কায়সার হামিদ মানিক,উখিয়া:
উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের দারিদ্রতা অজ্ঞতা ও সরলতার সুযোগ নিয়ে সংঘবদ্ধ পাচারকারীচক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন প্রলোভনেআকৃষ্ট করে এনজিও কর্মী পরিচয় দিয়ে শিশুদের লালন-পালন, যুবতীদের বিয়ের নামে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাচার করা হচ্ছে।
পাচারকারীরা মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিলেও গন্তব্যস্থল কোথায় পাচারচক্রের খপ্পরে পড়া রোহিঙ্গারা সে ব্যাপারে মোটেও নিশ্চিত নয়।
গত ১২ ডিসেম্বর এনজিও কর্মী পরিচয়ে শিশু পাচারকালে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা উদ্ধার করে ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয় ৮ বছরের এক রোহিঙ্গা শিশু কন্যাকে। তারা বলছে, সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চেকপোষ্টে যাত্রীবাহী গাড়ীতে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় নয় শতাধিক রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ, শিশুকে উদ্ধার করে ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দিক (৬০) জানান, উখিয়া-টেকনাফের শরনার্থী ক্যাম্প কেন্দ্রিক গড়ে উঠা প্রায় অর্ধশতাধিক পাচারকারীচক্রের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট প্রশাসনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে মানবপাচার করছে। এসব পাচারকারীর টার্গেট অবিবাহিত রোহিঙ্গা তরুণী ও শিশু। বর্তমানে ব্যাপকহারে রোহিঙ্গা বসবাসের সুযোগে তাদের তৎপরতা আরও বেড়েছে।
থাইংখালী হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এ ব্লকের মাঝি হামিদ হোসেন জানান, রাজাপালং ইউনিয়নের উত্তর পুরুরিয়া গ্রামের মুক্তি এনজিও সংস্থায় কাজ করার কথা বলে প্রায় ২০ দিন ধরে ক্যাম্পে ঘুরাঘুরি করে আসছিল আসমা ইয়াছমিন নামের এক তরুণী। গত ১২ ডিসেম্বর হাকিমপাড়া এ ব্লকের বাসিন্দা করিম উল্লাহর মেয়ে ৮ বছরের শিশুকে নিয়ে যাওয়ার সময় টিএন্ডটি চেকপোষ্টে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নজরে পড়ে। জিজ্ঞাসাবাদে এনজিও কর্মী আসমা ইয়াছমিন ওই শিশুকে তার ভাতিজি বলে পরিচয় দিলেও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার চাপের মুখে আসল তথ্য বেরিয়ে আসে।
পরে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা তাকে উখিয়া পুলিশের হাতে সোপর্দ করে এবং উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গা শিশু কন্যাকে তার মা সানজিদার হাতে তুলে দেয়।
আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিতে আসমা ইয়াছমিন নামের ওই তরুণী জানায়, ১৯ নভেম্বর থেকে মুক্তি নামের এনজিওতে সে সেবিকার পদে চাকরি করে আসছিল।
এনজিও মুক্তির নির্বাহী পরিচালক বিমল দে বলেন, হাকিমপাড়া ক্যাম্পে আসমা ইয়াছমিন নামের তাদের কোনো কর্মী নেই।
আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা জানায়, গত ১৩ ডিসেম্বর ঈদগাঁও এলাকার কালো মিয়ার ছেলে আব্দু রশিদ (২৫) দুই রোহিঙ্গা যুবতীকে শালিকা পরিচয় দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় চেকপোষ্টে কর্তব্যরত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা হাতেনাতে আটক করে দুই নারীকে ক্যাম্পে ফেরত পাঠায় এবং দালাল আব্দু রশিদকে উখিয়া পুলিশের নিকট সোপর্দ করা হয়।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল খায়ের জানান, মানবপাচার প্রতিরোধে কুতুপালং, মরিচ্যা বাজার ও মেরিন ড্রাইভ পয়েন্টেসহ ৩টি চেকপোষ্টে ২৪ ঘন্টা যানবাহন তল্লাশি চালানো হচ্ছে। যাতে কোনো রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে অন্যত্র বা পাচারকারীদের খপ্পরে অনিশ্চিত গন্তব্যে পা বাড়াতে না পারে।
আর্ন্তজাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ন্যাশনাল কমিউনিকেশন কর্মকর্তা শিরীন আক্তার বলেন, এ পর্যন্ত কতজন রোহিঙ্গা পাচার হয়েছে তা জানা নেই। তবে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের আইওএম দেখভাল করছে।
টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাঈন উদ্দিন জানিয়েছেন, গত বুধবার গভীর রাতে টেকনাফ বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ কাঞ্চন দাশের নেতৃত্বে একদল পুলিশ বটডেইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে মালয়েশিয়া পাচারের জন্য অপেক্ষমান দুই রোহিঙ্গাসহ ছয়জন মালয়েশিয়াগামী যাত্রীসহ এক পাচারকারীকে আটক করে।
তিনি জানান, আটককৃত দুই রোহিঙ্গাকে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং পাচারকারীর বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ