৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ ইং | ১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:৩৬

রোহিঙ্গাদের আসা থামছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মিয়ানমারের রাখাইন থেকে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসা থামছে না। গত দুই দিনেও অন্তত আড়াই শ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে। ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা ঢল শুরুর পর এ পর্যন্ত সংখ্যাটি ৬ লাখ ৫৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা, বিশেষ করে শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত শুক্রবার জেনেভায় নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সংস্থার মুখপাত্র বাবর বালুচ বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষার সামগ্রিক পরিবেশের
অবনতিতে ইউএনএইচসিআর উদ্বিগ্ন। শরণার্থীদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ হচ্ছে শিশু, এরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। ঝুঁকির তালিকায় এরপর আছেন নারীরা। এ ছাড়া শরণার্থীদের ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধী কিংবা গুরুতর আহত কিংবা যথেষ্ট বৃদ্ধ, এঁরাও ঝুঁকিতে।’ বাবর বালুচ জানান, শীত সামনে রেখে আজ রোববার থেকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে গরম কাপড় বিলি শুরু হবে।

ইউএনএইচসিআর কর্মকর্তাদের পাশাপাশি কক্সবাজার থেকে আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধিরাও শীত সামনে রেখে রোহিঙ্গা শিশু ও বয়স্কদের ঝুঁকির কথা জানিয়েছেন। এ মুহূর্তে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের শীত নিবারণের জন্য প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড়ের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।

বাংলাদেশে আসা নতুন রোহিঙ্গারা বলছে, আশ্রয় আর খাবারের পাশাপাশি রাখাইনের উন্মুক্ত জায়গায় গিয়ে আটকে পড়ার ভয়ে তাদের পালিয়ে আসতে হচ্ছে। উত্তর রাখাইনের এখনকার পরিস্থিতি সম্পর্কে তারা বলে, রোহিঙ্গাদের সেখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। সেই সঙ্গে রয়েছে খাবারের অভাব। কারণ রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত এলাকাগুলো শূন্য হওয়ার পর হাটবাজার আর দোকানপাটও চালানোর মতো লোক নেই বললেই চলে। এরপর মংডুর মতো কোথাও কোথাও খাবারদাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের আটকের শিকার হচ্ছে রোহিঙ্গারা। কারণ রোহিঙ্গারা ওই এলাকাগুলোতে যাওয়ার পর তাদের এক জায়গায় আটকে নজরবন্দী করে ফেলছে নিরাপত্তা বাহিনীসহ মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ সফরের পর সমরক্ষেত্রে যৌন সহিংসতা বিষয়ে জানতে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত প্রমীলা প্যাটেন মিয়ানমার সফর করেছেন। তিনি গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির সঙ্গে তাঁর ইয়াঙ্গুনের দপ্তরে দেখা করেন। সু চির দপ্তরের ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, নারীর অধিকার বিকাশে ও সুরক্ষায় মিয়ানমারের জন্য জাতিসংঘের সহায়তার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তাঁদের দুজনের আলাপচারিতায় রাখাইন পরিস্থিতি এসেছে কি না, সেটা ফেসবুক পেজে উল্লেখ করা হয়নি।

সু চির দপ্তর এ বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও প্রসঙ্গটি আলোচনা থেকে বাদ যাওয়ার কথা নয়। কারণ, এক দিন আগেই জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রাখাইনের সাম্প্রতিক সহিংসতায় নারীর ওপর যৌন সহিংসতার বিষয়ে জোরালো বক্তব্য দেন প্রমীলা প্যাটেন। বাংলাদেশ সফরের সময় প্রমীলা প্যাটেন নারী ও কিশোরীদের ধর্ষণের যে অভিজ্ঞতা শুনেছেন, তা তুলে ধরে বলেন, ‘মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ যৌন সহিংসতাকে লক্ষ্য অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। জাতিগত হত্যার মতো রাজনৈতিক কৌশলকে জয়ী হতে দেওয়া যায় না। এরপর আর চুপ করে বসে থাকা যায় না।’

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিস্তারিত প্রক্রিয়া এখনো চূড়ান্ত না হলেও জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে প্রত্যাবাসন শুরুর কথা বলছেন মিয়ানমারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী উইন মিয়াট আয়ে। অং সান সু চি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ রাখাইনের পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজ অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাসিসট্যান্স, রিস্যাটেলমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ইউইএইচএআরডি) গঠন করেছেন। ওই কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকারী উইন মিয়াট আয়ে নেপিডোতে সাংবাদিকদের জানান, রোহিঙ্গাদের ফেরানোর পর শুরুতে তাদের আদি আবাসের কাছাকাছি রাখা হবে এবং সরকার তাদের জন্য জরুরি ত্রাণ সহায়তা নিশ্চিত করবে।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :ডিসেম্বর ১৭, ২০১৭ ১:৫৩ অপরাহ্ণ