নিজস্ব প্রতিবেদক:
শীতের সকাল। সবজির পাইকারি বাজার বগুড়ার মহাস্থানহাট শীতকালীন নানা ধরনের সবজিতে ভরপুর। সেই সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতার আনাগোনায় মুখরিত হাট। ভোরে খেত থেকে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, আলু, গাজরসহ সবজি তুলে হাটে নিয়ে এসেছেন চাষিরা। এসব সবজি কিনতে আসা আড়তদার-ব্যাপারীদের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো। কিন্তু ছিল না চাষিদের প্রত্যাশিত দাম।
এ বছর বর্ষাজুড়ে সবজির দাম চড়া ছিল। তাই আগাম সবজি চাষে কৃষকের আগ্রহ বেশি ছিল। কিন্তু শীতের শুরুর দিকেই বেশির ভাগ সবজির দামে ধস নেমেছে। বেশি কমেছে মুলার দাম। প্রতি মণ মুলা বিক্রি করে কৃষক পাচ্ছেন গড়ে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। অথচ মুলার উৎপাদন, পরিবহন ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ মণপ্রতি খরচ হয় ৩২০ টাকার মতো। চাষিরা জানান, দুই সপ্তাহ আগেও এ হাটে প্রতি মণ মুলা ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে। আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দাম পড়ে গেছে।
১০ ডিসেম্বর মহাস্থানহাটে গেলে কৃষকেরা এ হিসাব দেন। তাঁরা জানান, আগাম আলু চাষেও তাঁদের লাভ হচ্ছে না। মহাস্থানহাটে প্রতিমণ ক্যারেজ, গ্র্যানুলা ও অ্যাসটরিক জাতের নতুন আলু গড়ে প্রতি মণ ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়। আলু চাষে বিঘাপ্রতি কৃষকের খরচ ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ফলন গড়ে ২০ থেকে ২২ মণ। প্রতি মণ আলু গড়ে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করে প্রতি বিঘায় গড়ে সাড়ে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের।
হাটে সবজি বিক্রি করতে যাওয়া চলনাগাতি গ্রামের কৃষক মাজেদুর রহমান বলেন, ১১ মণ মুলা এনে তিনি ১০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। এক মাস আগে একই হাটে তিনি মুলা বিক্রি করেন ২ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে।
হাটে আগাম জাতের নতুন আলু বিক্রি করতে যাওয়া মাস্তা গ্রামের ফয়েজুল ইসলাম বলেন, তিনি চার বিঘা জমিতে ক্যারেজ জাতের আগাম আলু চাষ করেছিলেন। জমির দাম ধরে বিঘাপ্রতি খরচ হয় গড়ে ২২ হাজার টাকা। বিঘায় ২২ মণ আলু হয়েছে। ৫৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি করে তিনি হাতে পেয়েছেন মাত্র ১১ হাজার টাকা।
দেশি পাকড়ি আলু বিক্রি করতে আসা মোকামতলার আফাজ উদ্দিন বলেন, গত বছর এ সময় প্রতি মণ আলু ২ হাজার ৪০০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে। এবার দাম একেবারেই কম।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক প্রতুল চন্দ্র সরকার বলেন, এ মৌসুমে বগুড়ায় ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের আলু চাষ হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টরে।
দামে ধস নেমেছে বেগুনের দামেও। ১০ ডিসেম্বর মহাস্থানহাটে প্রতি মণ গোল ও লম্বা বেগুন ৬০০ টাকা মণ দরে কেনাবেচা হয়। এক মাস আগে হাটে প্রতিমণ বেগুন গড়ে ২ হাজার টাকা মণ দরে কেনাবেচা হয়।
অবশ্য ফুলকপিতে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। এক সপ্তাহ আগে প্রতিটি গড়ে এক কেজি ওজনের প্রতি মণ ফুলকপির দাম ছিল ৪০০ টাকা। ১০ ডিসেম্বর সেই ফুলকপি প্রতি মণ ৮০০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়। এতে কিছুটা লাভ হচ্ছে বলে জানান কৃষকেরা।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ