২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৭:৩৬

আবার বেড়েছে চালের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চালের দাম আবারও বেড়েছে। বছরের শুরুতে চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ৪০ টাকা, মে মাসে তা ৫০ টাকায় উঠল। সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে নভেম্বরে তা কমে ৪২ টাকায় নেমে এসেছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহে দাম কেজিতে আবার দুই থেকে তিন টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ টাকায়। ঢাকার মিরপুরের কাজীপাড়া, ছয় নম্বর বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে সবচেয়ে নিম্নমানের মোটা চাল ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া বাজারে মোটা চালের সরবরাহ কমে গেছে, বাড়ছে চিকন ও মাঝারি মানের চালের জোগান। বেশির ভাগ দোকানে ৫০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরের চাল বেশি বিক্রি হতে দেখা গেছে। চালের দর বাড়লে বিপাকে পড়ে সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষ। সরকারি ও বেসরকারি মজুত এবং কৃষকের গোলা মিলিয়ে বর্তমানে দেশে কমপক্ষে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টন চাল রয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে সরকারি গুদামে বর্তমানে মজুত ৪ লাখ ৬০ হাজার টন এবং বেসরকারি খাতে আমদানি হয়েছে ১৪ লাখ টন। আর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে গত নভেম্বরে দেশে ৭০ লাখ টন চালের সামগ্রিক মজুত ছিল। প্রতি মাসে দেশে চালের ভোগ বা খাওয়ার পরিমাণ ২২ লাখ টন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, এবারের মৌসুমে আমনের লক্ষ্যমাত্রা দেড় কোটি টন। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ কাটা হয়েছে। অর্থাৎ আমন থেকে ইতিমধ্যে ৪৫ লাখ টন চাল কৃষকের গোলা ও ব্যবসায়ীদের গুদামে ঢুকেছে। এখান থেকে সরকার মাত্র তিন লাখ টন সংগ্রহ করতে পাঁচ হাজার চালকলমালিকের সঙ্গে চুক্তি করেছে। আগের মজুত, আমনের চাল ও আমদানি মিলিয়ে হিসাব করলে দেশে চালের কোনো সংকট থাকার কথা নয় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা। চালের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা চালের দাম নিয়ে যা ইচ্ছা তা-ই লিখেন। আমি এটা নিয়ে কোনো কথা বলব না। এগুলো নিয়ে আমার কিছু বলার নাই।’
এদিকে বাজারে চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা ধানের দাম বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন। তাঁরা বলছেন, সরকার আমন চালে সংগ্রহমূল্য প্রতি কেজি ৩৯ টাকা নির্ধারণ করার পর থেকে বাজারে ধানের দাম বেড়ে যায়। দেশে ধানের প্রধান পাইকারি বাজার নওগাঁ, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া ও ঠাকুরগাঁওয়ে গত এক সপ্তাহে প্রতি মণ ধানের দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়ে গেছে। এতে আমনচাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। দেশের চালকলমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ রাইস অটো, মেজর, হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম লায়েক আলী এ নিয়ে বলেন, বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় তা ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতিকর। কারণ, বেশি দাম দিয়ে ধান কেনায় লাভ কম হচ্ছে। ধানের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে চালের দাম আরও বাড়তে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী বোরোর আগে চালের দাম খুব একটা কমার সম্ভাবনা নেই।
অর্থনীতিবিদ ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলে নানা অছিলায় দাম বাড়াবেন আর সহজে কমাতে চাইবেন না। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে চালের দাম নিয়ে আলোচনা উঠলে সরকারি সংস্থাগুলো বিভিন্ন চালকলে অভিযান চালিয়ে তাদের কার্যক্রম দেখায়। এতে উল্টো বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। এসব না করে সরকারের উচিত, নিয়মিতভাবে বাজার তদারক করা। আর চালের দাম ৪০ টাকার মধ্যে না আসা পর্যন্ত ওএমএস চালু রাখা। নয়তো গরিব মানুষের জন্য বিপদ বাড়বে। দেশের দুই কোটি হতদরিদ্র মানুষের জন্য ৪৫ টাকা কেজি দরে মোটা চাল কিনে খাওয়া কষ্টকর। তাই চালের দাম ৪০ টাকার ওপরে উঠলেই সরকারি বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে কম দামে চাল বিক্রি বাড়িয়ে দেওয়া হয়। দাম বেড়ে যাওয়ার পর গত সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে ওএমএসে চাল বিক্রি শুরুও করেছিল। কিন্তু সেখানেও দেখা গেল আরেক বিপত্তি। বেশির ভাগ ডিলারের দোকানে আতপ চাল দেওয়ায় সাড়া পাওয়া গেল না। ডিলার ও ক্রেতা দুই পক্ষ থেকেই দাবি ছিল সেদ্ধ চাল দেওয়ার। কিন্তু ওই দাবি পূরণ না করেই ওএমএস বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। ১৫ ডিসেম্বর থেকে ওএমএস আর থাকবে না।
খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সরবরাহ-বিপণন ও বণ্টন) নুরুল ইসলাম বলেন, সারা দেশে ২ হাজার ১০৫ জন ডিলারকে এক টন করে আতপ চাল বিক্রির জন্য নির্ধারিত ছিল। চাহিদা না থাকায় এর ৩০ শতাংশই বিক্রি হচ্ছে না। তবে আগামী মার্চে আবার ওএমএস চালু করা হবে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক নাজনীন আহমেদ এ ব্যাপারে বলেন, ‘বেসরকারি চালের মজুত যতই থাকুক না কেন, চালের দাম একবার বেড়ে গেলে ব্যবসায়ীরা আর খুব বেশি কমাতে চান না। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে নিজের মজুত বাড়িয়ে খোলা বাজারে চাল বিক্রি কার্যক্রম বাড়ানো, যা আমরা খুব বেশি দেখতে পাচ্ছি না। আর আতপ চাল খেতে যতই ভালো হোক, তা মানুষের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে মেলে না। ফলে মানুষ তা কিনছে না। গরিব মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য অবশ্যই ওএমএস ও অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে চালের সরবরাহ বাড়ানো উচিত।’

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭ ২:০৩ অপরাহ্ণ