২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:৫৭

নেপালে যাচ্ছে বিনিশার মরদেহ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নেপালি নাগরিক বিনিশা শাহ’র মরদেহ তার নিজ দেশে পাঠাতে সব ধরনের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। লাশ বুঝে নিতে নেপাল থেকে ঢাকায় এসেছেন বিনিশার ভাই নরেন্দ্র শাহ। পুলিশ জানিয়েছে, বিনিশার ময়নাতদন্তসহ সকল আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। তার ভাই লাশ নিতে এসেছেন। যে কোনো সময়ই নেপালে পাঠানো হবে এই শিক্ষার্থীর মরদেহ।

রোববার দুপুরে ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান বলেন, ওই শিক্ষার্থীর ভাই নেপাল থেকে এসেছেন, আমরা তার কাছেই মরদেহ হস্তান্তর করবো। লাশ হস্তান্তরের সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়ে গেছে। এখন শুধু ফ্লাই করবে।

বিনিশা শাহকে গত ১৯ ডিসেম্বর সকালে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে হল থেকে বাইরে নিয়ে যান দায়িত্বরত শিক্ষক। এর প্রায় পনের মিনিট পর তাকে এনে আবার পরীক্ষা দিতে বসানো হয়। কিন্তু পরীক্ষা শেষ হওয়ার আধাঘণ্টা আগেই হল থেকে বেরিয়ে হোস্টেল কক্ষে আত্মহত্যা করেন বিনিশা।

শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের অনৈতিক টাকা দাবি, জরিমানার ফাঁদ ও অতিরিক্ত চাপে আত্মহত্যা করেছেন বিনিশা। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন, নেপালি এই শিক্ষার্থীর অতীতের পারফরমেন্স বিবেচনা করে সেদিন তার পরীক্ষা বাতিল না করে তাকে হলে নিয়ে গিয়ে বসানো হয়। কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বা জরিমানা করা হয়নি।

বিনিশার নেপালি সহপাঠী রোকসা বলেন, বিনিশাকে সেই ১৫ মিনিটে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কার সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল, আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে আমাদের দেখানো হয়নি। হঠাৎ করে ২০ ডিসেম্বর থেকে সকল সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে দেয়া হয়। আমরা দেখতে চাই সেই ১৫ মিনিটে কি ঘটেছিল।

ঘটনার দিন বিনিশার সঙ্গে একই হলে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন এমন এক শিক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন আনুমানিক ১০টা ৪০ মিনিটে নকলের অভিযোগে বিনিশাকে হল থেকে বাইরে নিয়ে যান। এর প্রায় ১৫ মিনিট পর বিনিশাকে পরীক্ষায় বসিয়ে প্রশ্নের দ্বিতীয় পার্ট লেখার কথা বলেন।

তিনি বলেন, প্রশ্নের দুটি পার্টে নির্ধারিত ৭০ নম্বর থেকে পাস করতে হলে ৬০ পেতে হবে। তাহলে ৩৫ নম্বরের উত্তর দিয়ে কখনোই পাস করা সম্ভব নয়।

ওই শিক্ষার্থী বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ সবসময়ই শিক্ষার্থীদের ভুল ধরার চেষ্টায় থাকেন। তাই সব শিক্ষার্থীই আতঙ্কে থাকেন। যে কোনো ভুলের জন্য নূন্যতম ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়। অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী হয়তো সেই ১৫ মিনিটে তাকে ডেকে নিয়ে জরিমানা দিয়ে পার পাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। আর সেই কারণেই হল থেকে বেরিয়ে আত্মহত্যা করেন বিনিশা।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজের চেয়ারম্যান রকিবুল হোসাইন বলেন, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের পর বিনিশাকে প্রিন্সিপালের রুমে নেয়া হয়েছিল। সেখানে তাকে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমাদের কলেজে বিনিশার মতো অনেক নেপালি শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের সবাই খুব মেধাবী। বিনিশার অতীত পারফরমেন্সের কথা মাথায় রেখেই তাকে পুনরায় পরীক্ষা দিতে বসানো হয়েছিল। কোন ধরনের জরিমানা করা হয়নি। হয়তো অপমানবোধ থেকে অথবা পারিবারিক কোনো কারণে সে আত্মহত্যা করতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সাময়িকভাবে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে।

বিনিশার লাশ নেপাল পাঠানোর প্রসঙ্গে রকিবুল বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলে বর্তমান নেপালী রাষ্ট্রদূত ডিলী আচার্য এবং বিনিশার পরিবারের লোকজনের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। তারপর নেপালে তার মরদেহ পাঠানো হবে।

বিনিশার ময়নাতদন্তকারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা মনে হয়েছে। তবে ভিসেরা ও ডিএনএ টেস্টের জন্য চুল, পায়ের মাসল, ইউরিনের স্যাম্পল পাঠানো হয়েছে। ওই রিপোর্টগুলো হাতে পেলে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেওয়া হবে।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :ডিসেম্বর ২৪, ২০১৭ ২:৫০ অপরাহ্ণ