আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর স্বীকৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইনের ভয়াবহ লঙ্ঘন করেছে বলে মন্তব্য করেছে আরব লীগ। শনিবার আরব লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা মিশরের রাজধানী কায়রোয় এ ইস্যুতে মিলিত হন। সেখান থেকে যৌথ বিবৃতিতে ট্রাম্পকে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করার আহ্বান জানান। তাদের এমন সিদ্ধান্তে পুরো অঞ্চলজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে রেজুলেশন নিতে আহ্বান জানানো হয়।
এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ওদিকে আগামী ১৩ই ডিসেম্বর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ইসলামিক দেশগুলোর সহযোগিতামূলক সংগঠন ওআইসির জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান। রয়টার্স লিখেছে, গত বুধবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের স্বীকৃতি দেন। আরব লীগ বলেছে, এর কোনো আইনগত বৈধতা নেই এবং এ সিদ্ধান্ত অকার্যকর। কায়রোতে অনুষ্ঠিত আরব লীগের বিশেষ ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সব সদস্য দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণায় দৃশ্যত পুরো জেরুজালেমকে ইসরাইলের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতির বিরুদ্ধে গিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তার এমন সিদ্ধান্তে বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এমন কি তার বাসভবন হোয়াইট হাউজের সামনে প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার নামাজ আদায় করেছেন কয়েক শত মুসলিম। জেরুজালেম মুসলিম, ইহুদি, খ্রিস্টানদের কাছে অতি পবিত্র একটি শহর। এটি ছিল ফিলিস্তিনিদের সীমানায়। কিন্তু তাদের কাছ থেকে পূর্ব জেরুজালেম সহ বড় অংশ কেড়ে নেয় ইসরাইল এবং তার পরই একে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করে। একটি দাবি ফিলিস্তিনিদেরও।
জেরুজালেম নিয়ে দু’দেশের মধ্যে দশকের পর দশক ধরে চলছে তীব্র উত্তেজনা। অনেক মানুষের প্রাণ গিয়েছে একে কেন্দ্র করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে। শেষ পর্যন্ত উভয় দেশের কাছে গ্রহণযোগ্য এমন একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে জোর দেয়া হয়। বলা হয়, ফিলিস্তিন ও ইসরাইল উভয়ের সঙ্গে সমঝোতামুলক আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা উচিত। কিন্তু সেই পথে যাননি ট্রাম্প। তিনি সরাসরি ইসরাইলের পক্ষ নিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে শনিবার রাতে কায়রোতে বৈঠকে বসেন আরব লীগের নেতারা। রাতভর বৈঠক শেষে স্থানীয় সময় রাত ৩টায় তারা একটি বিবৃতি দেন। এতে বলা হয়, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের কোনো আইনগত কার্যকারিতা নেই। এতে শুধুই উত্তেজনা বাড়াবে। ক্ষোভের আগুন উস্কে দেবে। এর ফলে পুরো অঞ্চল আরো সহিংসতা ও বিশৃংখলায় নিমজ্জিত হবে। ওই বৈঠকে উপস্থিত লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিব্রান বাসিল বলেছেন, তেল আবিব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ বিবেচনা করা উচিত আরব দেশগুলোর। এ জন্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে। তারপর রাজনৈতিক। তারপর অর্থনৈতিক এবং শেষ পর্যন্ত আর্থিক অবরোধ আরোপ করা যেতে পারে। তবে এ বিষয়ে তিনি আর বিস্তারিত কিছু বলেননি। তিনি এমনটা দাবি জানালেও আরব লীগের যৌথ বিবৃতিতে অবরোধের কোনো কথা বলা হয় নি।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ