নিজস্ব প্রতিবেদক:
চলতি বছরের নয়মাসে ৭৫৪ শিশু নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ৩৩০ জনকে। গড়ে প্রতিমাসে ৩৬জন শিশু হত্যার শিকার হয়। আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিশু নির্যাতনের এমন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন মতে, উক্ত সময় ৩৬ শিশু বিভিন্ন নির্যাতনের ফলে আত্মহত্যা করেছে। বিজ্ঞজন বলছেন, প্রতিবছরই উদ্বেগজনকভাবে নানা মাত্রায় বাড়ছে শিশু বিপর্যয়ের ঘটনা।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমসহ নানা বিষয়ে শিশুর মৌলিক অধিকার পূরণ না হওয়ার চিত্র দেখা যায়। বেসরকারি সংস্থা শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যমতে, ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১০৮৫ শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ২০১২ সালে ২০৯ জন, ২০১৩ সালে ২১৮, ২০১৪ সালে ৩৬৬ জন এবং ২০১৫ সালে ২৯২ জন। ২০১৫ সালে সহিংসতা ও নির্যাতনের মোট ঘটনা ছিল ৫ হাজার ২১২টি। ২০১৬ সালে ৩ হাজার ৫৮৯টি। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে শিশু নির্যাতনের ঘটনা কমলেও চলতি বছর তা বাড়বে বলে মনে করছে সংস্থাটি। যারা সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে তাদের মধ্যে ১ হাজার ৪৪১ শিশু অপমৃত্যুর শিকার। এ ছাড়া যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে আরো ৬৮৬ শিশু। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আব্দুল্লাহ আল মামুন শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর স্থাপন, জাতীয় শিশু সুরক্ষার কাঠামো গঠন,জাতীয় শিশুশ্রম নিরসনে প্রথমিক পর্যায়ে শিশুর জন্য পৃথক বাজেট বরাদ্দ, পর্ণোগ্রাফিবিরোধী প্রণীত আইন বাস্তবায়ন করা এবং শিশু সুরক্ষা কর্মকাণ্ডে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ ও নির্দিষ্ট সম্পদ বরাদ্দের সুপারিশ করেন।
চাইল্ড রাইট এডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ মনে করে, দেশে দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচারের সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে বলে শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়। এটা সভ্য সমাজে চলতে পারে না। সেভ দ্যা চিলড্রেনের শিশু প্রতিনিধি শামসুল আলম বকুল বলেন, শিশুদের উপর নৃশংস ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। অপরাধীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে পার পেয়ে যাচ্ছে বলে, এই ঘটনাগুলো বেড়ে চলেছে। রাজনের ক্ষেত্রে পুলিশের উদাসীনতা কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা সভ্য সমাজে এমন ঘটনা ঘটতে পারে না। সংবিধানে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ আছে। তাই রাষ্ট্রকে চুপ থাকলে চলবে না। রাষ্ট্রকে দোষীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে তিনি সামাজিক আন্দোলন ও গণমাধ্যমের ব্যাপক সচেতনতার কথা উল্লেখ করেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেছেন, সরকার শিশু নির্যাতন বন্ধে আন্তরিক। নানা রকম পদক্ষেপও গ্রহণ করা হচ্ছে। শিশু নির্যাতন বন্ধের জন্য জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকার কথাও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে সম্পৃক্ত রেখে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারে না। শিশুশ্রম রোধে সরকারের পাশাপাশি বিত্তবান নাগরিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
দৈনিকদেশজনতা/ আই সি