স্পোর্টস ডেস্ক:
এই তো মাস কয়েক আগের কথা। ইংল্যান্ডের বিশ্বখ্যাত ফুটবল সাময়িকী ফোর ফোর টু পারফরম্যান্স গবেষণা করে ঘোষণা দিয়েছে, ডিয়েগো ম্যারাডোনাই সর্বকালের সেরা ফুটবলার। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি নিজেও নিজেকেই ‘সর্বকালের সেরা’ বলে দাবি করেন। তাই ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর নিজেকে ‘ইতিহাসের সেরা’ বলে দাবি অন্যরা হজম করলেও ম্যারাডোনা চুপ থাকতে পারেন না! আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর চুপ থাকলেনও না। ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে জবাবটা দিয়ে দিলেন দ্রুতই।
তারপরও অবশ্য রোনালদোর ভাগ্যটা ভালোই বলতে হবে। কারণ, কারো সমালোচনা করায় চাচাছোলা ভাষা ব্যবহার করাই ম্যারাডোনার চিরকালীন অভ্যাস। কিন্তু রোনালদোকে জবাব দিলেন খুবই ভদ্র ভাষায়। স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক এএসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শুধু বলেছেন, ‘ক্রিস্তিয়ানোকে বলবেন, সে যেন এমন আজেবাজে বা আহাম্মকি কথা বলা বন্ধ করে।’
গত ৭ ডিসেম্বর পঞ্চম বারের মতো ব্যালন ডি’অর জেতেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। যে পুরস্কারটির মধ্যদিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগিজ তারকা ছুঁয়ে ফেলেছেন লিওনেল মেসিকে। পুরস্কারটি পাওয়ার পর সেদিনই ফ্রান্স ফুটবল সাময়িকীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজেকেই সর্বকালের সেরা দাবি করেন রোনালদো। ৩২ বছর বয়সী রোনালদো স্পষ্টই বলেন, ‘আমিই ইতিহাসের সেরা ফুটবলার। আমার চেয়ে ভালো আর কেউ খেলে না।’
তার এই ঘোষণার জবাব হিসেবে ক্লাব বার্সেলোনা ‘সর্বকালের সেরা’ ঘোষণা দিয়েছে লিওনেল মেসিকে। তবে ব্যক্তিগতভাবে রোনালদোকে প্রথম জবাবটা দিলেন ৫৭ বছর বয়সী ম্যারাডোনাই। মেসি-রোনালদো দুজনেই সমান ৫টি করে ব্যালন ডি’অর জিতেছেন। ইতিহাসের আর কোনো ফুটবলার এতো বেশি বার ব্যালন ডি’অর জিততে পারেননি। কিন্তু ম্যারাডোনা সরাসরিই দাবি করলেন, ‘সুযোগ থাকলে আমি মেসি-রোনালদোর চেয়ে বেশি ব্যালন ডি’অর জিততে পারতাম।’
সেই ১৯৫৬ সাল থেকে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিগত এই পুরস্কারটি দিয়ে আসছে ফ্রান্সের ফুটবল সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’। কিন্তু ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত পুরস্কারটা শুধু ইউরোপিয়ান ফুটবলারদেরই দেওয়া হতো। অন্য মহাদেশের ফুটবলাররা বিবেচিত হতেন না।
১৯৯৬ সাল থেকে পুরস্কারটি সর্বজনীন হলেও ম্যারাডোনা তখন ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলার যাত্রী। ১৯৯৭ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলে দেওয়া ম্যারাডোনা তাই একবারের জন্যও পুরস্কারটি হাতে তুলতে পারেননি। তাই আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন, ব্যালন ডি’অর জয়ের সংখ্যার বিচারেই কেউ সর্বকালের সেরা হতে পারে না।
তাহলে সর্বকালের সেরা? এবার অবশ্য নিজের নামটা উচ্চারণ করেননি আর্জেন্টিনার ১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক। নির্দিষ্ট করে বলেননি একক কোনো নামও, ‘আমি যতটুকু দেখেছি, তাতে আমার কাছে মনে হয়, আলফ্রেডো ডি স্টেফানো, ক্রুইফ এবং মেসি। হ্যাঁ, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর নামও সেই তালিকায় থাকতে পারে।’
যে পুরস্কারটি ৫ বার পেয়েছেন বলেই রোনালদো নিজেকে ‘সর্বকালের সেরা’ ঘোষণা করলেন, সেই ব্যালন ডি’অর ম্যারাডোনার কাছে একটা বিরক্তিকর ব্যাপারও! না, নিজের জেতার সুযোগ ছিল না বলে নয়। ২০০৮ সাল থেকে পুরস্কারটি মেসি-রোনালদোই ভাগাভাগি করে জিতছেন, অন্য কেউ জিততে পারছেন না। ম্যারাডোনার কাছে দ্বিমুখী এই দ্বৈরথটাই বিরক্তিকর মনে হচ্ছে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ