যাভ্রূণ রয়েছে। আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে পরীক্ষা করে সে কথা ডাক্তারই জানিয়েছেন।
তারপরই আর দেরি না করে শিশুটির জন্মের আগেই ঠিক হয়ে যায় তার ‘দাম’। রবি শিশুটির জন্য ৮০ হাজার টাকা দাবি করেন।
তিনি জানান, এর মধ্যে ৩০ হাজার টাকা নিজের জন্য রেখে বাকি ৫০ হাজার টাকা হাসপাতালের নার্সকে দেবেন।
এক সপ্তাহের মধ্যেই সদ্যোজাতকে ‘ক্রেতা’র হাতে তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন রবি। এও জানান, জন্মের পর শিশুটিকে যদি পছন্দ না হয় ‘ক্রেতা’র, তাহলে তার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। রবি বলেন, সেক্ষেত্রে তার বোনের তিনটি শিশুকন্যার মধ্যে একজনকে বেচে দেবেন।
কিন্তু কীভাবে এমন নিপুণ কৌশলে এই কাজটি সম্পন্ন হয়?
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, হায়দারাবাদ থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে কালওয়াকুর্তি হাসপাতালের সঙ্গে রবির একটা ‘বোঝাপড়া’ আছে। সেই মতো ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ থেকে শিশুর জন্ম, সবটাই করানো হবে ওই হাসপাতালে।
তাই যারা ‘ক্রেতা’ সেজে রবির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, বিশ্বাস অর্জন করতে সেই সাংবাদিককেও কালওয়াকুর্তি হাসপাতালে নিয়ে যান রবি।
৫০ হাজার টাকা যে নার্সের জন্য চেয়েছিলেন রবি, তার সঙ্গে আলাপও করিয়ে দেন। শিশু জন্মানোর পর সেই নার্সই শিশুটির ‘ডেথ’ সার্টিফিকেট দেন।
হাসপাতালের খাতায় শিশুটির নামের পাশে ‘মৃত’ লিখে দেন নার্স। তারপর শিশুটির মা আর তার পরিবারের কাছে শিশুকে ‘মৃত’ প্রমাণ করতে শিশুটিকে তড়িঘড়ি কবর দেওয়ার জন্য ব্যস্ততা দেখাতে শুরু করেন রবি। গর্ত খুঁড়ে ফেলে। তারপর সকলের নজরের আড়ালে সেই গর্তের ওপর পাথর চাপা দিয়ে দেন রবি। তারপর আরেক দফা নাটক! ‘শিশুটি মারা গেছে’ বলে চোখের পানি ফেলেন রবি। এরপর তিনি শিশুটিকে নিয়ে ‘ক্রেতা’র হাতে তুলে দেন।
গরিব মানুষদের কাছ থেকে কম টাকায় কন্যাভ্রূণ কিনে এভাবে তাদের অনেক বেশি টাকায় ‘ক্রেতা’দের কাছে বেচে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন রবি।
যেভাবে ধরা পড়লেন রবি
গত শুক্রবার কন্যাভ্রূণ বিক্রির জন্য হায়দারাবাদের একটি মন্দিরে টিভি চ্যানেলের ‘ক্রেতা’ সাংবাদিককে ডেকে পাঠান রবি। ঠিক সময়ে সেখানে পৌঁছে যান ‘ক্রেতা’ সাংবাদিক। সঙ্গে ছিল পুলিশ। তবে পুলিশ সাদা পোশাকে লুকিয়ে ছিল আশপাশে।
তার আগেই অবশ্য রবি এসে টাকা নিয়ে কোন জায়গায় তার সঙ্গে দেখা করতে হবে, তা জানিয়ে যান ‘ক্রেতা’ সাংবাদিককে। কিছুক্ষণ পরেই এক নারী সদ্যোজাতকে নিয়ে হাজির হন সেখানে। আর তখনই তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে রবিসহ ৫জন শিশু পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গসহ বাদুড়িয়া ছাড়াও উত্তর ২৪ পরগণার একাধিক নার্সিংহোমে জমজমাটভাবে চলছে এই শিশুপাচার চক্রের কাজকর্ম।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ