আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
অস্ত্রোপচারের সময় রোগীদের শরীরের ভেতরে তার লিভারের ওপর খোদাই করা ব্রিটেনের এক বিখ্যাত সার্জেন সাইমন ব্রামহলের নামের দুটি আদ্যক্ষর ‘এসবি’ মিলেছে। আর তা নিয়ে তুমুল হইচই শুরু হয়েছে বার্মিংহামসহ গোটা ব্রিটেনে। মামলা দায়ের হয়েছে বিশিষ্ট শল্যচিকিৎসক ব্রামহলের বিরুদ্ধে।
বুধবার আদালতে প্রশ্ন উঠেছে, কোনও অনুমতি ছাড়া অপারেশন থিয়েটারে অচৈতন্য রোগীর শরীরে কি কেউ তার নামের আদ্যক্ষর খোদাই করে দিতে পারেন? তা কি দণ্ডনীয় অপরাধ নয়? মজাটা হল, দণ্ডনীয় কি না, হলে তার দণ্ড কী, তা নিয়ে ধন্দে পড়ে গিয়েছে আদালতও। যেহেতু এমন ঘটনা ব্রিটেন কেন, গোটা বিশ্বে ঘটেনি এর আগে। ফলে আইনের বইতেও লেখা নেই তার দণ্ড কী হতে পারে।
এমনটা কেন করলেন ব্রামহলের মতো একজন বিশিষ্ট শল্যচিকিৎসক?
ব্রিটিশ দৈনিক ‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানিয়েছে, ব্রামহল কবুল করেছেন, এটা তার একটা শখ। রোগীদের শরীরে অস্ত্রোপচারের সময় তিনি তার নামের আদ্যক্ষর দুটি লিখে রাখেন, কাজটা যে তারই করা, তার প্রমাণ হিসাবে।
কাজটা কী ভাবে করেছিলেন ব্রামহল?
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ জানাচ্ছে, ২০১৩ সালে ব্রিটেনের ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসের বার্মিংহামে কুইন এলিজাবেথ হসপিটালের লিভার, স্প্লিন ও প্যাংক্রিয়াসের বিশিষ্ট সার্জেন ব্রামহল এক পুরুষ ও এক মহিলার শরীরে লিভার প্রতিস্থাপনের ওই অস্ত্রোপচার করার সময় ব্যবহার করেছিলেন ইলেকট্রন বিম। লিভার প্রতিস্থাপনের সময় যাতে শরীরের ওই জায়গায় রক্ত না এসে পড়ে, সে জন্য ধমনীতে রক্ত সংবহনকে একটা জায়গায় কিছুক্ষণ থামিয়ে দিতে হয়। আর সেই কাজটা করা হয় ইলেকট্রন বিম দিয়ে। তাই লিভার প্রতিস্থাপনের সময় অপারেশন থিয়েটারে ইলেকট্রন বিমের ব্যবহার করতেই হয়। তবে কোনও শল্যচিকিৎসক এমন কিছু করলে তা শরীরের পক্ষে খুব একটা ক্ষতিকর হয় না। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই দাগ (মার্ক) আবছা হতে হতে একেবারেই মুছে যায়।
৫৩ বছর বয়সী চিকিৎসক ব্রামহল গত ১২ বছর ধরে যথেষ্টই সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন কুইন এলিজাবেথ হসপিটালে। ওই হাসপাতালে ডাক্তারির পোস্টডক্টরাল ছাত্রদের ক্লাসও নিয়েছেন তিনি দীর্ঘ দিন। একটি ভেঙে পড়া বিমানের গুরুতর আহত দুই পাইলটের অক্ষত লিভার অন্য একজনের শরীরে নিখুঁতভাবে প্রতিস্থাপন করে ২০১০ সালে খবরের শিরোনামে চলে এসেছিলেন ব্রামহল।
ঘটনাটা জানাজানি হল কীভাবে?
সেই ব্রামহলের নিজের নামের আদ্যক্ষর খোদাই করার ‘কীর্তি’টা কেউ হয়তো কোনও দিন জানতেই পারতেন না, যদি না ২০১৩ সালে এক রোগিনীর শরীরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার ব্যর্থ হত। ওই প্রতিস্থাপনের পর কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় রোগিনীর। তখন অন্য শল্যচিকিৎসকরা তার লিভার পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখেন, তার ওপর ব্রামহলের নামের দুটি আদ্যক্ষর ‘এসবি’-এর হদিস পান।
এরপরেই কুইন এলিজাবেথ হসপিটাল থেকে বহিষ্কার হন ব্রামহল। তবে তার অতীতের সুনামের উল্লেখ করে অনেক রোগী ব্রামহলকে কাজে ফের বহাল করার জন্য অনুরোধ জানান কুইন এলিজাবেথ হসপিটাল কর্তৃপক্ষকে। তার ভিত্তিতে ব্রামহলকে ২০১৪ সালে কাজে পুনর্বহাল করা হয় ওই হাসপাতালে। কিন্তু পুনর্বহালের কিছু দিনের মধ্যেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আর কাজ না করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন ব্রামহল। ওই সময় বিবিসি-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রামহল কবুল করেন, ‘আমার বড় ভুল হয়ে গিয়েছে।’
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ