নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর ভাটারাস্থ বেসরকারি পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজের ২৩তম ব্যাচের তৃতীয় বর্ষের নেপালি ছাত্রী বিনিশা শাহ’র আত্মহত্যাকে রহস্যজনক দাবি করে আন্দোলন করছেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা। এছাড়া কলেজ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে ১০ দফা দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূ্চি পালন করছেন তারা। পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজের মূল ফটকের সামনে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলছিল।
পরীক্ষা চলাকালীন বিনিশাকে কার কক্ষে ডেকে নেয়া হয়? ওই ১৫ মিনিট কেন বিনিশা পরীক্ষা হলের বাইরে ছিল? কেন শিক্ষার্থীদের ফেলের ফাঁদে ঠেলে দিয়ে অনৈতিকভাবে জরিমানা আদায় করা হয়? কথায় কথায় জরিমানা কেন এবং ফাইনাল প্রুফের পর অতিরিক্ত ৬ মাসের বেতন কেন দেবো? এসব প্রশ্ন সংবলিত দাবির প্ল্যাকার্ড হাতে আন্দোলন করছেন বিনাশার সহপাঠীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের অনৈতিক টাকা দাবি, জরিমানার ফাঁদ ও অতিরিক্ত চাপে আত্মহত্যা করেছেন বিনিশা। আত্মহত্যার কারণ ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সালমান নামে ডেন্টাল কলেজটির এক শিক্ষার্থী জানান, পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ফাইনাল অ্যাসেসমেন্টসহ সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ করেছে। ক্লাস বন্ধ করেছে। ছাত্র ও ছাত্রীদের হোস্টেল ত্যাগে বাধ্য করেছে। প্রতিষ্ঠানটির সিসি ক্যামেরা বন্ধ রেখেছে। এভাবে একটা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। আমাদের কোনো কারণও ব্যাখ্যা করা হয়নি। সোহান নামে অপর শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের ওপর অমানবিক চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। অনৈতিকভাবে জরিমানা আদায় ও ফেল করিয়ে জরিমানার ফাঁদ পেতেছে তারা। পাঁচ বছরের কোর্স ৭ বছরেও শেষ হচ্ছে না। এখনও আমি থার্ড ইয়ারে। মৌখিক পরীক্ষায় একবার পাশ করিতো লিখিত পরীক্ষায় ফেল করে দেয়, আরেকবার লিখিত পাশ তো মৌখিক পরীক্ষায় ফেল। ফের করলেই ৪০ থেকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা। আর উপরি হিসেবে ফের একটি বছরের টাকা আদায় করে। এসব নিয়ে কথা বললেই ফেল করার হুমকি, চাপ আসে। এমন চাপেই বিনিশার আত্মহত্যা বলে দাবি এ শিক্ষার্থীর। আত্মহত্যা করা নেপালি ছাত্রী বিনিশার এক সহপাঠী বলেন, আমাদের একা একা ডাকে কথা বলার জন্য। একা গেলেই নানা চাপ ও হুমকি দেয়। আমরা আর মানবো না। এবার এসবের হিসেব দিতে হবে। বিনিশার আত্মহত্যা স্বাভাবিক নয় দাবি করে ওই ছাত্রী বলেন, বিনিশার সঙ্গে এমন কোনো আচরণ করা হয়েছে যে কারণে আত্মহত্যায় বাধ্য হয়েছে সে। ঘটনার সুষ্টু তদন্ত করা হলে সঠিক কারণ বের হবে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে হল থেকে বেরিয়ে হোস্টেলে গিয়ে আত্মহত্যা করেন কলেজটির নেপালি শিক্ষার্থী বিনিশা শাহ। পরে তার স্বদেশী রুমমেট রোখসা কক্ষে ফিরে দেখেন রুম ভেতর থেকে বন্ধ। অনেক চেষ্টার পর বিকল্প চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখেন বিনিশা রশিতে ঝুলছেন। খবর পেয়ে ওই দিন দুপুর পৌনে ২টার দিকে ভাটারা থানাধীন পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজের হোস্টেল রুম থেকে বিনিশার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই দিন রাতেই বিনিশার মৃত্যুর ঘটনায় ভাটারা থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে পুলিশ। এদিকে, বিনিশার এ আত্মহত্যাকে রহস্যবৃত বলে একটি প্রতিবেদন ছেপেছে নেপালের অনলাইন সংবাদমাধ্যম দ্য হিমালয়া। এতে বলা হয়েছে, বিনিশার ভাই এ ঘটনার রহস্য জানতে বাংলাদেশে এসেছেন।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি