আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
জেরুসালেম ইস্যুতে বিরুদ্ধে থাকা দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা বন্ধের হুমকি দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে জেরুসালেমের নাম প্রত্যাহারের প্রস্তাবে আজ জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে ভোট অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। সোমবার মিসর জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে জেরুসালেম প্রশ্নে একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করে। ১৪টি সদস্য দেশ সে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেয়ায় প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যায়।
খসড়া প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের নাম সরাসরি না এলেও জেরুসালেম-সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত বাতিল করার প্রস্তাব ছিল এখানে। ট্রাম্প বলেছেন, “ঐসব দেশ আমাদের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা নিয়েছে, আবার নিরাপত্তা পরিষদে আমাদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে।” “তাদের এসব করতে দিন। আমরা টাকা সঞ্চয় করবো, আমরা কোনো পরোয়া করি না।” প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও রাষ্ট্রদূত হ্যালে তাদের পক্ষে ভোট দেয়ার জন্য কূটনীতি নয়, শক্তি প্রয়োগ করে অন্য দেশগুলোকে নিজেদের পক্ষে ভোট দেয়ানোর চেষ্টা করছে। ওয়াশিংটনের দৃষ্টিকোণ থেকে, জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা ও সেখানে দূতাবাস স্থানান্তর ইসরাইলের সার্বভৌম অধিকার। কিন্তু জাতিসঙ্ঘের অধিকাংশ সদস্য দেশ বিষয়টিকে সেরকম মনে করে না। স্বাভাবিকভাবেই সবচেয়ে কঠোর বিরোধিতা এসেছে ওয়াশিংটনের সমালোচকদের কাছ থেকে।
এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বন্ধুভাবাপন্ন অনেক দেশই এই হুমকিকে ফাঁকা বুলি দাবি করছে। একজন সিনিয়র কূটনীতিক বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন জাতিসঙ্ঘে ইসরাইলের পক্ষ নেয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদে পাস না হওয়া প্রস্তাব তোলা মিসরকে যুক্তরাষ্ট্র আর্থিক সহযোগিতা দেয়া বন্ধ করে দেবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। জাতিসঙ্ঘে সাধারণ সভায় উঠতে যাওয়া খসড়া প্রস্তাব মিসরের আবেদনের ওপর ভিত্তি করে নেয়া হয়েছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের নেতারা জেরুসালেম ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ায় বৃহস্পতিবারের সাধারণ সভায় যুক্তরাষ্ট্র যে কোণঠাসা হয়ে পড়বে তা নিশ্চিত। ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে ইসরায়েল পূর্ব জেরুসালেম দখল করে এটিকে তাদের অবিভক্ত রাজধানী ঘোষণা করে। আগে এটি জর্ডানের অধীনে ছিল। ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুসালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী বানাতে চায়। শান্তি আলোচনার পরবর্তী ধাপে এই বিষয় নিয়ে জেরুসালেমের ওপর ইসরায়েলের সার্বভৌশ অধিকার কখনোই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়নি। সব দেশের দূতাবাস তাই তেল আভিভেই স্থাপন করা হয়। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তার দেশের দূতাবাস জেরুসালেমে স্থানান্তর করার নির্দেশ দিয়েছেন।
সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের সভায় ১৪টি দেশ জেরুসালেম ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে অবস্থান নেয় জেরুসালেম ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের বহুবছরের নীতিগত অবস্থান পরিবর্তন করায় মি. ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আরব ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর অনুরোধে বৃহস্পতিবার জাতিসঙ্ঘ ১৯৩ সদস্যের একটি জরুরি সাধারণ সভা ডেকেছে। নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেয়ার পর ফিলিস্তিনিরা এই মিটিং ডাকে। জেরুসালেম সংক্রান্ত যে কোনো সিদ্ধান্ত “অকার্যকর ও বাতিল” করার দাবীতে এবং সব রাষ্ট্রকে “পবিত্র শহরে কূটনীতিক মিশন স্থাপন করা থেকে বিরত থাকার” আহ্বান জানায় ফিলিস্তিনিরা।
নিরাপত্তা পরিষদের বাকি ১৪ সদস্য দেশ প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নিলেও জাতিসংঘের যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি নিকি হ্যালে এটিকে “অপমান” হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তুরস্ক ও ইয়েমেনের উত্থাপিত প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বসতে যাওয়া জাতিসংঘের সাধারণ সভায় নিরাপত্তা পরিষদে ভেটোপ্রাপ্ত প্রস্তাবের খসড়া নিয়েই আলোচনা হবে। তবে এই প্রস্তাব মানা নিয়ে কোনো দেশের বাধ্যবাধকতা থাকবে না। জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনের স্থায়ী প্রতিনিধি রিয়াদ মানসুর বলেছেন এই প্রস্তাবের পক্ষে “সম্পূর্ণ সমর্থন” আশা করছেন তারা। কিন্তু মঙ্গলবার বেশ কয়েকটি সদস্য দেশকে চিঠির মাধ্যমে হ্যালে জানান “প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্র এই ভোটকে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব হিসেবে বিচার করবে।”
চিঠিতে আরো উল্লেখ করা আছে যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই ভোটের দিকে নজর রাখবেন। কোন কোন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ভোট দিচ্ছে সেটি যেন ট্রাম্পকে রিপোর্ট করা সেবিষয়েও নির্দেশ দেয়া হয়েছে হ্যালেকে। যেসব সাংবাদিকদের চিঠিটি দেখানো হয়েছে তারা এই তথ্য জানিয়েছেন। হ্যালে জানান প্রেসিডেন্টের ঘোষণার ফলে আলোচনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রভাবিত হবে না। জেরুসালেমের পবিত্র স্থাপনাগুলোর সম্মান রক্ষার বিষয়েও ট্রাম্প পূর্ণ সমর্থন দেবেন বলে জানান হ্যালে। ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলভুত চাভুসোগলু যুক্তরাষ্ট্রকে ভীতি প্রদর্শনের দায় দিয়েছেন। নিউইয়র্ক যাত্রা করার আগে আঙ্কারায় এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে চাভুসোগলু বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কোণঠাসা হয়ে এখন হুমকির পন্থা অবলম্বন করছে। যেকোনো সম্মানিত, সম্ভ্রমশালী দেশ এমন চাপের মুখে নতি স্বীকার করবে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি