নিজস্ব প্রতিবেদক:
দুধ বিক্রি করে স্বচ্ছলতা ফিরছে গাইবান্ধার সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মানুষের। ওইসব ইউনিয়নের অধিকাংশ বাড়িতেই পালন করা হয় গাভী। গাভীর দুধ বিক্রি করে সংসারে বাড়তি আয়ের যোগান হচ্ছে। ফলে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরছে তাদের। প্রায় ২ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয় ওইসব ইউনিয়নে।
সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাঘাটা উপজেলার সাঘাটা, হলদিয়া, ঘুড়িদহ, জুমারবাড়ী, ভরতখালি, কচুয়া ও ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি ও গজারিয়া ইউনিয়নের মানুষদের মধ্যে গাভী পালনে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান, অস্ট্রেলিয়ানসহ বিভিন্ন উন্নত প্রজাতির গাভী। কৃত্রিম প্রজনন, রোগ প্রতিরোধে টিকাদান, চিকিৎসা, গাভী পালনে কারিগরী পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হয়।
এসব গাভীর দুধ বিক্রির জন্য বিকেল তিনটা থেকেই প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন ব্যক্তি একত্র হন যমুনা নদী সংলগ্ন সাঘাটা উপজেলার থানা ভবনের সামনে। সেখানে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ লিটার দুধ বিক্রি হয় বলে জানান স্থানীয়রা। এছাড়া ওই দুই উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১৫শ লিটার দুধ বিক্রি হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সাঘাটা উপজেলার থানা ভবনের সামনে কয়েকজন দুধ বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় বাজারে চাহিদা মেটার পরও দুধ অবিক্রিত থাকছে। ফলে তারা অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কখনো কখনো দুধ অবিক্রিত থাকার ফলে সেগুলো নষ্ট হয়ে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন তারা। চরের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই তিনটি থেকে ছয়টি পর্যন্ত গাভী রয়েছে।
সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের ঘুড়িদহ গ্রামের আবদুল আজিজ (৩২) বলেন, আমার ৪টি গরুর মধ্যে ৩টি দুধ দেয়। সেই দুধ বিক্রি করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াসহ সংসার চালাতে পারছি। কিন্তু আগে অভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতো। একই ইউনিয়নের খামার পবনতাইড় গ্রামের মফিজল হক (৬৫) বলেন, আমার ৬টি গরুর মধ্যে বর্তমানে ২টি গাভীর ১৫ থেকে ১৮ লিটার দুধ হয়। কৃষি কাজের পাশাপাশি গাভীর দুধ বিক্রি করে ভালো মুনাফা পাচ্ছি।
একই উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের দীঘলকান্দি গ্রামের তোতা মিয়া (৪০) বলেন, আমার ৪টি গরুর মধ্যে ৩টি গরু প্রতিদিন ১০ কেজির বেশি দুধ দেয়। এসব গরুগুলোকে ভালো খাবার কিনে খাওয়াতে হয়। কখনো ক্রেতা কম থাকায় দুধ বিক্রি না হলে খুব অল্প দামেই বিক্রি করতে হয়।
এসকেএস ফাউন্ডেশনের রিকল প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর বাহারাম খান বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফ্যামের সার্বিক সহায়তায় এসকেএস ফাউন্ডেশনের রিকল প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রাণ গ্রুপ সাঘাটা উপজেলা সদরের পার্শ্ববর্তী ঝাড়াবর্ষা গ্রামে একটি চিলিং প্লান্ট (দুধ শীতলীকরণ কেন্দ্র) স্থাপন করছে। আগামী জুন-জুলাই মাসের মধ্যেই কেন্দ্রটি চালু হবে বলে আশা করছি। কেন্দ্রটি চালু হলে প্রায় ২ হাজার লিটার দুধ বিক্রয়ের নিশ্চয়তা এবং দুধের ন্যায্য মূল্য পাবেন দুধ উৎপাদনকারীরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুল লতিফ বলেন, ওইসব ইউনিয়নে যে পরিমাণ দুধ উৎপাদন হয় স্থানীয়ভাবে মানুষের চাহিদা মেটার পরও অনেক দুধ অবিক্রিত থাকে। প্রাণ গ্রুপ সাঘাটায় একটি চিলিং প্লান্ট (দুধ শীতলীকরণ কেন্দ্র) স্থাপন করছে। যা চালু হলে দুধের ন্যায্য মূল্য পাবেন খামারিরা।
দৈনিক দেশজনতা/এমএইচ /সময়: ১১.৪৫