এম. শরীফ হোসাইন, ভোলা :
ভোলা বিসিক শিল্প নগরীতে নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে খানা-খন্দে ভরা সড়ক আর জলাবদ্ধতা। জড়া-জীর্ণ নর্দমাগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাষণ হয় না। ওভার হেড ট্যাংকের মটর বিকল হয়ে পড়ায় দেখা দিয়েছে পানির অভাব। সবগুলো প্লটে নেই প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক পোল। এ ছাড়াও রয়েছে গ্যাস সংযোগের অভাব। এসব নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন বিসিক শিল্প নগরীতে থাকা উদ্যোক্তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গেলে এমন চিত্রই দেখা যায়।
সূত্রে জানা গেছে, ভোলা জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন আর শিল্পায়নের লক্ষে শহরের চরনোয়াবদ এলাকায় গড়ে তোলা হয় ভোলা বিসিকি শিল্প নগরী। ১৪ দশমিক ৪৫ একর জমিতে ১৯৯২ সালে শিল্প নগরী স্থাপন করে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)। ৯৩টি প্লটে ভাগ করে বরাদ্দযোগ্য ৭১টি প্লট বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য মালিকদের বরাদ্দ দেয়া হয়। শিল্প ইউনিট ৩৬টি আর উৎপাদনরত শিল্প ইউনিট ৬টি। এছাড়া বরাদ্দের অপেক্ষায় রয়েছে ২১টি প্লট।
আরো জানা গেছে, সেখানে অবস্থিত শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বিসিকের অভ্যন্তরে রাস্তা-ঘাট খানা-খন্দকে পরিণত হয়েছে। ফলে উৎপাদিত পণ্য পরিবহন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে। দীর্ঘদিন যাবত ওভার হেড ট্যাংকের মটরটি বিকল হয়ে পড়ে আছে। সব মিলিয়ে এখানকার কারখানাগুলোতে উৎপাদন চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। তাছাড়া বিদ্যুৎ আর গ্যাস সংযোগের অভাবে কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রমে বাঁধা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান প্লট বরাদ্দ নেয়া কয়েকজন উদ্যোক্তা।
এছাড়া অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান গ্যাস সংযোগ না থাকার কারণে পন্য উৎপাদন থেকে বিরত রয়েছে। নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গ্যাসের চাহিদা সরকার মেটাতে পারছে না। তাছাড়া অনেক পুরনো প্রতিষ্ঠানও গ্যাসের সংযোগ চাচ্ছে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার কারণে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান তাদের শতভাগ উৎপাদন করতে পারছে না। এরমধ্যে একটি সেমাই কারখানা ও একটি মুড়ির কারখানা গ্যাস সংকটের অভাবে পুরোপুরি চালু করতে পারেনি। প্রথম দিকে উৎপাদন কার্যক্রমে গেলেও বর্তমানে তারা উৎপাদন থেকে বিরত রয়েছে।
দীর্ঘদিন যাবত ভোলা বিসিক শিল্প নগরীতে কোন উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি, তাই বর্তমানে বিসিক শিল্প নগরীর যে ঐতিহ্য তা হারাতে বসেছে ভোলায়। উন্নয়নের ছোয়া না লাগার কারণে বাস্তবক্ষেত্রে বলা যায় মুখ থুবড়ে পড়তে বসেছে ভোলার বিসিক।
বিসিক শিল্প নগরী প্রতিষ্ঠার পর থেকে অভ্যন্তরের কোন রাস্তাই সংস্কার করা হয়নি। দীর্ঘদিন যাবত সংস্কার না করার কারণে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। এর মাত্রা আরো বেড়ে যায় যখন বর্ষা মৌসূম আসে। তখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠে। যেখানেই তাকানো হয় সেখানেই দেখা যায় খানা-খন্দকে ভরা। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবহনসহ মালিকপক্ষ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিল্প নগরীতে উৎপাদনে থাকা মালিকগণ।
এদিকে বিসিক কর্মকর্তাদের অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার কারণে নতুন বিনিয়োগে আকৃষ্ট হচ্ছে না উদ্যোক্তরা। ফলে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই। এমনই অভিযোগ তুলেছেন সেখানে থাকা একাধিক মালিকগণ।
সরদার ইউপিভিসি পাইপ কোম্পানীর সত্ত্বাধিকারী মোঃ হাসান বাবুল জানান, রাস্তা-ঘাটের করুন দশার কারণে তাদের মালামাল উৎপাদন ও বিপণন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়াও সবকটি প্লটের সাথে বৈদ্যুতিক পোল না থাকায় দুর থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে হচ্ছে। এতে করে গুনতে হচ্ছে অনেক অর্থ। অবিলম্বে সড়ক ও অন্যান্য সকল সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থাসহ বিসিক শিল্প নগরীর উন্নয়ন দাবী করেছেন তিনি।
একাধিক মালিকগণ বলেন, যদি দিনের পর দিন এভাবে সমস্যা চলতে থাকে, তাহলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সরকারের বিসিক শিল্প নগরী তৈরীর আসল উদ্দেশ্য ব্যহত হবে।
নানা সমস্যার কথা নিয়ে বিসিক শিল্প নগরীর মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও মেসার্স জননী পেট্রো কেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজ এর মালিক মোঃ রফিকুল ইসলাম নয়ন বলেন, আমরা অভিভাবকহীন হয়ে আছি দীর্ঘদিন যাবত। অভিযোগ শোনার মত কোন লোক নেই। এ জন্য তিনি দুষলেন বিসিক পরিচালনা পর্ষদকে। তিনি অভিযোগে আরো বলেন, সরকার প্রতিবছর আমাদের কাছ থেকে সার্ভিস চার্চ কেটে নেয়। কিন্তু তার বদৌলতে আমরা সরকারের কাছ থেকে ভালো মানের কোন সার্ভিস পাচ্ছিনা। এছাড়া তিনি জোড়ালোভাবে বিসিকে গ্যাস, পানি ও রাস্তা সংস্কারের দাবী জানান।
ভোলা বিসিক শিল্প নগরীর কর্মকর্তা (অ:দা:) কাজী তোফাজ্জল হক নানা অব্যবস্থাপনা-অনিয়ম আর অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, কিছুদিন পূর্বে আমরা মালিকপক্ষদের নিয়ে গ্যাস সংযোগের জন্য সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির সাথে মিটিং করেছি এবং পানির সমস্যার কথা জানিয়ে সংশিল্টদের কাছে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি পর্যায়ক্রমে সব সমস্যার সমাধান হবে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ