নিজস্ব প্রতিবেদক:
পটুয়াখালীর ভুয়া চিকিৎসক অঞ্জুন চক্রবর্তী ওরফে রাজন দাসকে পুলিশে দিয়েছে হাইকোর্ট। সন্তান প্রসবের অস্ত্রোপচারের সাড়ে তিন মাস পর প্রসূতি মা মাকসুদা বেগমের পেট থেকে গজ বের করার ঘটনায় ওই ডাক্তার, ক্লিনিকের মালিক, নার্স ও মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্টের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়ে আদালত এই আদেশ দেয়। ভুয়া ডাক্তার অঞ্জন চক্রবর্তীর আত্মসমর্পণের পর সোমবার দুপুরে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে ভুয়া ডাক্তারকে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের করা মামলায় শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়ারও নির্দেশ দেয় আদালত। আদালতে এ সময় উপস্থিত ছিলেন নিরাময় ক্লিনিকের মালিক আনিসুর রহমান, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট মিশু সিকদার।
পটুয়াখালীর সিভিল সার্জনের দেয়া প্রতিবেদনে ওই ডাক্তারের লাইসেন্স ভুয়া প্রমাণিত হওয়ার পর গত ৬ নভেম্বর ওই ডাক্তারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে হাইকোর্ট। একটি জাতীয় দৈনিকে গত ২২ জুলাই ‘সাড়ে তিন মাস পর পেট থেকে বের হল গজ!’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরদিন ২৩ জুলাই প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শহিদ উল্লা। প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ও বরিশাল মেডিক্যালের গাইনি বিভাগের প্রধানসহ তিনজনকে তলব করেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া পটুয়াখালীর বাউফলের নিরাময় ক্লিনিকের মালিককে হাজির হতে বলা হয়।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অস্ত্রোপচারের সাড়ে তিন মাস পর বরিশালে মাকসুদা বেগম (২৫) নামের এক নারীর পেট থেকে গজ বের করা হয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় ওই নারীকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেন, দীর্ঘদিন পেটের ভেতর গজ থাকায় খাদ্যনালীতে অনেকগুলো ছিদ্র হয়ে গেছে। মাকসুদা বেগমের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। মাকসুদা পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বিলবিলাস গ্রামের মো. রাসেল সরদারের স্ত্রী। গত মার্চে অস্ত্রোপচার করে মাকসুদা একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। তখন তার পেটে গজ রেখে সেলাই করে দেন চিকিৎসক।’
মাকসুদার মা রোকেয়া বেগম বলেন, ‘গত মার্চে সন্তান প্রসবের জন্য মাকসুদাকে বাউফলের নিরাময় ক্লিনিকে নেয়া হয়। অস্ত্রোপচার করে মাকসুদার একটি মেয়ে হয়। কয়েক দিন ক্লিনিকে থাকার পর তারা বাড়ি ফেরেন। এক মাস পর মাকসুদা পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করায় আবারো ওই ক্লিনিকে যান। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওষুধ দিয়ে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করেন। দুই মাস পর খিঁচুনি দিয়ে জ্বর ওঠে। তখন খাওয়া-দাওয়াও বন্ধ হয়ে যায়। গত জুনে বরিশাল মেডিক্যালের বহির্বিভাগে দেখানো হয়। তখন আলট্রা-সনোগ্রাফিতেও কিছু ধরা পড়ে না। এরপর পটুয়াখালীতে এক চিকিৎসককে দেখানোর পর তিনি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। ১২ জুলাই হাসপাতালে মাকসুদার অস্ত্রোপচার হয়। তখন তার পেটের ভেতর থেকে গজ বের করা হয়।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ