আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
পরকীয়ার সমাধান করা হয় অভিনব কৌশলে। পরকীয়া বিষয়টি নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়ে গেছে চীন। অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া মানুষকে ফিরিয়ে আনতে হাসপাতালসহ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে দেশটিতে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের ব্যবসাও রমরমা।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, চীনে অবিশ্বস্ত স্বামী বা স্ত্রীকে পরকীয়া থেকে ফেরানোর এসব প্রতিষ্ঠানের পোশাকি নাম ‘মিসট্রেস ডিসপেলিং’। অর্থাৎ এই প্রক্রিয়ায় গোপন প্রেমিক-প্রেমিকাদের সরিয়ে দেওয়া হয়! এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে বেশ লাভজনক একটি ‘শিল্প’ গড়ে উঠেছে।
এমনই একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ‘ওয়েইকিং লাভ হসপিটাল’। সাংহাইয়ে এর খ্যাতি বেশ। সেখানে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মধ্যবয়সী এক নারী বিবিসিকে জানান নিজের অভিজ্ঞতার কথা। দাম্পত্য জীবনে সমস্যার মুখোমুখি হয়ে ‘ওয়েইকিং লাভ হসপিটালে’ এসেছিলেন তিনি। তাঁর স্বামী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। তখন দুজনের মধ্যে বেশ ঝগড়া হয়েছিল। কোনোভাবেই সন্দেহ মিটছিল না। শেষে হাসপাতালে আসা।
ওই মধ্যবয়সী নারীর ভাষায়, এই হাসপাতাল তাঁকে সুখী দাম্পত্য জীবনের সূত্রগুলো শিখিয়ে দিয়েছে, ‘আমি আগে সম্পর্কটিকে শুধু বিয়ে ভেবেছিলাম। এখানে আসার পর মনে হচ্ছে, এটি আরও বেশি কিছু। আমি বুঝতে শিখেছি যে, আমাদের এখনকার দাম্পত্য জীবনই সত্যিকারের জীবন।’
অনেক সপ্তাহ ধরে ওয়েইকিং হাসপাতালে বিয়ে সম্পর্কিত পরামর্শ নিয়েছেন এই নারী। তিনি জানান, সেখানকার পরামর্শ তাঁকে একজন দায়িত্বশীল স্ত্রী হয়ে ওঠার শিক্ষা দিয়েছে। আর এ জন্য তাঁকে গুনতে হয়েছে কয়েক হাজার ডলার। তবে এই হাসপাতালের সেবায় সন্তুষ্ট তিনি। কারণ ঘরে এখন শান্তি ফিরে এসেছে।
ওয়েইকিং হাসপাতালের সহপ্রতিষ্ঠাতা মিং লি এবং শু জিন। তাঁরা দুজনে মিলে ১৭ বছর ধরে এই হাসপাতাল চালাচ্ছেন। তাঁদের হাসপাতালে পরামর্শ নেওয়া ব্যক্তির সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মিং নারীদের শেখান কীভাবে স্বামীদের মনোযোগ ধরে রাখা যায়। শু জিন বলেন, ‘পরকীয়া থেকে ফেরানোর ৩৩টি পদ্ধতি আছে আমাদের। বৈবাহিক সম্পর্কে নানা ধরনের সমস্যা থাকে। সেখানে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজনের অন্য কারও সঙ্গে পরকীয়াও থাকতে পারে। এটি খুবই গুরুতর সমস্যা এবং পরিবারের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ ছাড়া আমাদের সমাজের স্থিতাবস্থা নষ্টের জন্যও এটি দায়ী।’
পরকীয়া থেকে ফেরানোর ৩৩টি পদ্ধতির মধ্যে ৪টি সম্পর্কে আলোচনা করেন শু জিন। এগুলোর সবই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া স্বামীকে ফিরিয়ে আনার পদ্ধতি। শু বলেন, এ ক্ষেত্রে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া স্বামীর কর্মস্থল পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়। এ ছাড়া মনঃকষ্টে থাকা স্ত্রীর সঙ্গে আরেকজনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে অবিশ্বস্ত স্বামীর সঙ্গে প্রেম করা নারীর কপালে আরেক পুরুষকে জুটিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও চলে।
এ তো গেল ৪টি পদ্ধতি। বাকি ২৯টি? শু জিন বলেন, ‘আরও আছে। কিন্তু সেগুলো আমাদের ব্যবসায়িক গোপন তথ্য। এগুলো তো সংবাদমাধ্যমের কাছে বলা যাবে না।’
চীনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে অবশ্য এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে অনেক নেতিবাচক খবর ছাপা হয়েছে। ওই সব খবরে বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠান ঘুষ, সহিংসতার হুমকিসহ বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। ওয়েইকিং হাসপাতালের দাবি, তারা অবৈধ কিছু করে না।
এমন আরেকটি প্রতিষ্ঠানের মালিক দাই পেং জুন। তাঁর প্রতিষ্ঠান মূলত বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থার মতো কাজ করে। দাই পেং বলেন, ‘পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া ব্যক্তিদের গোপন অন্তরঙ্গ দৃশ্যের ভিডিওচিত্র বা ছবি আমরা জোগাড় করি। এরপর সেগুলো তাঁদের সামনে হাজির করে আলোচনা চলে। এটিই চূড়ান্ত পদক্ষেপ।’ অর্থাৎ পরকীয়া করা নারীরা যে বিশ্বস্ত নয়, সেটি প্রমাণ করা হয়। এর ফলে পরকীয়ায় জড়ানো স্বামী বীতশ্রদ্ধ হয়ে তাঁর স্ত্রীর কাছে ফিরে আসেন। এ ছাড়া অর্থের প্রলোভন দেখিয়েও সমস্যার সমাধান করা হয় বলে জানান দাই পেং জুন।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সরকারি জরিপে দেখা গেছে, চীনে বর্তমান প্রেসিডেন্টের আমলে দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীদের ৯৫ শতাংশেরই এক বা একাধিক পরকীয়া আছে।
চীনে অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, পরকীয়া থেকে ফেরানোর এসব প্রতিষ্ঠান শিগগিরই সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে। লেখক ও সামাজিক বিশ্লেষক ঝ্যাং লিজিয়া বলেন, এমন পরিস্থিতির অন্যতম কারণ দেশটির বিবাহবিচ্ছেদ–সংক্রান্ত বর্তমান আইন। ২০১১ সাল থেকে কার্যকর নতুন আইন অনুযায়ী বিবাহবিচ্ছেদের পর সাবেক স্ত্রীকে সম্পদের ভাগ দিতে হচ্ছে না স্বামীদের।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ