২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:২৫

জামালপুরে হলুদ রঙের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দিগন্ত জুড়ে

জামালপুর প্রতিবেদক:   :

জামালপুরে বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা বিধৌত অঞ্চলের কৃষকরা বন্যায় আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যাপকভাবে সরিষা আবাদ করেছেন। চলতি মওসুমে জেলা সদরসহ জেলার ৭টি উপজেলায় অন্তত ৬৫ হেক্টর জমিতে আগাম ও নাবী জাতের সরিসার আবাদ হয়েছে। এ অঞ্চলের ফসলের মাঠগুলোতে এখন সরিষার নয়া হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। মাঠের পর মাঠ জুড়ে বিরাজ করছে থোকা থোকা হলুদ ফুলের দৃষ্টিনন্দন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। একদিকে সরিষার ফুল আকৃষ্ট করছে মৌমাছিসহ প্রকৃতি প্রেমীদের। অন্যদিকে গোটা অঞ্চল মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে। মৌচাষিরা মধু আহরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

জামালপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জামালপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জামালপুরের সাতটি উপজেলায় এ বছর রবি মৌসুমে সাত হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। আর উৎপাদন হতে পারে আট হাজার ৭০০ মেট্রিকটন সরিষা। রোপা আমন কেটে বোরো ধান রোপণের আগে একটি বাড়তি অর্থকরি ফসল হিসেবে সরিষার আবাদ করে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। আবার ওইসব সরিষার ফুল থেকে পোষা মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহে লাভবান হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পেশাদার মৌয়ালরা।

মাঠের পর মাঠ সরিষার ফুলের হলুদ রং ব্রহ্মপুত্র-যমুনার নদ-নদীর আববাহিকার প্রকৃতি কন্যা যেন হলুদ শাড়ী পরিধান করেছে। এসব সরিষা ক্ষেতে মৌমাছির গুণ গুণ শব্দ যেন প্রকৃতি কন্যার বিয়ের সানাইয়ে সুর তুলেছে। উপজেলার গোয়ালেরচর ইউনিয়নের মালমারা বিল এলাকায় মাঠের পর মাঠ দৃষ্টিনন্দন মনোমুগ্ধকর থোকা থোকা হলুদ ফুলের চাদর বিছানো। সেই হলুদ ছুঁয়েছে দিগন্তরেখায়। চলতি মওসুমে সরিষার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

মালমারা গ্রামের কৃষক হাইদর আলী জানান, এক একর জমিতে সরিষা চাষ করতে খরচ হয় এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে প্রতি বিঘা ৬ থেকে ৭ মণ সরিষা উৎপাদন হয়। প্রতি মণ সরিষার বাজার মূল্য এক হাজার ৯শত থেকে ২ হাজার টাকা। অন্যান্য ফসল আবাদ করে প্রতি বিঘায় যে পরিমান লাভ হয় তার চেয়ে ওই পরিমান জমিতে সরিষা চাষ করে দ্বিগুণ লাভ করা যায়। এ অঞ্চলে সরিষার আবাদ বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে মওসুমি মৌচাষিদের তৎপরতা। সরিষা যেমন দিচ্ছে তেল, সাথে দিচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এছাড়া সরিষার ফুল ও পাতা ঝরে তৈরি হয় জৈবসার। ফলে কৃষকরা এখন ধান ও অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি সরিষা চাষের দিকে বেশী ঝুঁকে পড়েছে।

বকশীগঞ্জ উপজেলার নীলাখিয়া ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে কৃষক ছমিদুল হক জানান, তিনি ৫ একর জমিতে সরিষা আবাদ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। এক দশক ধরে সরিষা চাষ করে তিনি প্রতি মওসুমে পৌনে ২ থেকে ২ লাখ টাকা লাভ করেছেন। চলতি মওসুমে আরো বেশি লাভের আশা করছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
জামালপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর লাভজনক শস্যবিন্যাস পদ্ধতিতে একই জমিতে বছরে অধিকবার ফসল ফলানোর কৌশল উদ্ভাবন করেছেন। এসব উদ্ভাবনী কৌশলে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করানোর ফলে এখন বহু জমিতে বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষার আবাদ হচ্ছে। যে কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরিষার আবাদ অনেকটাই বেড়ে গেছে।

দৈনিক দেশজনতা /এন আর

প্রকাশ :ডিসেম্বর ২০, ২০১৭ ৯:০৮ অপরাহ্ণ